মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
নরসিংদীর কাঠালিয়া ইউনিয়নে ডাক্তারের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন ভুক্তভুগি পরিবার।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) বিকালে নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন কাঠালিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ প্রসব বেদনা অনুভব করেন প্রসূতি কুলসুম বেগম। সে রাতেই কাঠালিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার ফৌজিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু টেস্ট দেন এবং রিপোর্ট নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তার সাথে সাক্ষাৎ করা হলে সব ঠিক আছে বলে জানান ডাক্তার ফৌজিয়া। এরপর দুটি ইনজেকশন পুশ করে স্যালাইন লাগিয়ে বিশ্রামে থাকতে বলা হয়। দুপুরের পর তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য না করায় ডাক্তার ও তার সহকর্মীরা কুলসুম বেগমের পেটে চাপ প্রয়োগ করেন। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে নরমাল ডেলিভারির পরিবর্তে সিজার করাতে চান ওই প্রসূতি। কিন্তু ডাক্তাররা নরমালি চেষ্টা করতে থাকেন। বিরক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে অটো রিকশায় উঠে পড়লে তাকে জোরপূর্বক আবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তারা একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করান।
কুলসুম বেগম বলেন, ডাক্তার ফৌজিয়া ও তার সহকর্মীরা আমার পেটে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। সহ্য করতে না পেরে আমি চিৎকার শুরু করি এবং নরমাল ডেলিভারি না করিয়ে সিজার করানোর কথা জানাই। কিন্তু তারা আমার কথায় কর্ণপাত না করে পেটে চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায় জীবন বাঁচাতে জোরপূর্বক আমি সেখান থেকে বেরিয়ে অটো রিকশায় উঠে পড়ি। তারা জোরপূর্বক আমাকে আবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তারপর পেটে চাপ দিয়ে মৃত বাচ্চা প্রসব করান।
তিনি বলেন, এমন কসাই ডাক্তার দ্বারা ডেলিভারি করিয়ে কেউ যেন আমার মতো সন্তান হারা না হন। আমি কসাই ডাক্তার ফৌজিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
আরেক ভুক্তভোগী জয়দেব ভৌমিক জানান, দুই মাস আগে তার প্রসূতি স্ত্রীকে কাঠালিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে ডাক্তার ফৌজিয়া তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর দুটি ইনজেকশন পুশ করেন এবং বাড়িতে চলে যেতে বলেন। পুনরায় ব্যথা উঠলে নিয়ে আসতে বলা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ব্যথা না ওঠায় পুনরায় ডাক্তার ফৌজিয়ার শরণাপন্ন হন। এরপর ডাক্তার চাপ প্রয়োগ করে একটি ছেলে বাচ্চা প্রসব করান। কিন্তু বাচ্চাটি নড়াচড়া না করলে ডাক্তারকে জানাই, তাড়াতাড়ি অক্সিজেন প্রয়োজন বলে বাচ্চাটিকে নিয়ে আড়াইহাজার যেতে বলেন। দ্রুত আড়াই হাজার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিশুটি এক ঘণ্টা আগেই মারা গিয়েছে বলে জানান সেখানকার ডাক্তার।
তিনি বলেন, ডাক্তার ফৌজিয়া আমার স্ত্রীর জরায়ুর ভেতরে ফুল রেখেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে অন্য হাসপাতালে গিয়ে ওই ফুল পরিষ্কার করতে হয়েছে। এতে আমার প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে। আমার স্ত্রী এখনো পরিপূর্ণ সুস্থ হতে পারে নি।
জয়দেব বলেন, সঠিক বিচারের জন্য আমি অনেকের দ্বারে গিয়েছি। বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো বিভিন্ন ধরনের হুমকির শিকার হয়েছি। তিনি আরও অনেক নবজাতকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। আমি ডাক্তার ফৌজিয়ার উপযুক্ত বিচার চাই।
আরও পড়ুন : রাঙামাটিতে প্রতিপক্ষের গুলিতে জেএসএস সদস্য নিহত
এলাকাবাসী জানান, ডাক্তার ফৌজিয়া প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ঔষধ লিখে দেন। সেই ঔষধ তার পছন্দের লোক মিজানের দোকান থেকে কিনতে হয়। অন্য কোন দোকান থেকে ঔষধ কিনলে তিনি তার ডেলিভারি করাতে চান না।
তবে ফার্মেসি মালিক মিজানুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। একটি কুচক্রী মহল আমার ব্যবসার ক্ষতি সাধনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমি শতভাগ সততার সাথে আমার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কারও কাছ থেকে ঔষধের দাম বেশি রাখার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া ডাক্তার ফৌজিয়া প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ঔষধ লেখার বিষয়টিও মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
ডাক্তার ফৌজিয়া তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নবজাতক নিহতের ঘটনায় আমার কোন ত্রুটি বা গাফিলতি ছিলো না। নবজাতকের অবস্থা সংকটাপন্ন বিধায় অক্সিজেন দিতে আড়াই হাজার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম।
ওডি/জেআই /নিলয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড