• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সাতক্ষীরা-৩: আওয়ামী লীগে প্রার্থী জোট, ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি-জামায়াত

  কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা (সাতক্ষীরা):

১৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩৯
আ. ফ. ম. রুহুল হক

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় আওয়ামী লীগে এক প্রকার প্রার্থী জোট লেগে গেছে। অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি নীরবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সাতক্ষীরার-৩ (দেবহাটা-৫,আশাশুনির-১১ ও কালিগঞ্জের ৪টি ইউনিয়ন) আসনকে বলা হয়ে থাকে ভিআইপিদের আসন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন প্রার্থীর তালিকায়। এ ছাড়া প্রার্থী হতে চান শিল্পপতিরাও।

১৯৮৪ সালে সৃষ্ট এ আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। সাতক্ষীরা-৩ আসন তৈরি হওয়ার পর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জামায়াত, একবার করে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪টি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ আসন থেকে দুবার জিতেছে জামায়াত। আর বাকি দুবার জিতেছে আওয়ামী লীগ। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের মাওলানা এ এম রিয়াছাত আলী দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ডা. মোখলেসুর রহমান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ডা. মোখলেসুর রহমান রিয়াছাত আলীকে পরাজিত করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে রিয়াছাত আলী আবারও ডা. মোখলেসুর রহমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার পাশাপাশি কালিগঞ্জের ৪টি ইউনিয়ন সংযুক্ত হয়। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে আসেন প্রখ্যাত শল্য চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক। তিনি এ এম রিয়াছাত আলীকে ৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী নিযুক্ত হন। এরপর থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি পরপর জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পেশায় চিকিৎসক আ. ফ. ম. রুহুল হক ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) দায়িত্বে থাকাকালীন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও নলতায় ম্যাটসসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্ম পরিচালনা করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন তিনি। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। ডা. আ. ফ. ম. রহুল হক ছাড়াও সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন, নর্দান ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদল্লাহ, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, দেবহাটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. স ম গোলাম মোস্তফাসহ আরও অনেকে।

মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেন, বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ডা: রুহুল হক এমপি বলেন, ব্যক্তি ইমেজে তিনি এলাকায় ভোটারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগের অন্য যেকোনো প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করুক না কেন দলের নির্বাচকদের দৃষ্টিতে তিনিই এগিয়ে-এমনটাই মনে করেন। মনোনয়ন পেলে পুনরায় নির্বাচিত হবেন বলে দৃঢ় আশাবাদী তিনি ।

জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, এলাকার উন্নয়নে ইয়ং এনার্জেটিক ও সৎ নিবেদিতপ্রাণ নেতৃত্ব দরকার বলে তিনি মনে করেন। আর সে কারণে তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী উল্লেখ করে বলেন, আমি দলের মনোনয়ন পেলে প্রবীণদের পাশাপাশি তরুণ যুব নেতৃত্বের সমম্বয় ঘটিয়ে দল ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাব।

মনোনয়নপ্রত্যাশী দেবহাটা উপজেলার সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স ম গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী। আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি দলীয় নেতাকর্মীদের একসুতোয় গেঁথে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পরপর তিনবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন এলাকার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মনোনয়ন পেলে মাঠপর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সমম্বয় করে দলকে শক্তিশালী করবেন বলে জানান।

এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে চান শিল্পপতি, প্রাসাদ গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ'র অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ। তিনি ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এ ছাড়া এলাকার মানুষের জন্য তিনি দীর্ঘদিন বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও দুস্থ মানুষের জন্য বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানান।

বিএনপি : সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ড্যাব নেতা ডা. সহিদুল আলম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এ ছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা ডাকসুর মিলনায়তন সম্পাদক মহিউদ্দিন সিদ্দিকী এবার বিএনপির মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

জাতীয় পাটি : এই আসন থেকে এ পর্যন্ত একবার জয় পেয়েছে জাতীয় পার্টি। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে জয়লাভ করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাড. স ম সালাহউদ্দিন। এর আগে ১৯৮৬ সালের ৭ মে মাসে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নের তালিকায় অ্যাড. স ম সালাহউদ্দিনসহ দেবহাটা উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল ফজল ও ছাত্র সমাজের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাড. স ম আলিফের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে মাঠপর্যায়ে তাদের পদচারণা তেমন একটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

জামায়াত : নির্বাচনের বিষয়ে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল আজিজ বলেন। এ আসনে জেলা জামায়াতের আমির মুহাদ্দিস রবিউল বাশারকে এবার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে জেলা জামায়াতের আমির মুহাদ্দিস রবিউল বাশার দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড