• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মারবেও পুলিশ, মামলাও করবে পুলিশ!

  ক্যাম্পাস ডেস্ক

২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:০৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাংবাদিককে হয়রানি করা পুলিশ সদস্য (ছবি : সংগৃহীত)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও দৈনিক অধিকারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকে হয়রানি করেছে পুলিশ। হয়রানির পর তাকে গ্রেপ্তার ও মামলার হুমকিও দেওয়া হয়।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দোয়েল চত্বর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

ওই শিক্ষার্থীর নাম হাসান বিশ্বাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং দৈনিক অধিকারের ঢাবি প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানজট কমাতে ঢাবির দোয়েল চত্বর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর অংশ হিসেবে দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্টের দিকে রিকশা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পুলিশ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলে তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার অনুমতি দিয়েছেন দায়িত্বরত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নূরনবী।

বুধবার সন্ধ্যায় অসুস্থ বন্ধুকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন হাসান। এ সময় রাস্তায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য তাদের রিকশা আটকে দেন। এ সময় হাসান নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলেও আইডি কার্ড সঙ্গে না থাকায় দেখাতে পারেননি। এর পরিবর্তে সাংবাদিকের আইডি কার্ড দেখান। কিন্তু তারপরেও রিকশা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এর কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সদস্য ওই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমি আপনার টাকায় খাই না। তাই আপনার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি রাজি নই।’

এরপর প্রতিনিধি সেখানে অপেক্ষা করতে থাকেন। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষমতা দেখিয়ে অন্য সব রিকশা ছেড়ে দিয়ে ওই প্রতিনিধি ও তার বন্ধুর রিকশা আটকে রাখেন। ৫ মিনিট আটকে থাকায় প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে ফোন করেন। তবে ওই সময় প্রক্টর কল রিসিভ করেননি। দায়িত্বরত পুলিশকে বারবার অনুরোধের পরেও রিকশাটিকে যেতে দেওয়া হয়নি।

একপর্যায়ে ভুক্তভোগী প্রতিনিধি দায়িত্বরত পুলিশের ছবি তুলতে গেলে ওই পুলিশ সদস্য বাধা দেন এবং শিক্ষার্থীর শার্ট ধরে ধাক্কা দেন। এতে প্রতিনিধির জামা ছিঁড়ে যায়। এ ব্যাপারে প্রতিনিধি প্রক্টরের কাছে বিচার দেওয়ার কথা বললে তাৎক্ষণিকভাবে ওই পুলিশ সদস্য তার সহকর্মীদের ঘটনাস্থলে এসে ওই প্রতিনিধিকে গ্রেপ্তার করার জন্য বলেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদারকে ফোন করে বিষয়টি জানান হাসান।

পরে আসিফ তালুকদার দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ওই প্রতিনিধিকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ জানান এবং পুলিশের পরিচয় জানতে তাকে নির্দেশ দেন। প্রতিনিধি পুনরায় ওই পুলিশ সদস্যের পরিচয় জানতে চাইলে পুলিশ তাকে হুমকি দেয় এবং সাহস থাকলে হাইকোর্টের সামনে যেতে বলে। এ সময় ওই প্রতিনিধি পুনরায় গন্তব্যের দিকে রওনা করলে পেছন থেকে ওই পুলিশ সদস্য দৌড়ে এসে আবারও রিকশা আটকে দেন।

এ অবস্থায় রিকশায় থাকা অসুস্থ শিক্ষার্থী ভয়ে কান্না করলে দায়িত্বরত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নূরনবী ঘটনাস্থলে পৌঁছে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে অন্য রিকশায় তুলে দেন এবং তার নির্দেশে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য ভুক্তভোগী প্রতিনিধিকে আটক করে নিকটবর্তী পুলিশ বক্সে নিয়ে যান।

এ সময় পুলিশ সদস্যরা ঢাবি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করলে ওই প্রতিনিধি এর প্রতিবাদ করেন। তখন উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং এক বয়স্ক পুলিশ সদস্য আক্রমণাত্মক আচরণ করেন।

খবর পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় ঘটনাস্থলে আসেন ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ঘটনাস্থলে না আসতে পারলেও সদস্যদের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেন ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী।

এছাড়া ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও অনুরোধ জানান ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, রাকিবুল হাসান ঐতিহ্য এবং বিজয় একাত্তর হল সংসদের সহসভাপতি সজিবুর রহমান সজিব। এছাড়া ঘটনার কথা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত হন।

এ সময় ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার দায়িত্বরত পুলিশ (এসি) নূরনবীর উপস্থিতিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য শাহ-আলমের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। ততক্ষণে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে ওই প্রতিনিধির ওপর বানোয়াটে অভিযোগ আনেন এবং পুলিশের গায়ে হাত তোলার অপরাধে ওই শিক্ষার্থীকে আটকের হুমকি দেন।

কিন্তু এসি নূরনবী পুলিশ সদস্যের এমন ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীকালে এমন ঘটনা ঘটবে না বলে আশ্বাস দেন।

তবে বিচার না পেয়ে ভুক্তভোগী প্রতিনিধি দুঃখ প্রকাশ করলে এসি বলেন, ‘যেহেতু আপনি পুলিশের গায়ে হাত তুলেছেন, তাই আইনের আওতায় আনলে আপনাকে (প্রতিনিধি) কারাগারে পাঠানো হবে। তখন আপনার আরও বেশি সমস্যা হবে।’

এ সময় ওই প্রতিনিধি বলেন, ‘আমি এমন কোনো কাজ করিনি। তবে পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যেন আপনাদের দ্বারা হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য লিখিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বরাবর চিঠি পাঠাতে হবে।’

কিন্তু শিক্ষার্থীর এমন অনুরোধ গ্রহণ করেনি পুলিশ। পরে ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদারের নির্দেশে পুলিশ সদস্য শাহ-আলমের সঙ্গে হাত মেলান ভুক্তভোগী প্রতিনিধি হাসান। কিছুদিন আগেও এমনি এক অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে আসিফ তালুকদার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত। আগামীতে যেন আর এমন কোনো ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়, সেদিকে আপনারা সতর্ক থাকবেন।’

আরও পড়ুন : নির্যাতনকারীদের স্থায়ী বহিষ্কার চান শিক্ষার্থীরা

এ সময় (এসি) নূরনবী বলেন, ‘এখন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী পরিচয় দিলে আর কোনো পুলিশ সদস্য রিকশা আটকাবে না। আর যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই নির্দেশ আমি দিয়ে দেব।’

ভুক্তভোগী ওই প্রতিনিধি বলেন, ‘আসিফ তালুকদার না আসলে হয়তো আজ আরও নোংরা কিছু ঘটতে পারতো। একজন শিক্ষার্থীর জন্য এভাবে ছুটে আসায় ডাকসুকে ধন্যবাদ জানাই।’

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড