• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তাফসিরুল কুরআন বিল কুরআন

সুরা ফাতিহার তাফসির [পর্ব-০৩]

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

২৫ নভেম্বর ২০১৯, ২১:০৩
তাফসির
ছবি : সংগৃহীত

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ‘যিনি কর্মফল দিবসের মালিক।’ [সুরা ফাতিহা, ৪]

দীন শব্দের অর্থ

দীন শব্দটি কুরআনে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনের সঠিক অর্থ বুঝতে হলে এর বিভিন্ন অর্থ জানা থাকা চাই। আল-কুরআনে বিভিন্ন প্রসঙ্গে, বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত ‘দীন’ শব্দটির কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো।

১. আকিদাহ-বিশ্বাস

لاَ إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

‘দীন তথা আকিদাহ-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। (কারণ) নিঃসন্দেহে বিপথ থেকে সুপথ সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন যারা তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল, যা ভাঙবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।’ [সুরা বাকারা, ২ : ২৫৬]

২. ইবাদত-বন্দেগি

وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ

‘তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করো, যেভাবে জিহাদ করা উচিত। (কেননা) আল্লাহ তোমাদের মনোনীত করেছেন এবং দীন তথা ইবাদতের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা রাখেননি।’ [সুরা হজ, ২২ : ৭৮]

৩. আইন-কানুন

فَبَدَأَ بِأَوْعِيَتِهِمْ قَبْلَ وِعَاء أَخِيهِ ثُمَّ اسْتَخْرَجَهَا مِن وِعَاء أَخِيهِ كَذَلِكَ كِدْنَا لِيُوسُفَ مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِي دِينِ الْمَلِكِ إِلاَّ أَن يَشَاء اللّهُ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مِّن نَّشَاء وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ

‘ইউসুফ আপন ভাইদের থলের পূর্বে তাদের থলে তল্লাশি শুরু করলেন। অবশেষে সেই পাত্র আপন ভাইয়ের থলের মধ্য থেকে বের করলেন। এমনিভাবে আমি ইউসুফকে কৌশল শিক্ষা দিয়েছিলাম। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত সে বাদশার দীন তথা আইনে আপন ভাইকে কখনো বন্দি করতে পারত না। আমি যাকে ইচ্ছা, মর্যাদায় উন্নীত করি এবং প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছে অধিকতর জ্ঞানীজন।’ [সুরা ইউসুফ, ১২ : ৭৬]

৪. আনুগত্য ও কর্তৃত্ব

أَفَغَيْرَ دِينِ اللّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ

‘তবে কি তারা আল্লাহর দীন তথা আনুগত্য ও কর্তৃত্বের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। [সুরা আলি ইমরান, ৩ : ৮৩]

৫. মানহাজুল হায়াত বা জীবনব্যবস্থা

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ

‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দীন (জীবনব্যবস্থা) হলো ইসলাম। [সুরা আলি ইমরান, ৩ : ১৯]

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

‘যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন (জীবনব্যবস্থা) তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত।’ [সুরা আলি ইমরান, ৩ : ৮৫]

৬. কর্মফল বা প্রতিদান

وَإِنَّ الدِّينَ لَوَاقِعٌ ‘দীন (কর্মফল) দিবস অবশ্যম্ভাবী।’ [সুরা যারিয়াত, ৫১ : ৬]

لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ ‘তোমাদের কর্মফল তোমাদের জন্যে, আমার কর্মফল আমার জন্যে।’ [সুরা কাফিরুন, ১০৯ : ৬]

يَوْمَئِذٍ يُوَفِّيهِمُ اللَّهُ دِينَهُمُ الْحَقَّ وَيَعْلَمُونَ أَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ الْمُبِينُ

সেদিন আল্লাহ তাদের দীন (কর্মফল, প্রতিদান) পুরোপুরি দেবেন। আর তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সত্য, স্পষ্ট ব্যক্তকারী। [সুরা নুর, ২৪ : ২৫]

মূলত সুরা ফাতিহায় ‘দীন’ শব্দটি শেষোক্ত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। তাই আমরা এর অর্থ করেছি ‘যিনি কর্মফল দিবসের মালিক।’ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

وَمَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ - ثُمَّ مَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ - يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْئًا ۖ وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِّلَّهِ

আপনি জানেন, ‘ইয়াওমুদ দীন’ কী? আবারও বলি, আপনি কি জানেন, ‘ইয়াওমুদ দীন’ কি? (এটা হলো সেই দিন) যেদিন কেউ কারও কোনো উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর। [সুরা ইনফিতার, ৮২ : ১৯]

সেদিন আল্লাহ তায়ালা প্রশ্ন করবেন,

لِّمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ ‘আজকের দিনের রাজত্ব কার? (তিনিই জবাব দেবেন) প্রবল পরাক্রমশালী এক আল্লাহর।’ [সুরা মুমিন, ৪০ : ১৬]

সেদিনের রাজত্ব তাঁর—এর মানে এই নয় যে, দুনিয়াতে রাজত্ব অন্যের। বরং ইতঃপূর্বেই আল্লাহ জানিয়েছেন যে, তিনি রাব্বুল আলামিন। আসমান-জমিনের রব। এখানে বিচার দিবসের মালিকানাকে তাঁর নিজের দিকে সম্বন্ধ করার উদ্দেশ্য হলো, সেদিন দুনিয়ার কোনো অত্যাচারী শাসকই মুখ খুলতে পারবে না, তাদের কোনো দাপট চলবে না।

يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا لَّا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا

‘সেদিন জিবরিল ও অন্যান্য ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ব্যতীত কেউ কথা বলতে পারবে না। আর যাকে অনুমতি দেওয়া হবে, সে সঠিক কথাই কেবল বলবে।’ [সুরা নাবা, ৭৮ : ৩৮]

চলবে ইনশাআল্লাহ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড