• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উকিল আর টাকার চক্রে দিশেহারা রাবেয়ার চিৎকার শোনে কে?

  মো. জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর

২৫ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:৪৭
শরীয়তপুর
মামলার বাদী রাবেয়া (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ধানের চারা তুলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে মারধর। এই নিয়ে আদালতে মামলা। মামলার চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার পায়নি অসহায় রাবেয়া।

মামলার বাদী রাবেয়া মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে উকিলের কাছে জানতে চাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করার অভিযোগ রয়েছে। ন্যায় বিচার না পেয়ে কোর্ট চত্বরে এসে দিশেহারা হয়ে ঘুরছে বিচার পাওয়ার আশায়।

২৫ জুলাই ২০১৫ সালের শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার নরসিংহপুর খালাসী কান্দি গ্রামে আনোয়ার হোসেন নান্টুর স্ত্রী রাবেয়া আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, রাবেয়ার চাচাতো ভাই হারুন রোপণকৃত ধানের চারা তুলে জমিতে রেখে বাড়িতে যায়। ঘণ্টাখানেক পর জমিতে এসে দেখে ধানের চারা নাই। পরবর্তীতে জানতে পারে একই গ্রামে হাছান আলী ধানের চারা নিয়ে গেছে। হাছান আলীর বাড়িতে রাবেয়ার চাচাতো ভাই ধানের চারা আনতে যায়। তখন হাছান আলী মিজি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এক পর্যায়ে হারুনকে ৫-৭ জন মিলে মারধর করে। তখন সাথে থাকা নগদ ১০ হাজার টাকাসহ একটি মোবাইল কেড়ে নেয় যার আনুমানিক মূল্য ১৮ হাজার টাকা। এছাড়াও রাবেয়া তার ভাইকে রক্ষা করতে গেলে আসামিরা তাকে মারধর করে আট আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন ও একটি সিম্ফোনি মোবাইল কেড়ে নেয়।

এলাকা সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনায় গ্রাম্য সালিশ হয়েছিল। চেয়ারম্যান মীমাংসার জন্য চেষ্টা করেছে। আসামি পক্ষ সালিশ না মানায় রাবেয়া বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এরপর আদালতে শুরু হয় ধনী গরিবের মামলার লড়াই। আসামি পক্ষ টাকার জোরে জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর বাদী পক্ষ চার বছর মামলা চালিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে এখনো ন্যায় বিচারের আশায় রয়েছে।

সোমবার (২১ অক্টোবর) ‘দৈনিক অধিকার’কে রাবেয়া এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের মামলাটি নিয়ে অ্যাডভোকেট মীর শাহাব উদ্দিন উজ্জ্বলের কাছে আসি। অ্যাডভোকেট উজ্জ্বল আজ জামিন শুনানি, কাল জামিন শুনানি বলে, আমার কাছে যখন যে টাকা চেয়েছে, আমি তাই দিয়েছি। প্রতিবার ২ হাজার ৩ হাজার ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আমার কাছ থেকে নিয়েছে। আমাকে বলে ১০ দিন ১২ দিন পর জামিন শুনানি। এই বলে আমাকে শরীয়তপুর আদালত পাড়া চেম্বারে আনিয়ে খরচাপাতি নেয়।

রাবেয়ার ভাষ্যমতে, জামিনের দিন অ্যাডভোকেট উজ্জ্বল তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চায়, আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করবে বলে। টাকা দেবার পর বাড়িতে গিয়ে রাবেয়া জানতে পারে আসামিরা বাড়িতে। পরের দিন বাদী রাবেয়া অ্যাডভোকেট উজ্জ্বলের কাছে গিয়ে আসামিদের জামিনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আসামিরা এত দিন জেল খাটে না কি। যা খাটছে এই তো বেশি।'

অ্যাডভোকেট উজ্জ্বল বাদীকে জানিয়ে দেয় সরকার এ মামলার বাদী হয়ে গেছে। অসহায় রাবেয়া এপিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল আউয়াল সাহেবের শরণাপন্ন হলে তিনি বলেন, 'ওদের জামিন আমি নামঞ্জুর করব। আমাকে তুমি পাঁচ হাজার টাকা দাও।'

ভুক্তভোগী রাবেয়া এবারও টাকা খরচা করে জামিন নামঞ্জুর করাতে পারে নাই। পরবর্তী তারিখে আবার অ্যাডভোকেট আউয়ালকে, আজকে তিন হাজার টাকা দেয়। আবারও তার টাকা ফলপ্রসূ হয়নি। এভাবে বিভিন্ন সময় টাকা দিতে থাকলেও কাজে আসেনি রাবেয়ার। উকিলের কথামতো সাক্ষী আনলেও কোনদিন নেয় আবার কোনদিন অ্যাডভোকেট আউয়াল বলে, 'আজকে সময় নাই। সাক্ষী নেবে না।'

রাবেয়া বলেন, আসামি পক্ষের আইনজীবীর বন্ধু নাকি জজ সাহেব, তারা একই ভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছেন। এ জন্য ওনারা সাক্ষী নিয়ে গেলে হাসাহাসি করে। কি বলে না বলে আমি বুঝি না। এভাবেই চলতে থাকে। আর আমি সাক্ষী আনলেও অ্যাডভোকেট আওয়াল সাহেব কোর্টে উঠে না। উল্টা জিজ্ঞাসা করলে মুখ খারাপ করে কথা বলে।

হতাশ রাবেয়া নিজেও জানে না সে এ বিচার পাবে কিনা।

এ বিষয়ে রাবেয়ার প্রথম আইনজীবী মীর শাহাব উদ্দিন উজ্জ্বল বলেন, 'আমার কাছে এই মামলার কোনো কাজ নাই। এটা এপিপির কাছে চলে গেছে।'

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল আউয়াল দৈনিক অধিকারকে বলেন, 'মামলাটা আমি ছেড়ে দিয়েছি। একটা মামলা নিয়ে তো আমরা কোর্টের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে পারব না। আমি বলেছি রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে মামলা চালাচ্ছি। তাকে মামলার বিষয়ে অনেক কিছু বলেছি। সে যদি সেটা না শুনে তা হলে তো কিছু করার নাই।'

সাক্ষী ও টাকা নেওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, 'ওরে (বাদী রাবেয়াকে) পিটিয়ে টান বানিয়ে ফেলব।'

ওডি/এমবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড