• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিএনপি জোটের আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত

  অধিকার ডেস্ক    ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:০৩

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট (ছবি : সংগৃহীত)

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। আসন্ন নির্বাচনে ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে ক্ষমতাসীনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে এই জোট।

৩০০ আসনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিএনপির কয়েক শীর্ষ নেতা।

কে কোন আসনে দাঁড়াবেন, কাকে বাদ দিলে ভালো হয়, কাকে রাখলে ভালো হয় এসব বিষয় বিস্তারিত আলোচনার পর প্রার্থী তালিকাতে সম্মতি দিয়েছেন তারা। তার পরেই চূড়ান্ত তালিকা করেছে বিএনপি। তাদের সম্মতিতে ৩শ আসনে প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে অনেক আগেই।

তবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করার পর বেশ কয়েকটি আসনে পরিবর্তন আসতে পারে। এমনটি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি কয়েক সদস্য।

তারা বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল এবং বিএনপির মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না। স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় থেকে বিতাড়িত করতে জোটের সব নেতা আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো নেতারই আসন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কথা না। তারা জানান, সময় হলে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে। আপাতত সবাই নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরপেক্ষতার জন্য আমাদের অব্যাহত সংগ্রাম চলবে।

এ দিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরদিন থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর নেতারা নিজ দলের প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। দু’একদিনের মধ্যে এসব তালিকা জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপির হাতে তুলে দেওয়া হবে। এর পর পরই চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে বসবেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা।

অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল গণফোরাম প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫ জন প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছে। আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি তৈরি করেছে ১৫ জনের তালিকা। মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য ১০, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৭ এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ৫ জনের তালিকা তৈরি করেছে। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, আমরা দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছি। অন্যরাও তাদের তালিকা তৈরি করছে। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বসে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। তারপর ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। শরিক দলগুলোর নেতারা কে কোনো আসন থেকে নির্বাচন করতে চান তার তালিকাও চাওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হয়, দু’তিন দিনের মধ্যে জোটের শরিকরা যার যার দলের তালিকা চূড়ান্ত করবে। এরপর ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। হাতে সময় কম থাকায় যত দ্রুত সম্ভব প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করারও সিদ্ধান্ত হয় এই বৈঠকে।

এছাড়া বিএনপির বাইরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬), সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু (ঢাকা-২ অথবা ঢাকা-৩), জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৮ ও ৪), নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২) এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ (মৌলভীবাজার-২) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি ছিলাম। জোট মনোনয়ন দিলে আগামীতেও এই আসন থেকে নির্বাচন করব। তিনি বলেন, সিলেট-১ আসন থেকেও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এমনই কিছু হলে তিনি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ফ্রন্টের একাধিক নেতা জানান, ড. কামাল হোসেনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। গণফোরামের নেতারা চান তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। কিন্তু ড. কামাল হোসেন এখনও এতে সায় দেননি। তিনি সম্মত হলে (ঢাকা-৮) নির্বাচন করতে পারেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ঢাকা-২ অথবা ঢাকা-৩ এই দুটি আসনের মধ্যে যে কোনো একটি থেকে নির্বাচন করবেন। দু’তিন দিনের মধ্যে তারা তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

অন্যদিকে আ স ম আবদুর রব ছাড়াও জেএসডির প্রার্থীদের খসড়া তালিকায় আরও রয়েছেন- দলটির সহসভাপতি তানিয়া রব (ঢাকা-১৮), সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন (কুমিল্লা-১), আবদুল জলিল (নোয়াখালী-২), অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন বেলাল (লক্ষ্মীপুর-২), নাজমুল হক শিকদার (নরসিংদী-৫), অ্যাডভোকেট আবু ইসাহাক (সিরাজগঞ্জ-৪), দবিরউদ্দিন জোয়ার্দার (ঝিনাইদহ-১), নুরুল ইসলাম (বরিশাল-৬)। মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও নাগরিক ঐক্যের প্রার্থী তালিকায় আরও রয়েছেন দলটির উপদেষ্টা এসএম আকরাম (নারায়ণগঞ্জ-৫), অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার (চাঁদপুর-৩), মোমিনুল ইসলাম (লক্ষ্মীপুর-১), জিন্নুর আহম্মেদ চৌধুরী (সিলেট-৬), নঈম জাহাঙ্গীর (জামালপুর-৩), মোফাখ্খারুল ইসলাম নবাব (রংপুর-৫), দিদারুল আলম বাবুল (বাগেরহাট-৩) এবং সাদাকাত হোসেন খান সাক্কু (ঢাকা-১৬)। বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী ছাড়াও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী তালিকায় আছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা (টাঙ্গাইল-৭), যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী (গাজীপুর-৩) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার (নারায়ণগঞ্জ-৪)।

এ দিকে স্বতন্ত্র নয়, জামায়াত নির্বাচন করবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। জামায়াতের নীতিনির্ধারকদের বড় একটি অংশ লন্ডনে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। দলের আমির মকবুল আহমেদের ওপর হাই কমান্ডের চাপ ছিল যাতে তিনি ফেনী-৩ আসন থেকে প্রার্থী হন। তিনি দলকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচনের জন্য তিনি ফিট নন। ১৮টি আসনই জামায়াতের ভাগ্যে জুটতে পারে। যদিও ৫১টি আসনের তালিকা জামায়াত বিএনপিকে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে বিএনপি সায় দেয়নি। অতীতে জামায়াত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেনি।

অন্যদিকে বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলো- ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৩০-৫০টি আসনে ছাড় দেবেন। লন্ডন থেকে পাঠানো তারেক রহমানের আসন ছক হচ্ছে ২০ দলীয় জোটসহ বিএনপি ২৩০টি আসন, জামায়াতের ১৬টি, ঐক্যফ্রন্টের যুক্ত শরিকদের ৫০টি।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, মো. আবু হানিফ দিনাজপুর-১, আনোয়ারুল ইসলাম দিনাজপুর-৬, গোলাম রাব্বানী রংপুর ৬, মোস্তাফিজুর রহমান কুড়িগ্রাম-৪, মাওলানা আমজাদ হোসেন গাইবান্ধা-৫, নুরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪, আবু সাইদ মো. শাহদাৎ যশোর-২, অধ্যাপক মতিউর রহমান ঝিনাইদহ-৩, ব্যারিস্টার নাজীব মোমেন পাবনা-১, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বাগেরহাট-৪, মাও. আবুল কালাম আজাদ খুলনা-৬, গাজী নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরা ৪, শামীম সাইদী পিরোজপুর-১, ডা. সৈয়দ আ. মো. তাহের কুমিল্লা-১১, আনম শামশুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৫। এ আসনগুলোতে জামায়াতকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে লন্ডন থেকে। ১৬টি আসন পাওয়ার ইঙ্গিতের পর পরই জামায়াত আরও ৬টি আসন নিশ্চয়তার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হামিদুর রহমান আজাদ কক্সবাজার-১, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২, শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১০, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী-১, হাছান ইমাম ওয়াপি শেরপুর-১, শফিকুর রহমান ঢাকা ১৫।

অন্যদিকে ২০ দলের বাকি শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মুসলিম লীগ, এনডিপি, কল্যাণ পার্টি, এলডিপি, সাম্যবাদীদলসহ সবার চাহিদা মতো আসন দেওয়া হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে শরিকদের আসন ঘোষণা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড