অধিকার ডেস্ক
কর অব্যাহতির সুযোগ আর রাখা হবে না এমন আশংকায় দেশের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতের উদোক্তারা। কর অব্যাহতি তুলে নিলে ঝুঁকির মুখে পড়বে এ খাতে গড়ে ওঠা ৩৭০ টি কোম্পানি। এখানে কর্মসংস্থান হওয়া প্রায় ৮০ হাজার মানুষ কাজ হারাতে পারে বলে আশংকা করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)।
বাক্কোর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির ফলে ধীরে ধীরে এই খাতে মাত্র ৩০০ কর্মসংস্থান হতে থেকে বর্তমানে ৮০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশে এই খাত এখনও করারোপের অবস্থায় আসেনি। আসলে আমাদের চিন্তারও বাইরে ছিলো যে কোনোভাবে সরকার চিন্তা করবে এটা বন্ধ করবে। আমাদের এই আত্মবিশ্বাসটা ছিলে যে এটা থাকবে। করোনা বলেন বা যেকোনো ক্রাইসিসে এই বিপিও, সফটওয়্যার আইসিটি খাতই তো ভরসার জায়গা হিসেবে প্রমাণ দিয়েছে, দেশকে এগিয়ে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ১০ মার্চ বেসিসসহ পাঁচ সংগঠনের নেতারা অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কাছে চিঠি দিয়ে কর অব্যাহতি সুবিধা ২০৩১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছি। এছাড়া বাক্কো হতেও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, আমরা জানিয়েছি যে অন্তত ২০৩১ সাল পর্যন্ত এটি যেন রাখা হয়। এখন আমরা আমরা আংশকার মধ্যে রয়েছে। কারণ কোথাও নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাচ্ছি না। আর আমাদের এই আত্মবিশ্বাসটা এখন দিতে হবে কারণ কতো মানুষ এখানে কাজ করে, কতো এস্টাবলিস্টমেন্ট-এসব নিয়ে আমরা কীভাবে ঝুঁকি মধ্যে থাকতে পারি।
বাক্কোর সাধারণ সম্পাদক বলেন, পরিস্থিতি এমন হলে রেমিট্যান্স কমে আসবে। বিদেশি কোম্পানিগুলো আমাদের এই কর অব্যাহতির সুবিধার কারণে এখন কাজ দেয়। কর অব্যাহতি না থাকলে এই কাজগুলো অন্য কোনো দেশে যাবে। অনেকের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে চুক্তি আছে এগুলো আর থাকবে না। নতুন কোনো বিনিয়োগ আসবে এখাতে। সবমিলে বড় এটা হুমকির মধ্যে পড়বো আমরা।
তিনি বলেন, আমরা গত বছরের বাজেট প্রস্তাবনায়ও এই শিল্পের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০২৪ সালে থেকে বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু তা আমলে নেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডিও লেটারও দিয়েছেন যেন কর অব্যাহতি ২০৩১ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পুরো খাত বিষয়টি তুলে ধরছে।তৌহিদ হোসেন বলেন, সম্ভাব্য এই বিপদ হতে আমাদের রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের নিবেদন জানাই।
বাক্কোর সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা এই খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানের ফলেই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আপাতত দৃষ্টিতে সরকার মনে করছে এই শিল্প খাত থেকে কোন রাজস্ব পাচ্ছে না, কিন্তু এই শিল্পে কর্মরত পেশাজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায়, তারা ব্যক্তিগত আয়কর প্রদান এবং মূল্য সংযোজন কর প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে, নতুন উদ্যোক্তারা এই শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। ফলে এই শিল্পের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে এবং এই খাতে কর্মরত পেশাজীবীদের একটি বড় অংশ কর্মহীন হয়ে পড়বে। সুতরাং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হলে ভবিষ্যতে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনও বাধাগ্রস্ত হবে। বর্তমানে কর অব্যাহতির সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, নাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্তিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি অ্যান্ড প্রসেসিং, ইমেজিং অ্যান্ড ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবোটিক প্রসেস আউটসোর্সিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিক্স, গ্রাফিক্স ইনফরমেশন সার্ভিস (জিআইএস), আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন। কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হলে এ-সংক্রান্ত কোম্পানিগুলোর আয়ের ওপর কর্পোরেটর কর হিসেবে ২৭.৫ শতাংশ কর আরোপ হওয়ার কথা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড