• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বেনাপোল স্থলবন্দর ট্রাক টার্মিনালের বেহাল দশা

  জাহিরুল মিলন, শার্শা (যশোর)

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:২৫
যশোর, শার্শা
ট্রাক টার্মিনালের বেহাল দশা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। কলকাতা থেকে বেনাপোলের দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এ বন্দরের ট্রাক পার্কিং টার্মিনালে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ পণ্যবাহী দুই দেশের ট্রাক আসা-যাওয়া করে।

সরকার এ বন্দর থেকে প্রতি বছরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। চরম ঝুঁকি নিয়ে পার্কিং টার্মিনালে যেতে হচ্ছে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে। তবে মাঝে মধ্যেই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। ভোগান্তির পাশাপাশি ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন দু’দেশের ট্রাক ড্রাইভারসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা। বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও ট্রাক পার্কিং টার্মিনাল এলাকা সংস্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমদানিকারকসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৫ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন পার্কিং টার্মিনাল এলাকাটি মাটি দিয়ে ভরাট করা। বালির ওপরে ইট দিয়ে সলিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বর্ষায় কাদা পানিতে গোটা এলাকা সয়লাব হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে ইটের টুকরো ফেলে কিছু স্থান সংস্কার করলেও পুরো জায়গাটি থাকে কাদা পানিতে। পণ্যবাহী ট্রাকের ভারে সেগুলো দেবে যাচ্ছে। এখানে লোড-আনলোড করতে খুব অসুবিধা হয় ট্রাক ড্রাইভারদের। মাঠের বেহাল অবস্থায় গাড়ি প্রবেশ করা ও বের করা অনুপযোগী। প্রায় দিনই পণ্যবাহী ভারতীয় ও বাংলাদেশি ট্রাক এসব কাদায় আটকে থেকে দিনের পর দিন লোকসান গুনতে হচ্ছে।

দেশের সিংহভাগ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে। রাজস্ব আয়ের দিক থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের পরেই বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে যা থেকে সরকারের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। বন্দর ও পণ্যের ভাড়া বাবদ আয় করে কয়েক কোটি টাকা। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি বছর প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য ভারতে রফতানি হয়।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আমদানি হয় ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন পণ্য ও রফতানি হয়েছিল চার লাখ এক হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন পণ্য। করোনার মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয় ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন পণ্য আর রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন পণ্য। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন পণ্য একই সময়ে রফতানি হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন পণ্য।

বেনাপোলের ট্রাকচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, পার্কিং টার্মিনালে ভারতীয় ট্রাক থেকে বাংলাদেশি ট্রাকে পণ্য লোড আনলোড করা হয়। মাঠের যে বেহাল অবস্থা তাতে গাড়ি প্রবেশ করা ও বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাঠের অধিকাংশ স্থানে কাদা পানিতে সয়লাব। প্রায় গাড়ি কাদায় ফেঁসে যাচ্ছে। গাড়ির ডেমারেজ দিতে দিতে শেষ হয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে পোর্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সুনজর নেই।

ভারতীয় ট্রাকচালক শ্যামল কুমার জানান, এই মাঠের যে অবস্থা তাতে ট্রাক নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে ভয় লাগে। কখন যে ফেঁসে যায়। আমার গাড়ি একবার ফেঁসে গিয়েছিল। ক্রেন দিয়ে তুলতে হয়েছে। কিভাবে গাড়ি ফেঁসে গেল তা নিয়ে ভারতীয় ট্রাক মালিকরা আমাদের বকাঝকা করে।

আরেক ভারতীয় ট্রাক চালক সুমন দাস জানান, আমরা কষ্ট করে ভারতীয় গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে আসি। কিন্তু পার্কিং টার্মিনালে গাড়ি নিয়ে যেতে ভয় লাগে। মাঠের অবস্থা শোচনীয়। কখন যে ফেঁসে যায় সেই চিন্তায় বসে থাকি। প্রতিদিন আমাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক আউয়াল হোসেন জানান, আমাদের কর্মচারীরা পার্কিং টার্মিনালে কাজ করতে গিয়ে নানা ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে। আমাদের অনেক পণ্য নিয়ে ট্রাক প্রতিনিয়ত কাদায় আটকে পড়ছে। আটকে থাকা ট্রাক তুলতে ২/৩ দিন সময় ব্যয় হওয়ার কারণে ঠিকমত পণ্য ডেলিভারি করতে পারছি না। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অনেকবার মাঠটি সংস্কারের কথা বললেও তারা কোনো কর্ণপাত করছে না।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট ও ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজি জানান, বর্তমানে মাঠের যে অবস্থা সেখানে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। গাড়িগুলো মাটিতে দেবে কাত হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত কাজ না করলে বন্দরে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হয়ে পড়বে। বন্দর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানোর পরও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। দ্রুত বন্দরের পাকিং টার্মিনাল মাঠটি সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন : রাজশাহীতে আলোচিত দুই হত্যার রহস্য উন্মোচন

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় ২৫ একর জায়গা কিছুদিন আগে অধিগ্রহণ করেছেন। অধিগ্রহণকৃত জায়গায় শিগগিরই ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হলে বন্দরে কোনো ধরণের সমস্যা থাকবে না। পার্কিং টার্মিনালে ইট ফেলে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড