• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এই আক্ষেপ গুছবে কি কুবিয়ানদের?

  কুবি প্রতিনিধি:

০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৫০
কুবি

একটা সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষার্থীদের প্রধান আক্ষেপ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক নিয়ে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দেড় দশক পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় তুলে ধরার মতো কোনো মূল ফটক ছিলো না। ১৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০২২ সালে অনন্য নির্মাণ কৌশলে দৃশ্যমান হয়েছিলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বহুল প্রতীক্ষিত মূল ফটকটি। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনের অযত্নে অবহেলায় মলিন হচ্ছে এর সৌন্দর্য। ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু। জানা যায় প্রায় দুই বছর কেটে গেলেও অজানা কারণে উদ্বোধন হয়নি শিক্ষার্থীদের শত আবেগের এই ফটক।

২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশাল এই নান্দনিক ফটকে কুমিল্লার বিজয়পুরের ঐতিহ্য পোড়ামাটির ফলকে ফুটিয়ে তোলা হয় বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ও বাংলাদেশ সৃষ্টি প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। পোড়ামাটির ফলকের নান্দনিক চরিত্রের সংমিশ্রণের পাশাপাশি ফটকটির দুই পাশে রয়েছে বিশেষভাবে পানি ধারণের ব্যবস্থা। প্রধান আকর্ষণ হিসেবে ফটকটির মধ্যাংশে সুউচ্চ মহিমায় দাড়িয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ওয়াচ টাওয়ার।ওয়াচ টাওয়ারের সামনেই রয়েছে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য জায়গা।

এছাড়াও রয়েছে বিশেষভাবে বাঁকানো ছয়টি স্তম্ভ, গাড়ি চলাচলের রাস্তা, পথচারী চলাচলের রাস্তা। সম্মুখভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর পাশাপাশি সিরামিক খচিত বঙ্গবন্ধুর নাম ও ছবি শোভা পেয়েছে। টাওয়ারটির দুইপাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালায় খোঁদাই করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাকানো স্তম্ভে আনসার সদস্যদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশ্রামাগার ও শৌচাগার।

কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে, চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দন ফটকটি অবহেলা দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এছাড়াও নিয়মিত হচ্ছে না এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্যান্য স্থানগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হলেও মূল ফটক পরিষ্কার করা হয় না বহুদিন। যার কারনে প্রায় সময় ফটকের আশেপাশে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে।

ফটকটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো এর দুই পাশে নির্মিত পানি ধারনের স্থানটি। আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকার কারনে সন্ধ্যায় ফটকের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এই স্থানটি সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। এখানে নিয়মিত পানির ব্যবস্থা ও পূর্বের পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা করা হয় না। এমনকি ফটকটি সর্বশেষ কবে পরিষ্কার করা হয়েছে তা জানা নেই। ফলে দীর্ঘদিন আবর্জনা জমে আশেপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

এছাড়াও পোড়ামাটির ফলক সহ আশেপাশের টাইলসগুলোতে জন্মাচ্ছে শ্যাওলা। এমনকি একমাত্র শৌচাগারটির অবস্থা আরো নাজেহাল। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন শৌচাগারটির কারণে ঘুরতে আসা বিভিন্ন পর্যটকদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।

একজন শিক্ষার্থী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমার জানা নেই প্রশাসন গত ২ মাসের মধ্যে গেইটের দুই পাশে পানি ধারনের জায়গাটি পরিষ্কার করেছে কিনা। আমাদের এখন পরিচয় দেওয়ার মতো অনন্য সুন্দর একটি ফটক আছে। কিন্তু এভাবে অপরিষ্কার পড়ে থাকলে এটি দিন দিন এর সৌন্দর্য হারাবে। প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করবো নিয়মিত জায়গা গুলো পরিষ্কার করুন এবং এর পূর্বের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনুন।

আবর্জনা ও পানি জমে থাকার ক্ষতিকর দিক নিয়ে ডেপুটি চিপ মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, মূলত ময়লা ও জমে থাকা পানি থেকে মশা-মাছি জন্মায়। যা আশেপাশের খাবারের দোকানে গিয়ে জীবাণু ছড়ায়। আর এর থেকে হতে পারে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রকম সংক্রামক রোগ। এমনকি ডেঙ্গু ও টাইফয়েড জ্বর হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

বিষয়ে এস্টেট শাখার ডেপুটি-রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান জানান, প্রথমত আমাদের লোকবল কম। যার কারণে প্রতিটি সাইটের জন্য আলাদা পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেওয়া আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। সুতরাং নিয়মিত পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরেও কিছুদিন পরপর জায়গাটি পরিচ্ছন্ন কর্মী দিয়ে আমরা পরিষ্কার করি। দ্বিতীয়ত, যেই ময়লাগুলো ওখানে জমে তা মূলত শিক্ষার্থীদের কারণেই হয়। গেইটের ভিতরেই ডাস্টবিন দেওয়া আছে। কিন্তু তারা সেখানে ময়লা না ফেলে যত্রতত্র ময়লা ফেলে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সচেতন শুধু গেইট নয় সম্পুর্ণ ক্যাম্পাস পরিষ্কার থাকবে।

নিয়মিত পানি দেওয়া এবং পরিবর্তন করার ব্যাপারে তিনি বলেন, মূলত ডেঙ্গু প্রকোপের কারণে উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশক্রমে সেখানে পানির ব্যবস্থা বন্ধ আছে। কিছুদিন পর থেকে আবার তা চালু করা হবে।

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের আরো আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে, নির্মাণের ২ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত ফটকটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয়নি। প্রশাসনিক সুত্রে জানা যায় পূর্ববর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর ফটকটি উদ্ভোদন করার কথা থাকলেও তিনি তা উদ্বোধন করতে পারেন নি। তার পরে প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও উদ্বোধন করা হয়নি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মূল ফটকটি।

এ বিষয় সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জি. এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, ফটক নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে এটি উদ্বোধন করা হয় নি। তবে কবে নাগাদ উদ্বোধন হবে তা আমি বলতে পারবো না।

দীর্ঘ ২ বছর পার হওয়ার পরেও কেন উদ্বোধন হয় নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তা রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য মহোদয় ভালো বলতে পারবেন।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড