• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধামরাইয়ে ৫৫৯৫ জন কৃষকের স্বপ্ন এখন বন্যার পানির নিচে

  নাঈম ইসলাম, ঢাকা

০৮ আগস্ট ২০২০, ১২:৫৭
ধামরাই
বন্যার পানির নিচে ফসল

ধামরাইয়ের বংশী ও গাজিখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার প্রায় সবকয়টি ইউনিয়নই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে । যাতায়াতের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে গেছে। অনেকের বসত ঘরে বন্যার পানি উঠেছে। এ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। আউশ, রোপা আমন, বোনা আমন, বীজতলা, পাট, সবজি, কলা ও লেবুসহ সবধরনের ফসলই বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।

শনিবার (৮ আগস্ট) সকালের দিকে ধামরাই ঘুরে দেখা যায় উপজেলার প্রায় সব কয়টি ইউনিয়নই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চল গুলোর যাতায়াতের প্রায় সব রাস্তা ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানির স্রোতে ভেঙ্গে গেছে অনেক রাস্তা। নিম্নাঞ্চল এলাকার মানুষ গুলোর ঘর থেকে বের হওয়ার একমাত্র বাহন এখন নৌকা কিংবা কলা গাছের ভেলা। ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার মোট ৬০৩১ হেক্টর ফসলের জমির মধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ২৯২৩ হেক্টর জমি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৫৯৫ জন কৃষক।

৭৭০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪০০ হেক্টর জমির লেবুর বাগানেই বন্যার পানি উঠেছে ।

বাগানে পানি উঠায় বাগান থেকে লেবু তোলা বিপদজনক হইয়ে উঠেছে। তাই লেবুর ফলন ভালো হলেও লেবু তুলতে না পারায় বন্যার পানিতে পচে যাচ্ছে লেবু। পানি উঠা সব লেবু বাগানের গাছ গুলোও মরা শুরু করেছে। এতে ৮২০ জন লেবু চাষি প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন।

লেবু চাষি আব্দুর রহমান দৈনিক অধিকারকে জানান, আমি এ বছরে ১১২ শতাংশ জমিতে লেবুর চাষ করেছিলাম। আমার সব বাগানেই বন্যার পানি উঠায় লেবুর গাছ গুলো মরতে শুরু করেছে। বন্যায় প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হবে আমার।

আরেক চাষি মোঃ মনোয়ার হোসেন দৈনিক অধিকারকে জানান, আমি ১৭০ শতাংশ জমিতে লেবুর চাষ করেছি। সব বাগানেই বন্যার পানি উঠায় এখন আর লেবু তোলা যাচ্ছে না। লেবু পানিতে পচে যাচ্ছে। আর গাছ গুলো সব মরা শুরু করেছে। সব গাছ মরে গেলে তো আমার পরিবার নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। ধারদেনা করেই আমি এই লেবুর চাষ করেছিলাম। এখন মানুষের টাকা পরিশোধ করব কি ভাবে। পরের জমি কয়েক বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়ে লেবু চাষ করি। লেবু গাছ নতুন করে রোপণ করলেও এর ফল পেতে কয়েক বছর সময় লাগে। পরিবার নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর উপায় নেই এখন।

এছাড়াও ৮০২ হেক্টর জমির আউশ ধানের ৬০৩ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৫০ জন কৃষক। রোপা আমন ও বোনা আমন চাষ হয়েছিল ৩১০৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১৬০ জন কৃষক। ৪২৫ হেক্টর জমির বীজতলার মধ্যে ৩৭৫ হেক্টর জমির বীজতলাই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৫০ জন কৃষক। সবজি চাষ করা হয়েছিল ৮৫১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৮২০ হেক্টর জমির সবজি। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭৫০ জন কৃষক। পাট চাষ করা হয়েছিল ৬০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ৫০ হেক্টর জমির পাট পানিতে নষ্ট হইয়ে গেছে। এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬০ জন কৃষক। এ ছারাও ধামরাইয়ে কলা চাষ হয়েছিল ৩৮ হেক্টর জমিতে এর মধ্যে বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে ২৫ হেক্টর জমির কলা। এবং এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০৫ জন কৃষক।

কলা চাষি মহসিন আলী জানান, আমি নতুন এবার কলা চাষ শুরু করেছিলাম। খুব ভালো ফলও আসছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে সব মরে গেছে। এতে আমার প্রায় দুই লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হবে।

পাঁচ সদস্য নিয়ে সবজি চাষি আবদুল মতিনের পরিবারের খুব ভালোই কেটে যাচ্ছিল দিন গুলো। পরিবারে টাকা উপার্জনের এক মাত্র উৎস ছিলো সবজি চাষ। কিন্তু বন্যার পানিতে মতিনের সব সবজিই ডুবে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে আবদুল মতিনের। কান্না সুরে তার এ দুঃখের কথা জানালপন মতিন।

আরও পড়ুন : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল হাসান দৈনিক অধিকারকে বলেন, ধামরাই উপজেলা একটি কৃষিনির্ভর উপজেলা। প্রায় ৮ ধরনের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে বন্যার পানিতে। আউশ ধানের বেশিরভাগ ফসলই নষ্ট হয়েছে, বীজতলার মধ্যে সমস্ত বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড