• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাপন বনাম মুশফিকরা, কার ওজন কত?

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

২২ অক্টোবর ২০১৯, ২১:১৫
ক্রিকেটারদের ধর্মঘট
বায়ে মুশফিক-সাকিবসহ আন্দোলনরত ক্রিকেটাররা, ডানে পাপন (ছবি: সংগৃহীত)

১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটে নেমেছেন ক্রিকেটাররা। সোমবার (২১ অক্টোবর) মিরপুরে এ ধর্মঘটে ক্রিকেটারদের বঞ্চিত হওয়া নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী মিরাজ, এনামুল হক বিজয়সহ অনেকে। এ প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে এসে ক্রিকেটারদের রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি এ ধর্মঘটে দেশের ক্রিকেটবিরোধী ষড়যন্ত্র দেখছেন। ধর্মঘটকে পুরো অযৌক্তিক বলেছেন তিনি। আসলে যৌক্তিকতার নিক্তিতে কার বক্তব্যে ওজন বেশি, ধর্মঘট ডাকা ক্রিকেটারদের নাকি বিসিবির?

সোমবার (২১ অক্টোবর) আচমকাই মিরপুর শেরে এ বাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবিসহ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন সাকিব তামিমরা। সকল ক্রিকেটারদের পক্ষে ৯ জন ক্রিকেটার ১১টি দাবি উত্থাপন করেন।

প্রথমে নাঈম ইসলাম কথা বলেন। তিনি জানান ক্রিকেটাররা নির্ধারণ করবেন কোয়াবের দায়িত্বভার কাদের কাঁধে থাকবে।

এর পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানান দাবি। তিনি বলেন প্রিমিয়ার লিগ আগে যেমন ছিল সেভাবে যেন হয়। পারিশ্রমিকের মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া ও বিভিন্ন লিমিটেশন দিয়ে দেওয়াটা মানছেন না কেউই।

এরপর মুশফিকুর রহিম তৃতীয় দাবি হিসেবে বলেন আগের নিয়মে বিপিএল করতে হবে। লোকাল ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়াতে হবে বিদেশি ক্রিকেটারদের মানদণ্ড বিবেচনায় এনে। বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে প্লেয়াররা নিজে নিজের ক্যাটাগরি নির্ধারণ করতে পারে। বিপিএলেও তেমন করতে হবে।

অধিনায়ক সাকিব আল হাসান চতুর্থ দাবিতে বলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ ফি এক লাখ টাকা করতে হবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। ১২ মাস কোচ, ট্রেইনার ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। আগামী মৌসুমের আগেই এটা নিশ্চিত করতে বলেন তিনি এবং এটা সব বিভাগে আলাদা আলাদা হতে হবে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মানসম্মত বল দিতে হবে। ডেইলি অ্যালায়েন্স ১৫০০ টাকাতে সন্তুষ্ট নয় ক্রিকেটাররা। সেটা বাড়ানোর দাবি করেছেন ক্রিকেটাররা, বলেন সাকিব। ক্রিকেটারদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্লেন ফেয়ার দাবি করেছেন তিনি। হোটেলে জিম ও সুইমিংপুল নিশ্চিত করা ও ক্রিকেটারদের বহনকারী বাস যেন ভালো মানের হয় সে কথাও তুলে ধরেন টাইগার দলপতি।

এরপর কথা বলতে আসেন এনামুল হক জুনিয়র। তিনি বলেন, জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দলের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম উল্লেখ করে তিনি চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা ৩০ করার দাবি রাখেন। তিন বছর ধরে বেতন বাড়ানো হয় না উল্লেখ করে তিনি বেতন বাড়ানোর দাবি করেন।

তামিম ইকবাল কথা বলতে এসে বলেন, ক্রিকেটারদের সম্মানই শুধু নয়, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবার সম্মান দিতে হবে। সারাদিন কাজ করে যাওয়া গ্রাউন্ডসম্যানরা মাস শেষে পাঁচ হাজারের মতো টাকা পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন তাদের মজুরি বাড়াতে হবে। দাবিতে তিনি বলেন, স্থানীয় কোচদের সম্মানি বাড়াতে হবে। আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য যথাযথ সম্মানি দিতে হবে। ফিজিও, ট্রেইনারদের ক্ষেত্রেও একই দাবি তার। সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশিদের মূল্যায়ন করার কথা আসে তার দাবিতে।

এনামুল হক বিজয় বলেন, ঘরোয়া লিগে বাংলাদেশে দুইটি টুর্নামেন্ট বিসিএল ও এনসিএল। সে ক্ষেত্রে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে খেলা হয় একটি টুর্নামেন্ট- ডিপিএল। সেখানে আরেকটা টুর্নামেন্ট বাড়ানোর দাবি জানান তিনি ক্রিকেটারদের পক্ষে। বিপিএলের আগে আরেকটি স্থানীয় টি-টুয়েন্টি লিগ করারও দাবি তোলেন তিনি।

ক্রিকেটারদের পক্ষে দাবি জানাতে এসে নুরুল হাসান সোহান বলেন, ঘরোয়া টুর্নামেন্টের জন্য একটা নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। আগে থেকে প্রস্তুত হবার জন্য এটি জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জুনায়েদ সিদ্দিকী ১০ নম্বর পয়েন্ট নিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, দশ নম্বর পয়েন্ট হলো বিপিএলে প্রিমিয়ার লিগের যে বকেয়া টাকা সেটা যেন নির্দিষ্ট সময়ে পাই। যেমন গত বছর দশটি দল টাকা ক্লিয়ার করেছে; কিন্তু আমরা ব্রাদার্স ইউনিয়নের ৪০ পারসেন্ট টাকা পাইনি। বোর্ডে অনেকবার গিয়েছি, ক্লাবকেও নক করা হয়েছে। জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমরা এটা ডিজার্ভ করি না, এটা খুবই দৃষ্টিকটু। এমন যেন না হয়।

১১ নম্বর দাবি নিয়ে হাজির হন ফরহাদ রেজা। তিনি বলেন, দুইটার বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলা যাবে না, এমন নিয়ম তুলে দিতে হবে। যদি আমরা জাতীয় দলের ডিউটি থেকে ফ্রি থাকি, তবে যেন আরও খেলতে দেওয়া হয়। তাহলে আমরা অনেক শিখতে পারব।

ক্রিকেটারদের দাবির জবাবে জরুরী বৈঠক ডাকে বিসিবি। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন পাপন-দুর্জয়রা। সাকিবদের আন্দোলনকে ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে বক্তব্য দেন বিসিবি সভাপতি। এছাড়া ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবির অনেকগুলোই পূরণ করা হয়েছে বা হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে দাবি করেন বোর্ড প্রধান।

বক্তব্যের শুরুতেই ক্রিকেটারদের এমন আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেন পাপন। তিনি বলেন, ‘দাবি ওরা জানাতেই পারে। খুবই ন্যাচারাল। কিন্তু সেটির জন্য তারা স্ট্রাইকে গেছে, এটা এক্সট্রিমলি শকিং। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমাদের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে এমন কিছু হতে পারে।’

এছাড়া তিনি আরও বলেন, ‘ওদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। আমার চেয়ে বেশি মনে হয় না কেউ যোগাযোগ রাখে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে সবকিছুতে কথা হয়। আমি তো বহুদূর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও ওদের অ্যাকসেস আছে। বলার কিছু থাকলে ওরা বলতে পারত।’

বিসিবি সভাপতি বারবারই এ আন্দোলনে চক্রান্ত খুঁজে পেয়েছেন। সাকিবদের আন্দোলন একটি বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে পাপন বলেন, ‘ওরা তো চাইলেই পাবে, আসেনি কেন? আমাদের কাছে চাচ্ছে না কেন? ফোন ধরছে না। সবকিছুর পেছনে কারণ আছে। আমাদের কাছে না গিয়ে মিডিয়ায় বলেছে, সেটির পেছনে বিশেষ কারণ আছে। আমাদের সুযোগ না দিয়ে মিডিয়ায় গিয়েছে। এটি বিশেষ একটি পরিকল্পনার অংশ।’

অন্যদিকে নাম না বললেও পাপন জানান এ আন্দোলনের মূল হোতা কে তা তিনি জানেন। খুব শীঘ্রই তা প্রকাশ করা হবে জানিয়ে পাপন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। একজন লোকই আছেন, যিনি বারবার এসব করছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। এই ষড়যন্ত্রের কথা সরকার থেকে শুরু করে সবাই জানে। সব ক্রিকেটার এটির সঙ্গে জেনে শুনে জড়িয়েছেন বলে মনে হয় না। ১-২ জন জানতে পারে। এই মুহূর্তে বের করা দরকার, কারা এই কাজ করছে। কিছুদিনের সময় চাচ্ছি আপনাদের কাছে। সব বের করে ফেলব।’

খেলোয়াড়রা না আসলেও ভারত সফরের প্রস্তুতি ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন পাপন। তবে আলোচনার পথ খোলা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা না খেললে খেলবে না! আমাদের কিছু করার নেই। ওরা ক্যাম্পে গেলে ভালো, না গেলে যাবে না। ক্রিকেটারদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা নিজেরাও জানে না। ২-১ জন জানতে পারে। আমার দুয়ার ওদের জন্য খোলা। ওরা যদি আমার কাছে আসে, অবশ্যই কথা হবে। আমি তো কথা বলতেই চাই। আমি আশা করি ক্যাম্প চলবে, ভারত সফর হবে।’

ওডি/এমএমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড