• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাতের ঢাকায় মিজানের ভাগ্য বরণ করে আরও তিনজন

  অধিকার ডেস্ক

২৬ জানুয়ারি ২০২০, ২৩:৫৮
নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মিজানুর
নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মিজানুর (ছবি : দৈনিক অধিকার)

গত ৬ জানুয়ারি রাতে একদল ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুর রহমান। ছিনতাইকারীরা তাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে খুন করে হাতিরঝিলের ফ্লাইওভারের ওপর লাশ ফেলে যায়।

ইতোমধ্যে মিজানুরের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়ছে। তারা হলো- নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ বাবু ও মো. জালাল।

আসামিরা গত শুক্রবার ও রবিবার (২৬ জানুয়ারি) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ৬ জানুয়ারি দিবাগত রাত ২টায় কাওরান বাজার রেলক্রসিঙের কাছে ফ্লাইওভারের ওপর এক যুবকের লাশ পড়ে ছিল। হাতিরঝিল থানার পুলিশ ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখে। পরে নিহত যুবকের নাম-পরিচয় সনাক্ত হয়। জানা যায়, তার নাম মিজানুর রহমান।

এ ঘটনায় মিজানুরের ছোট ভাই আরিফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রশীদ জানান, মিজানুরকে যারা খুন করেছে, তারা ভয়ঙ্কর সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। তিন আসামি আদালতের কাছে স্বীকার করেছে, মিজানুর রহমানকে খুন করার আগে তারা আরও তিনটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। খুন তিনটি সংগঠিত হয়েছে রাজধানীর ভাটারা ও খিলক্ষেত এলাকায়। সেই তিনটি খুনের রহস্য উদঘাটিত হয়নি।

মিজানুরের পরিচয় সনাক্ত মিজানুরের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের সবিলপুরে। তিনি ঢাকার এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি চাকরি করতেন বনানীর গোল্ডেন টিউলিপ ফোর স্টার হোটেলে।

মিজানুরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা আমির হোসেন গ্রামের বাড়িতে দোকানদারি করতেন। চাকরি করে মিজানুর নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশপাশি বাড়িতে পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতেন। থাকতেন শেওড়া এলাকার একটি মেসে।

মিজানুরের ভাই মামলার বাদী আরিফ হোসেন বলেন, তার ভাই মিজানকে যারা খুন করেন, তারা মুঠোফোন নিয়ে গিয়েছিলেন, রেখে গিয়েছিলেন তার মানিব্যাগ। সেই মানিব্যাগে ছিল ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, বিশ্ববিদ্যালয় ও হোটেলের পরিচয়পত্র। পরে পুলিশ তাদের লক্ষ্মীপুর থানায় ফোন দেয়। এরপর ইউনিয়নের এক চৌকিদারের মাধ্যমে ভাই মিজানুরের মৃত্যু সংবাদ পান। ঢাকায় এসে তিনি তার ভাইয়ের লাশের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

যেভাবে খুনের রহস্য উদঘাটন হাতিরঝিল থানার ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল আলম জানান, মিজানুর খুন হওয়ার সম্ভাব্য সবকটি কারণ সামনে রেখে তারা অনুসন্ধান শুরু করেন। তবে মিজানুরের মুঠোফোন খুনের রহস্য উদঘাটনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। সেই সূত্র ধরে নুরুল ইসলাম নামের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় মিজানুরের মোবাইল ফোন সংগ্রহকারী আবদুল্লাহ ও জালালকে।

যেভাবে খুন হন মিজানুর মিজানের ভাই আরিফ জানান, তার ভাই সেদিন বনানীর হোটেলে কাজে যোগ দেন বেলা ২টায়। রাত ১১টার সময় কাজ শেষে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন।

পুলিশ কর্মকর্তা খায়রুল বলেন, হোটেল থেকে কাজ শেষে নিজের বাসায় (শেওড়ায়) যাওয়ার জন্য বনানীর কাকলীতে অপেক্ষা করতে থাকেন। গভীর রাতে যানবাহন কমে যায়। তখন সিএনজিচালিত একটা অটোরিকশা সেখানে আসে। অটোরিকশার ভেতর দুজন যাত্রী বসা ছিল। তারা বলে, অটোরিকশা যাবে বিমানবন্দরে। তখন মিজান ওই অটোরিকশায় ওঠেন। চালক ছিলেন ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য নুরুল ইসলাম। অটোরিকশাটি যখন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে আসে, তখন যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্যের (নাজমুল ও শাহীন) একজন মিজানকে বলেন, বমি আসছে। মিজান যেন তাদের মাঝখানে বসেন। মিজান তখন মাঝখানে বসেন।

নাজমুল ও শাহীন তখন মিজানকে বলেন, যা আছে তা যেন দিয়ে দেন। কিন্তু মিজান দুই ছিনতাইকারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন। একপর্যায়ে দুই ছিনতাইকারী নাজমুল ও শাহীন মিজানের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মিজান হত্যায় গ্রেপ্তার তিন আসামি তাদের কাছে এবং আদালতের কাছে এসব কথা স্বীকার করেছেন।

আরও পড়ুন : মেধাবী ইমার সামনে বড় বাধা দারিদ্র্য

হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশীদ বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের এই সদস্যরা মিজানকে খুন করার আগে আরও তিনটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যাত্রী সেজে অটোরিকশায় থাকে। নিরীহ লোকদের ওই অটোরিকশায় ওঠানোর পর তাদের মালামাল লুট করে নেয়। বাধা দিলে তাদের কাছে থাকা গামছা কিংবা মাফলার দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে।’

ওডি/ এফইউ

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড