• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিপিএলে সাকিব-তামিমদের উত্তরসূরী পেল বিসিবি?

  আল-আমীন পাটোওয়ারী

১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:১৮
বাঁ থেকে নাঈম, শান্ত, রানা ও মেহেদী মিরাজ
বাঁ থেকে নাঈম, শান্ত, রানা ও মেহেদী মিরাজ (ছবি : সংগৃহীত)

‘পঞ্চপাণ্ডব’- শব্দটা শুনলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত যে কারও মনে বেজে ওঠে একসঙ্গে পাঁচটি নাম। বর্তমান বাংলাদেশ দলের স্তম্ভ যে পাঁচজন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণভোমরা ধরা হয় তাদের। যুগপৎভাবে তাদের পথচলায় সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস। বলছি মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কথা। সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় দেশবাসী যাদের পঞ্চপাণ্ডব হিসেবে ডাকে।

জাতীয় ক্রিকেট দলের বহু সাফল্যের ভিত নির্মিত তাদের হাতে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস লিখতে বসলে এই পাঁচজনের নাম চলে আসবে অবধারিতভাবে। এক দশক ধরে বাংলাদেশ দলের স্বপ্নের ফেরিওয়ালার ভূমিকায় আছেন তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক বড় অর্জন এসেছে তাদের হাত ধরে।

২০০৮ সাল থেকেই মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ- এই পাঁচজন ক্রিকেটারকে একসঙ্গে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। তাদের বাড়তি বয়সের সঙ্গে বাড়ে দায়িত্ব। একটা সময় তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মানদণ্ডে সেরা পাঁচ ক্রিকেটার বিবেচিত হতে থাকেন।

বিশেষ করে ২০১৫ বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর দুটো শতক হাঁকানোর পর থেকে এই পাঁচজনকে নিয়ে ভক্তরা ও বিশ্লেষকরা আলাদাভাবে ভাবতে থাকেন। পত্র পত্রিকায় তাদের ‘পঞ্চপাণ্ডব’ নামে অভিহিত করা হয়।

পঞ্চপাণ্ডব বলে খ্যাত মাশরাফি, সাকিব, তামিম, রিয়াদ, মুশফিকদের বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে মাশরাফি বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। সাকিব, তামিম, রিয়াদ, মুশফিকরা আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন জোর দিয়ে বলা যায় না। সৌম্য, সাব্বিররা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে পারছেন না। তরুণদের এগিয়ে আসা তাই সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সময়ের সাথে সাথে সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর নির্ভরতা কমছে। এখন দল নির্দিষ্ট এক বা দুইজন ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করে না। বাংলাদেশ এখন যে জয়গুলো পায় তা দল হিসেবে ভালো খেলেই।

এদের মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হয়তো ভবিষ্যৎ পঞ্চপাণ্ডবের খোঁজ পেয়ে গেছেন। তারা হচ্ছে— মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মোহাম্মাদ নাঈম শেখ, মেহেদী হাসান রানা ও নাজমুল হোসেন শান্ত।

সর্বশেষ বিশ্বকাপ, ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং সদ্য শেষ হওয়া ভারত সিরিজে দলীয়ভাবে ভালো পারফরম্যান্স লক্ষ করা গিয়েছে। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিনটি ইউনিটেই তরুণরা তাদের নিজ নিজ জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন। যার ফলে সাকিব, তামিম ছাড়াই ভারতের মতো ফর্মের তুঙ্গে থাকা দলকে হারাতে সক্ষম হয়েছে টিম টাইগার।

ক্রিকেট বোদ্ধাদের অনেকে অবশ্য এখনই তরুণদের মাঝে ভবিষ্যৎ সাকিবদের দেখতে পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ যুবদলের সাবেক অধিনায়ক মেহেদী মিরাজ। ২০১৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। অনেকে বাংলাদেশ টিমের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের জায়গাতে দেখছেন এই অলরাউন্ডারকে।

বাংলাদেশের আরেক তরুণ তুর্কি আফিফ। বিপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচে রেকর্ড গড়ে আলোচনায় আসেন ১৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। বল হাতে ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে চমকে দেন সবাইকে। এছাড়া চলমান বঙ্গবন্ধু বিপিএলেও নিজেকে ভালো করে চিনিয়েছেন আফিফ। এই তরুণ অলরাউন্ডারের দল ফাইনালে উঠেছে। বিপিএলে ব্যাট হাতে ১৪ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে করেছেন ৩৬০ রান। বল হাতেও উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। চলতি আসরে আফিফের ব্যাটিং ঝলক দেখেছে সবাই। ধারণা করা হচ্ছে মাহমুদউল্লাহর উত্তরসূরী হিসেবে একসময় নিজেকে প্রমাণ করবেন এই অলরাউন্ডার।

তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম আস্থাশীল ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নাঈম শেখ। দারুণ শট খেলতে পারদর্শী এই ক্রিকেটার। ভারত সফরে নাঈম যে দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন, বিপিএলেও সেটি ধরে রাখতে পেরেছেন। এছাড়া সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন তিনি। আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষেও ভালো পারফরম্যান্স করেছিলেন এই তরুণ ক্রিকেটার। ম্যাচজয়ী ১২৬ রানের এক ইনিংস খেলে জাতীয় দলে তার আগমনী বার্তা জানান দিয়েছিলেন। গত ৩ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয়ে গেল বাংলাদেশি এই ব্যাটসম্যানের। প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত কিছু শটে ২৬ রানের ইনিংস উপহার দেন বাংলাদেশ দলকে। ধরে নেওয়া হচ্ছে আগামীতে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের বিকল্প তাকেই দেখে যাবে।

প্লেয়ার্স ড্রাফটে জায়গা না পাওয়া বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সবচেয়ে বড় চমক তথা সাড়া জাগানো বোলার এখন প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার চাঁদপুরের ছেলে বাঁ-হাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা। পরপর তিন ম্যাচে চট্টগ্রামকে জেতানো বোলিং করে নিজেকে রীতিমতো ‘টক অব দ্য বিপিএল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন রানা। যদিও তার দল দ্বিতীয় প্লে-অফ থেকে বিদায় নিয়েছে তবুও এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ১৮টি উইকেট। বিপিএলের দেশি বোলারদের মধ্যে যারাই আলোচনায় ছিলেন তাদের মধ্যে রানা একজন। তার দুর্দান্ত বোলিং বিসিবির নজরে পড়েছে। খুব দ্রুতই তাদের সঙ্গে একটি ক্যাম্প করে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন বোর্ড কর্তা নাজমুল হাসান পাপন। ২৩ বছর বয়সী মেহেদী হাসান রানাকে অনেকেই আগামীর ফাস্ট বোলার মাশরাফির জায়গাতে দেখছেন।

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না দেশি ক্রিকেটাররা। মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, সৌম্য সরকাররা বেশ কয়েকবার সেঞ্চুরির সম্ভাবনা দেখিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। নব্বইয়ের ঘরে আটকে যাচ্ছিলেন দেশি ক্রিকেটাররা। অবশেষে সেই খরা ঘুচালেন তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত। ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে নিজ দলকেও জিতিয়েছিলেন তরুণ এই ক্রিকেটার। ১৯ বছর বয়সেই বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয় নাজমুল হোসেন শান্তর। যদিও জাতীয় দলে নিয়মিত হতে পারেননি।

২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট অভিষেক হয় শান্তর। এরপর ২টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় টেস্ট দলে নিয়মিত হওয়া হয়নি এই বাঁহাতির। টেস্টে ৪ ইনিংসে ব্যাট করা শান্তর রান ৪৮। ২০১৮ সালে ওয়ানডে অভিষেক হয় শান্তর। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে রঙিন পোশাকে খেলতে নামেন শান্ত। সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে না পারায় এক বছর আগে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া ব্যাটসম্যান খেলতে পেরেছেন মাত্র ৩টি ম্যাচ, যেখানে তার রান ২০। চলতি বছর ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে টি-টুয়েন্টি দলে ডাক পান তিনি। এখানেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন তিনি। দুই ম্যাচ খেলেছেন, করেছেন ১১ রান।

চলমান বঙ্গবন্ধু বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে খেলছেন শান্ত। ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট এই টুর্নামেন্টে প্রথম চার ম্যাচের একটিতেও দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি তিনি। খুলনার হয়ে প্রথম চার ম্যাচে শান্তর রান ছিল যথাক্রমে ৪, ০, ১, ০। তারপর কিছু রান পেলেও ফিফটি পাননি একটিও। সেই শান্তর ব্যাট শেষ দিকে হুট করেই অশান্ত হয়ে ওঠে। অবশ্য শান্তর প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন নেই কারওই। কোচ, ট্রেনাররা বরাবরই তরুণ এই ক্রিকেটারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শান্তর অনুশীলনে মনোযোগ ও ফিটনেস মুগ্ধ করেছে অনেককে। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানই একটা সময় পঞ্চপাণ্ডবদের একজন মুশফিকের জায়গাতে নিজেকে প্রমাণ করবেন এমনই সবার প্রত্যাশা।

ওডি/এএপি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড