• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ক্ষতিকর বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করবে ফেনী পৌরসভা

  এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:০৬
প্রকল্প
আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নির্মাণাধীন প্রকল্প (ছবি : দৈনিক অধিকার)

দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ফেনী শহরের প্রবেশপথ দেওয়ানগঞ্জ, বিসিক রাস্তার মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে বর্জ্য স্তূপ করা হতো। তবে ক্ষতিকর এসব বর্জ্যকে শীঘ্রই সম্পদে রূপান্তরের কাজ শুরু করবে ফেনী পৌরসভা।

সম্প্রতি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘জৈব আবর্জনা ব্যবহার করে প্রোগ্রামেটিক সিডিএম-২য় প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিবেশ অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করতে দেশের অগ্রসরমান পৌরসভা ফেনী ও কিশোরগঞ্জে এই প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রথম প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর ও কক্সবাজারে বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন চলমান রয়েছে।

বিষয়টিতে ফেনী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার নাথ দৈনিক অধিকারকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭ টাকা বরাদ্দে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মঞ্জুরুল হক মঞ্জু। ওই বছরের ৭ অক্টোবর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর এলাকায় জৈবসার উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মেয়র হাজী আলাউদ্দিন।

জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৭০ শতক জমির ওপর ২০১৯ সালের ১ মে কাজটি শেষ করার নির্দেশনা দেয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম (সিডিএম) ও ফেনী পৌরসভা। নির্ধারিত সময় পূর্ণ হলেও কাজের ৪০ ভাগ বাকি থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন। পরে আবেদন বিবেচনা করে দ্বিতীয় মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য সময় বর্ধিত করা হয়।

তবে পৌরবাসীর অভিযোগ, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও গত ২ বছরে ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র এখন পর্যন্ত হস্তান্তর করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ে চালু করতে না পারায় শহরের যত্রতত্র আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে নির্মাণাধীন বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদ গত ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার ৬শ’ বর্গফুটের একটি শেড তৈরি করা হয়েছে। শেডের ভেতর ১৯টি আবর্জনা রাখার হাউজ তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে প্রধান ফটক। বর্তমানে চলছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ।

এ ব্যাপারে প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে থাকা সেন্টু মিয়া দৈনিক অধিকারকে জানান, ইতোমধ্যে কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। গেইট নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ প্রান্তে। এখন সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ চলছে। অক্টোবরের আগেই এটি হস্তান্তর করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যেই কাজটি পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি জানান, কয়েক দফায় গেট, সীমানা প্রাচীর তৈরির স্থান ও ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তনগুলো প্রকল্পের কার্যালয় থেকে অনুমোদন করতে সময় নষ্ট হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি।

এ দিকে, পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ফেনী পৌরসভায় ৭০ থেকে ৮০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। এসব বর্জ্য থেকে পচনশীল দ্রব্য ও অপচনশীল দ্রব্য আলাদা করে প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে।

ফেনীতে নির্মাণাধীন প্রকল্পের ধারণ ক্ষমতা দৈনিক ৭ টন। প্রাথমিকভাবে দুই বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি এনজিও এটি পরিচালনা করবে। তারা এখান থেকে উৎপাদিত জৈব সার সরাসরি কৃষকের কাছে বিক্রি করে এর চাহিদা তৈরি করবেন। এছাড়াও তারা এখানে স্থায়ীভাবে জনবল তৈরির জন্যেও কাজ চালিয়ে যাবেন।

এ ব্যাপারে পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশ্রাফুল আলম গীটার জানান, প্রকল্পটি চালু করতে সংশ্লিষ্ট দাতা সংস্থা খুবই আন্তরিক। এটি চালু হলে ফেনী হবে ‘গ্রিন সিটি ও ক্লিন সিটি’।

আরও পড়ুন : মুক্তিযোদ্ধার প্রতিবন্ধী মেয়েকে গলাকেটে হত্যা, একজনের যাবজ্জীবন

বিষয়টিতে ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটির কাজ শেষ প্রান্তে। অক্টোবরের শুরুর দিকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। এটি চালু হলে একদিকে রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনার স্তূপের ক্ষতিকর অবস্থা থেকে রেহাই পাবে পৌরবাসী। অন্যদিকে প্রতিদিন প্রকল্পের মাধ্যমে ৭ থেকে ৮ টন জৈব সার উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৯৬ হাজার টাকা। এর থেকে বছরে পৌরসভার আয় হবে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা।’

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড