• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিয়ে হয়েছে বালিকার : বাবার পরিচয় পেল শিশু মরিয়ম 

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:২০
শিশু মরিয়ম
আখির কোলে শিশু মরিয়ম, স্বামী সহিদ মিয়া (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আখি আক্তার, তারই কোলে ঘুমিয়ে আছে সদ্যজাত ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। এ যেন কাজী হায়াতের সিনেমার চরিত্র ‘অপূর্ব’। দুইদিন আগেও শিশু মরিয়মের বাবার পরিচয় ছিল না।

সোমবার ১০ ডিসেম্বর কামরাঙ্গীর চর, (আবু সাইদের বাজার) ভাই ভাই সুপার মার্কেট ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে বালিকা আখি আক্তারের(২২) বিয়ে হয়।

কাউন্সিলর নুরে আলমসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়। বর মো. সহিদ মিয়া ৫ লাখ টাকা (বিনা উসুল) দেনমোহর দিয়ে আখি আক্তারকে বিয়ে করেন।

ফলে তাদের সন্তান মরিয়ম জন্মের ১২ দিন পর বাবা মায়ের পরিচয়সহ সামাজিক স্বীকৃতি পেল। ২৯ নভেম্বর ডিএমসিতে জন্ম নেয় শিশুটি।

তবে শিশুটির লালন পালন নিয়ে এখনও শঙ্কা কাটছে না প্রতিবেশী ও মরিয়মের নানা নানির।

এলাকাবাসী জানান, ‘শিশুটির মা মানসিক প্রতিবন্ধী। এ অবস্থায় শিশুটিকে লালন পালনের জন্য একজন অভিভাবক দরকার। তাছাড়া নবজাতক খুবই অসুস্থ। ঠিকমতো শিশুটিকে লালন-পালনের জন্য খরচ দেয়া না হলে ওই পরিবারের জন্য কষ্টসাধ্য হবে। তাই শিশুটিকে লালন-পালনের জন্য বাবা সহিদ মিয়া নিয়মিত খরচ দিতে হবে। তা না হলে শিশুটি সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে না।’ এলাকাবাসীর দাবি, বাবা সহিদ মিয়া যেন কোনো অবহেলা না করেন, তাছাড়া নিয়মিত খরচ দেন তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কামরাঙ্গীর চর, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড, মোহাম্মদ নগর এলাকায় বাদশামিয়া স্কুলের পূর্বপাশে হোসেনের বাড়িতে ৬ মাস ধরে ভাড়া থাকে আখি আক্তার।

প্রতিবন্ধী আখি আক্তারের বয়স আনুমানিক ২২, বাবা- মো.সেলিম, মা- রহিমা, বাসায় কাজ করেন। তারই প্রতিবেশী বৃদ্ধ সহিদ মিয়ার (৬৫ আনুমানিক) বাড়িতে এর আগে প্রায় ১০ বছর ভাড়া থেকেছে।

সহিদ মিয়া আখি আক্তারকে প্রাই আদর করে কাছে টানত, নাতিন বলে ডাকত। গায়ে হাত দিত…।

একসময় মেয়েটি মা হতে যাচ্ছে প্রতিবেশীরা এমন ধারণা করলেও মেয়ের পরিবার ভেবেছে সে অসুস্থ। এরপর নভেম্বর মাসে মেয়েটি অসুস্থ হলে (পেটে ব্যথা) এলাকাবাসী মিলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা গেল মেয়েটির পেটে টিউমার নয়, রয়েছে মানব শিশু, ব্যথাটা আসলে প্রসবকালীন।

২৯ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্ম নেয় শিশুটি। সবাই মিলে নাম রাখেন, মরিয়ম। এরপর বেরিয়ে আসে, কথিত নানা সম্পর্কের পেছনে লুকিয়ে থাকা সহিদের লালসার কথা।

বৃদ্ধ সহিদ কোনোভাবেই রাজি হতে চায় না জন্ম নেয়া শিশুটির বাবা তিনি। অবশেষে কাউন্সিলর কার্যালয়ে তিনি স্বীকার করেছেন এবং বালিকাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন।

প্রতিবেশীরা জানান, প্রায়ই তারা দেখেছেন লোকটা (সহিদ মিয়া) মেয়েটাকে কাছে টেনে নিত, সব সময় নাতিন বলে ডাকত…

মেয়ের মা রহিমা বলেন, অনেক দিন ভাড়া ছিলাম আমার মেয়েকে উনি আদর করে ডাকত, মেয়ে মাঝে মাঝে তাদের বাসায় কাজ করে দিত, অনেক সময় সারা দিন ওই বাসায় থাকত। তারা আরও জানায়, সহিদ মিয়ার স্ত্রীও মাঝে মাঝে মেয়েটিকে ডেকে নিত। কাজ করাত।

এছাড়া অপর এক প্রতিবেশী জানান, তাদেরকে মাঝে মাঝে এমনভাবে দেখেছি যা দৃষ্টিকটু। বুড়ো হলেও তিনি পুরুষ, একটা মেয়েকে এভাবে গায়ে হাত দিতে পারেন না।

বৃদ্ধ সহিদ মিয়া দৈনিক অধিকারের প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘আমি কিছু করি নাই, খালি হাতাইছি’ আর…। এখন কি আর করার সবকিছু মাইনা লইছি, বিয়া করতে রাজি হয়ছি। ‘

সহিদের স্ত্রী জানান, মাইয়াডা আইসা আমার ঘরে শুইয়া থাকত, কইতো আমার খিদা লাগছে, কী করুম কাউরে কী বাইর কইরা দেওন যায়’।

এ বিষয়ে স্থানীয় ৫৫ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরে আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি উদ্বেজনক, দুঃখজনক, এলাকার জন্য লজ্জাজনক। মেয়েটি বুদ্ধি প্রতিবন্দী তার ঘরে জন্ম নিয়েছে শিশু, যার আবার বাবার পরিচয় পেতে লড়াই করতে হবে, আমারদের জন্য এটা লজ্জার। তবে শিশুটির যেন একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ হয় আমরা সেই চেষ্টা করব। তার আগে মা হওয়া মেয়েটির বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে পেরে আমাদের সবার ভালো লাগছে। তবে একটা অবৈধ সম্পর্কের বৈধতা দেয়া হলো মন্তব্য করেন তিনি।

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড