• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

একুশে পদক পেলেন কুলাউড়ার মরহুম আব্দুল জব্বার  

  এস আর অনি চৌধুরী, কুলাউড়া প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:১৬
মৌলভীবাজার কুলাউড়া
একুশে পদক প্রদান (ছবি : সংগৃহীত)

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত), মরহুম আব্দুল জব্বারকে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ (মরণোত্তর) একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে ২০ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানের মাঝে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসরকারি সম্মাননা ‘একুশে পদক’ এ বছরের বিজয়ী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিতরণ করেন।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ‘মরহুম আব্দুল জব্বারের (মরণোত্তর) একুশে পদক’ প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে গ্রহণ করেন তার ছেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার-২ মো. আবু জাফর রাজু।

পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩ তোলা ওজনের ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি স্বর্ণপদক, পুরস্কারের অর্থের চেক এবং একটি সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়েছে।

মরহুম আব্দুল জব্বারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

আব্দুল জব্বার বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার আলালপুর গ্রামে ১৯৪৫ সালের ১৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আব্দুল মজিদ এবং মাতা মরহুম সমিতা বানু।

আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বলিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন করতে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। ৬ মে পাকবাহিনী কুলাউড়া আক্রমণ করলে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর চলে যান। ধর্মনগর ইয়ুথ রিসিপিশন ক্যাম্প চালু করে তার চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও শরণার্থী ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের সদস্য এবং রিক্রুট ক্যাম্পের কো-চেয়ারম্যান ছিলেন এবং সেখানে অবস্থানরত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পরামর্শ ও পরিকল্পনা করেন।

তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা মুজিব বাহিনীর ৪ নম্বর সেক্টরের অধীনস্থ মৌলভীবাজার সাবসেক্টরের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে নিয়োগলাভ করেন এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে সরাসরি যুদ্ধ করেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অবিশ্বাস্য দুঃসংবাদ শুনে আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে ১৭ আগস্ট কুলাউড়া শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রেক্ষিতে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং এগারো মাস কারাবরণ করেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করলে আবার গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি মেজর নুর কারাভ্যন্তরে তাকে অমানসিক নির্যাতন করে। আব্দুল জব্বার ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরি, প্লেকার্ড প্রদর্শন ও সমাবেশ করার কারণে ঐ রাতে গ্রেপ্তার হন এবং তিন মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে বিত্তবানদের সহযোগিতায় কুলাউড়া শহরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এছাড়া তিনি ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয়দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

আব্দুল জব্বার একজন ব্যক্তিক্রমধর্মী রাজনীতিবিদ ও এক বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। মাটি ও অবহেলিত মানুষের সঙ্গে ছিল তার নিবিড় সম্পর্ক। তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্নাঢ্যময় ও অহঙ্কার করার মতো। তার ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, সততা, দক্ষতা, দলের প্রতি আনুগত্য, নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা, কর্মীর প্রতি স্নেহপ্রবণতা ও দেশপ্রেম-বিশেষ করে সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল আস্থা সকলকে অনুপ্রাণিত করে। আব্দুল জব্বার ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সফল অংশ গ্রহণ তার জীবনে শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে নির্দ্বিধায় অভিহিত করা যায়।

আরও পড়ুন : কুমিল্লায় বন্দুকযুদ্ধে ২ ডাকাত নিহত

বঙ্গবন্ধু স্নেহধন্য ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের এ সংগঠক ১৯৯২ সালে ২৮ আগস্ট শোকের মাসে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আব্দুর জব্বারকে ২০২০ সালের ‘একুশে পদক’ (মরণোত্তর)-এ ভূষিত করা হয়।

ওডি/জেএস

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড