এস এম সোহাগ
বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ তিন শতাধিক লোক আহত হন। আহত হন শেখ হাসিনা।
রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বুধবার (১০ অক্টোবর) ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় এ রায় দেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই রায়কে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো :
ওইয়াশিংটন পোস্ট : মার্কিন প্রভাবশালী এই গণমাধ্যম ‘রাজনৈতিক সমাবেশে হামলার ঘটনায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ব্যাখ্যামূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৪ সালের রাজনৈতিক সমাবেশে ভয়াবহ হামলার মামলায় বুধবার বাংলাদেশি একটি ট্রাইব্যুনাল ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং বিরোধী দলের উত্তরাধিকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা ‘এপি’র বরাত দিয়ে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানায়, ঢাকার আদালতের বিচারক শাহেদ নুরউদ্দীন ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডসহ ৪৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার রায় দিয়েছেন। ১৪ বছর আগের গ্রেনেড হামলায় ২ ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল এবং ৩ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছিল।
এবিসি নিউজ : পুরাতন ঢাকার আদালতের সামনে নিরাপত্তা কর্মীরা কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করেছে রায়কে কেন্দ্র করে, যদিও ঢাকার রাস্তা শান্ত ছিল তবুও দেশটির বিরোধী দলীয় কর্মীদের প্রতিবাদের আশঙ্কায় এই প্রস্তুতি নেয়া হয়।
তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রণালয়ের সদস্য লুতফুজ্জামান বাবরকে ফাঁসির রায় দেয়া হলে তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বলেন, ‘খোদা সব জানে। আমি এর পেছনে ছিলাম না’।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় পুত্র তারেক রহমানকে হামলার ষড়যন্ত্রের দায়ে দুটি মামলায় আজীবন কারাবাসের রায় দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থিত, মামলার রায় ঘোষণার সময় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তার দণ্ডাদেশ শেখ হাসিনার ডিসেম্বরের নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
এ দিকে ৭৩ বছর বয়সী বেগম খালেয়া জিয়া দুর্নীতির এক মামলায় ইতোমধ্যেই কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় এক হাসপাতালে চিকিৎসর জন্য নেয়া হয়, তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জড়িত থাকার জন্য তারেক রহমানকেও ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
খালেদা জিয়া দুর্নীতি থেকে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো ৩০ টি মামলার আসামি, তার দল একে রাজনৈতিক আগ্রাসনের ফল হিসেবেই অভিযুক্ত করে আসছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাহিরে রাখতেই এমন মামলায় কারাদণ্ড দিয়ে আটক রাখা হয়েছে বলেও দলটি দাবি করে আসছে। সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বিবিসি নিউজ : ‘২০০৪ সালের সমাবেশে ভয়াবহ হামলায় ১৯ জনের ফাঁসির রায় বাংলাদশে’ শিরোনামে ‘বিবিসি নিউজ’ সংবাদ প্রকাশ করে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের সামনে রাজনৈতিক সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের সাবেক এক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকে ফাঁসির আদেশ ও দলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বাংলাদেশের একটি আদালত।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। এই মামলা রাজনৈতিক নেতৃস্থানীয় এবং দলীয় নেতাদের ভাবমূর্তি ধ্বংস করার লক্ষ্য বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
আল-জাজিরা: ‘বাংলাদেশের আদালত ২০০৪ সালের হামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে’ শিরোনামে কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ‘আল-জাজিরা’ প্রকাশ করেছে।
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দীন বলে, ‘তাদের গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলানো উচিত’। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নির্বাসিত পুত্র তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
তারেক রহমান, যে বাংলাদেশের বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান দুর্নীতির একটি মামলার দায়ে আরও ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। তিনি ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
এ দিকে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানায়, ‘সরকার উচ্চ আদালতে তারেকের ফাঁসির আদেশের জন্যেও আবেদন করবে। তারেককে দেশে ফিরাতে আমরা কূটনৈতিক পদক্ষেপও নিব।’
রাজধানীতে ঢাকায় বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আশেপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি নেতাদের ও কর্মীদের প্রতিবাদের আশঙ্কায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও শিক্ষা উপদেষ্টা আবদুস সালাম পিন্টুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় পেয়েছেন।
দলটির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তার নেতাদের বিরুদ্ধে রায় "রাজনৈতিক প্রতিশোধের জন্য বিচার বিভাগ ব্যবহার করার আরেকটি উদাহরণ।”
বাংলাদেশে ‘২১ আগস্ট মামলার নথিতে বলা হয়েছে, এই হামলাটি হাসিনাকে হত্যায় বিএনপির একটি ‘নিখুঁত পরিকল্পনার চক্রান্ত’। তৎকালীন বিএনপি ও জামায়াত-ই-ইসলামী জোট সরকার এই হামলার সময় ক্ষমতায় ছিল, হত্যার পরিকল্পনার তদন্তকাজ এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের রক্ষার্থে দ্রুত সেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।
বুধবার রায় ঘোষণার পর প্রধান প্রসিকিউটরদের একজন সাইয়্যেদ রেজাউর রহমান বলেন, ‘গ্রেনেড হামলাটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক একটি ঘটনা। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক ঘটনা নয় বরং অপরাধমূলক ঘটনাও বটে।’
প্রসিকিউশন কর্তৃক দাখিলকৃত নথি অনুযায়ী, হরকত-উল-জিহাদ (হুজি) সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্বারা হামলা চালানো হয়। মুফতি আব্দুল হান্নানের জড়িত অভিযোগের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রসিকিউশন জানায়, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ‘ধর্মান্ধ ইসলাম’ স্থাপন করা।
বাংলাদেশে একাধিক হামলার অভিযোগে হরকত-উল-জিহাদ (হুজি) এর এই জ্যেষ্ঠ নেতা হান্নানের গত বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
রয়টার্স : ‘বাংলাদেশের আদালত ২০০৪ সালের বিস্ফোরণের মামলায় বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা ‘রয়টার্স’।
২০০৪ সালে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ চলাকালীন হত্যার উদ্দেশ্যে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার দায়ে বুধবার বাংলাদেশের একটি আদালত বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের আগে লন্ডনে নির্বাসির তারেক নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। তার মা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও ফেব্রুয়ারি থেকে দুর্নীতির মামলায় জেলে আছেন।
সরকারি আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, তারেকসহ বিএনপির আরও ১৯ জন নেতাকর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। যাইহোক, সরকার এই রায়ে সন্তুষ্ট নয়, সুপ্রিম কোর্টে তারেক রহমানের ফাঁসির রায়ের আবেদন করা হবে।
কাজল আরও বলেন, ‘আমরা এই বিচারে খুশি নই, আমরা তাদের (বিএনপির সদস্য) সবার ফাঁসির রায়ের আশা করেছিলাম, বিশেষ করে তারেক রহমানের।’ ২০০৪ সালে সমাবেশে হাসিনার ভাষণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই আক্রমণকারীরা গ্রেনেড ছোঁড়ে যা ২৪ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় এবং ৫ শতাধিকেরও বেশি আহত হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের ইচ্ছার ভিত্তিতে’ আদালত রায় দিয়েছে। ‘আমলা এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছি’। আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করার পরিকল্পনা করছে দলটির আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি বলেন, ‘রায় ঠিকভাবে দেওয়া হয়নি, তাই আমরা আপিলের জন্য যাব এবং আমরা বিশ্বাস করি যে তাদের সবাইকে মুক্ত করা হবে।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড