• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জাতীয় নির্বাচন পিরোজপুর-৩

আ.লীগ-বিএনপিতে নতুন প্রার্থী : হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী

  ইমন চৌধুরী, পিরোজপুর

১৫ জুলাই ২০১৮, ১৬:৫৮
ছবি : নিজস্ব

ভৌগলিকভাবে দুর্গম এলাকা হিসেবে চিহ্নিত পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসন। জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৪ কি মি দক্ষিণে সাগর উপকূলবর্তী ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। এখানে রয়েছে প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভাও। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাসের সম্ভাব্য তালিকায় মঠবাড়িয়া আসনটি নড়চড় না হওয়ায় আগামী একাদশ নির্বাচনেও এখানকার ভোটাররা সম্ভাব্য পুনর্বিন্যাসের কোন রকমের ঝামেলায় পড়তে চান না বলেই তাদের অভিমত।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মঠবাড়িয়া আসন থেকে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে জানান দিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তবে বিভিন্ন মহল থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আওয়ামী লীগে থাকতে পারে নতুন চমক আর বিএনপিতে যোগ্য প্রার্থী থাকা চাই, এমন দাবি ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠছে স্থানীয় নেতাকর্মীর মাঝে। তবে বৃহৎ দু’দলের ভোটের সমীকরণ যাই হোক না কেন, নতুন প্রার্থীদের আগমনী বার্তায় কিছুটা বিমর্ষ পুরাতন পরিচিত প্রার্থীরা। পিরোজপুর-৩ আসনে (মঠবাড়িয়া) বিগত রাজনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকেই সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে আসছেন। শুধুমাত্র ২০১৪ সালের ৫ এপ্রিলের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরে দাঁড়ালে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে আসা আরেক ডাক্তার রুস্তুম আলী ফরাজী। ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী আঃ জব্বার ইঞ্জিনিয়ার, বিএনপি থেকে (প্রয়াত) কৃষিবিদ এমএ সামাদ তালুকদার ও আওয়ামী লীগ থেকে মহিউদ্দিন আহমেদ অংশ নিলে নৌকার বিজয় হয়। আবারও ১৯৯১ সালে মহিউদ্দিন আহমেদ, এমএ সামাদ ও জব্বার ইঞ্জিনিয়ার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসলে মহিউদ্দিন আহমেদ নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন। সে হিসেবে এ আসনটিতে বারবার জয়ের মুকুট পরেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ প্রয়াত হবার পর জাতীয় রাজনৈতিক মেরুকরণের ধাক্কায় পাল্টে যেতে থাকে মঠবাড়িয়ার রাজনীতিও। পরবর্তীতে ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে এরশাদ সরকারের সময় মঠবাড়িয়া আসন থেকে প্রবাসে পলাতক যুদ্ধাপরাধী আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার দু’বার নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাপা থেকে ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে পুনরায় রুস্তুম আলী ফরাজী প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের ভাইয়ের ছেলে সওগাতুল আলম সগিরের সহধর্মীনি মাহমুদা সওগাত নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলে এখানেও রুস্তুম আলী ফরাজী ৬৪ হাজার ভোটে বিজয়ী হন।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ’৯৬ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগের দুর্গ দখলে নেন ডাঃ রুস্তুম আলী ফরাজি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর জেলার তিনটি আসনের দু’টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২ আসনে মহাজোটের ১৪ দল থেকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও ১ আসন থেকে একেএমএ আউয়াল নির্বাচিত হলেও ৩ আসন মঠবাড়িয়া থেকে ১৪ দলের আওয়ামী লীগের ডা. আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করে ডা. রুস্তম ফরাজী স্বতন্ত্রভাবে এমপি নির্বাচিত হন। প্রয়াত আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মহিউদ্দিন আহমেদের জন্মস্থান মঠবাড়িয়ায় বর্তমানে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন চরম পর্যায় পৌঁছেছে। গত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে সে কোন্দলের মাত্রা আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যেও বিবাদ তুঙ্গে।

অপরদিকে, বিএনপির মধ্যে রয়েছে ত্রি-ধারার কোন্দল। এদের মধ্যে জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মঠবাড়িয়া উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন দুলালের নেতৃত্বে রয়েছে একটি শক্তিশালী গ্রুপ। রয়েছে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মঠবাড়িয়া পৌর কমিটির সভাপতি কেএম হুমায়ুন কবিরের আরেকটি গ্রুপ। গ্রুপিংয়ে পিছিয়ে নেই জেলা কমিটির সদস্য কর্নেল (অব:) শাহজাহান মিলনও। তবে মাঠে বেশ মজবুতভাবেই সক্রিয় রয়েছেন রুহুল আমীন দুলাল ও তার কর্মীরা। দুলাল জানান, উপজেলা ও তৃনমূলে রয়েছে তার অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মী যাদেরকে নিয়ে তিনি বলীয়ান। এই নেতা মনে করেন দল তাকে মনোনয়ন দিলে দলীয় সকল গ্রুপিংয়ের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবেন এবং স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থীর ভিতও নড়ে বসতে পারে।

এদিকে দলের কাছে মনোনয়ন চাবেন জেলা বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ও মঠবাড়িয়া পৌর বিএনপির সভাপতি কে.এম হুমায়ুন কবিরও। তার রয়েছে দলের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা। মনোনয়ন প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য ও মঠবাড়িয়া উপজেলা শাখার সভাপতি কর্নেল অব. শাহজাহান মিলন, মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মাহতাব, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন খান মিলন ও জেলা কমিটির সদস্য মো. কামাল উদ্দিন।

পিরোজপুর ৩ আসন মঠবাড়িয়া থেকে সরকার সমর্থিত বেশ ক’জন মনোনয়ন প্রত্যাশীও রয়েছেন সরবে। এদের মধ্যে দু’একজন প্রার্থী ঈদ-কোরবানি উপলক্ষ্য করে এলাকাবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে সেঁটে দিয়েছেন রঙ্গিন পোস্টার। তবে, এ আসনে আওয়ামী লীগের পুরনো প্রার্থীর চেয়ে নবাগত প্রার্থীদের বেশ দাপটও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব প্রার্থীর মধ্যে দু’জন পেশায় চিকিৎসক। এ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. আনোয়ার হোসেন এবং রয়েছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. নজরুল ইসলাম। এরা দু’জনই নৌকার টিকিট লাভে প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আরও রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি একেএম সেলিম মিয়া, মঠবাড়িয়া পৌরসভার সফল মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সুযোগ্য সভাপতি রফিউদ্দিন আহমদ ফেরদৌস ছাড়াও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুর রহমান ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তাদের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় শুরু করে দিয়েছেন। তবে এখানকার দলীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষণে অনেকটা স্পষ্ট যে, এ আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে সকল প্রার্থীর রয়েছে এক একটি নিজস্ব ধারার গ্রুপিং। যে কারণে এখানকার দলীয় রাজনীতি বার বার হয়েছে লঙ্ঘিত।

এ আসনে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে সাংগঠনিক ক্ষতিকে কারণ হিসাবে নিয়ে তৈরি হয়েছে তৃতীয় শক্তি। আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মী ও সংবাদ কর্মীরা হামলা মামলার শিকার হয়েছেন স্বতন্ত্র এমপি রুস্তুম আলী ফরাজীর কাছে, এই অভিযোগের কথাও এখন আকাশে-বাতাসে। সরকারের উন্নয়ন কাজের ন্যায্য হিংসায় তীব্র মতপার্থক্যের সৃষ্টি হওয়ায় ব্যহত হয়েছে উন্নয়ন কাজ, কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো নেপথ্যে চলছে সংঘাত-দ্বন্দ্বের তীব্র কোন্দল। পৌর মেয়র ফেরদৌসের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের কোন্দল এখন চায়ের কাপের গল্প।

উপজেলা নির্বাচনের পর থেকেই মঠবাড়িয়ার রাজনীতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে যা এখনও চলমান বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

মঠবাড়িয়ার বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজিও একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। তিনি ১৯৯০ সালে প্রথম জাতীয় পার্টির টিকিটে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। এর পর ফরাজিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টির টিকেটে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরবর্তী বেশ ক’টি দল চষে ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ করেন দল নয়, ব্যক্তির ইমেজই বড় ফ্যাক্টর। তিনি মোট তিন তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন একাধিক দল থেকে। মঠবাড়িয়ার মানুষের কাছে তিনি নানা মত, নানা পথের মানুষ হিসেবেই ‎চিহ্নিত। অত্র এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার, এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দল থেকে যেই নির্বাচন করুক না কেন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে রুস্তুম আলী ফরাজীর সঙ্গেই। আর এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে তোলপাড়। কারণ জার্সি পাল্টানো এ নেতা প্রথমে জাতীয় পার্টি পরে বিএনপিতে আসার পর ১/১১ এর সময় তিনি বিএনপির সংস্কারপন্থী এবং দলের চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে বহু সমালোচনা করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এ আসনে আরও যারা নির্বাচনে প্রার্থী হবার কথা ভাবছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন-বিএনপি থেকে আসা জাতীয় পার্টির জেলা পর্যায়ের নেতা মুকুল আহমেদ বাদশা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা নাজমূল আহসান কবির।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড