• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হাবল টেলিস্কোপ সম্পর্কিত কিছু জ্ঞানগর্ভ তথ্য

  ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম

২১ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৪৩
ছবি : সম্পাদিত

মানুষ প্রতিনিয়ত অজানাকে জানতে, অদেখাকে দেখতে চেষ্টা করছে। ছুটে চলছে নিরন্তন নতুন কিছুর সন্ধানে। দূর আকাশ তথা মহাকাশ নিয়ে প্রতিনিয়তই ভাবছে বিজ্ঞানীরা। সেই ১৬১০ সালে দূর আকাশে খালি চোখে না তাকিয়ে ক্ষুদ্র একটি দুরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখেছিলেনে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও। কিন্তু তিনি শনি গ্রহের বলয় দেখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে দুরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতির ফলে বিজ্ঞানীরা আজ সহজেই গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সী দেখতে পান। তথাপিও পৃথিবীর আলোর প্রভাবে, ভূমিতে স্থাপন করা দূরবীনের দ্বারা দেখার ক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেয়। এজন্য এখনও উঁচু পর্বতে দূরবীক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করা হয় যেখানকার হালকা পরিবেশ পরিষ্কার ছবি দেখতে সহায়তা করে।

১৯২৩ সালে জার্মানির বিজ্ঞানী হারম্যান ওবার্থ টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্রকে দূর আকাশের কক্ষপথে স্থাপনের পরামর্শ দেন। মহাকাশে দূরবীক্ষণ যন্ত্রকে স্থাপন করার জন্য ১৯৬৯ সালে তার এই পরামর্শটিকে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সে সময় চাঁদে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তাই দূরবীনের কাজ কিছুটা বিলম্বিত হতে থাকে।

১৯৭৫ সালে, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ও নাসা মহাকাশে দূরবীন স্থাপনের জন্য একত্রে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল মহাকাশে বিশ্বের প্রথম টেলিস্কোপ বা দূরবীন চালু হয়। বিজ্ঞানী এডুইন হাবলের সন্মানে এর নাম রাখা হয় ‘হাবল টেলিস্কোপ’ বা হাবল দূরবীন। এই দূরবীন পাঠানোর সময়ে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। তবে এই খরচ বর্তমানেও নানা কারণে চলমান রয়েছে।

হাবল দূরবীন পৃথিবী থেকে ৫৬৮ কিলোমিটার দূরে মহাকাশে স্থাপিত হয়েছে। স্থাপনের পর থেকে এই দূরবীন অনেক আকাশগঙ্গা, নিহারিকাসহ অন্যান্য ছবি মিলে ৭ লাখেরও অধিক ছবি পাঠিয়েছে। এই ছবিগুলো দেখে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে।

অসংখ্য ছবি প্রেরণ করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিলেও এই দূরবীন যন্ত্রকে নিয়ে মানুষের সমালোচনাও কম ছিল না। ১৯৯০ সালে উড্ডয়নের সময় বিজ্ঞানীদের বড় ধরনের ভুল হয়েছিল বলে জানা যায়। ফলে দূরবীনের মিশন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সে সময় অনেকে এই মিশনকে টাইটানিক জাহাজের সাথে তুলনা করতে শুরু করেছিলেন।

এই ভুল সংশোধনের জন্য বিজ্ঞানীরা ১৯৯৩ সালে মহাকাশে যায় ও দূরবীনের সমস্যা সমাধান করে। এরপর নানা সময়ে দূরবীনটি সার্ভিসিংয়ের জন্য বিজ্ঞানীরা মহাকাশে গিয়েছে। জানা যায়, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০২ ও সর্বশেষ ২০০৯ সালে দূরবীনটি সার্ভিসিং করা হয়। এই সার্ভিসিংগুলো সম্পন্ন করতে প্রায় ৫০ কোটি ডলার খরচ হয়েছিল।

হাবল দুরবীনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছিল তার প্রধান দর্পনটি সঠিক ছিল না। এটি অতিরিক্ত রং করা হয়েছিল এবং দর্পনটি সমতল করা হয়েছিল। ফলে দূরবীনের ফোকাস ঠিক ছিল না ও পরিষ্কার ছবি পাওয়া যেত না।

হাবল দূরবীন হয়তো আর সার্ভিসিং করা হবে না। কারণ বিজ্ঞানীরা ২০২০ সালের মধ্যে এই দুরবীনের চেয়েও বড় দূরবীন প্রেরণ করবেন। যার নাম হবে ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, কোন প্রকার সার্ভিসিং করা না হলেও এই দূরবীন মহাকাশে ২০৩০-২০৪০ সাল পর্যন্ত সুন্দরভাবেই কাজ করতে পারবে।

এই দূরবীন ৯৫ মিনিটে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পারে। অর্থাৎ গতিবেগ ঘন্টায় ২৭ হাজার ৩০০ কিলোমিটার। এটি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ গিগাবাইট তথ্য প্রেরণ করতে পারে। গত ১৬ আগস্ট হাবল দূরবীনের প্রেরিত চমৎকার একটি ছবি প্রকাশিত হয়। যেখানে একটি ছবিতে ১৫ হাজার গ্যালাক্সিকে একই ফোকাসে তুলতে সক্ষম হয় দূরবীনটি।

হাবল দূরবীনের ওজন ১১ টন এবং তা ১৩.২ মিটার লম্বা ও ব্যাস ৪.২ মিটারের অধিক। দুটি ২৫ ফুট দীর্ঘ সোলার প্যানেলের সাহায্যে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক ক্ষমতা পেয়ে থাকে। সূর্যালোকের সহায়তায় সেখানে ৫ হাজার ৫০০ ওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। যেখান থেকে গড়ে প্রতিদিন ২১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। এই দূরবীনে ব্যবহৃত ৬ টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারীর ধারণ ক্ষমতা ২০টি গাড়ির ব্যাটারীর সমান।

আজকের দিনে আমরা মহাকাশ সম্পর্কে যত তথ্য পাচ্ছি তার অধিকাংশগুলোতেই হাবল টেলিস্কোপ বা দূরবীনটির অবদান রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে হয়ত একদিন হাবল দূরবীন থেকেও উন্নতমানের দূরবীন বা ভিন্ন কোন যন্ত্র আবিষ্কার হতে পারে। তথাপিও হাবল দূরবীনের কথা কেউ হয়ত ভুলতে পারবে না।

তথ্যসূত্র: স্পেস.কম, হাবলসাইট.অর্গ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড