• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

বর্ধিত ওয়ার্ডে কপাল খুলল ১৮ জনের

  মনিরুল ইসলাম মনি

০১ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:২৭
ছবি : সম্পাদিত
ছবি : সম্পাদিত

নির্বাচনী দামামা বাজছে একসময়ের তিলোত্তমা নগরী ঢাকাতে। ইতোমধ্যেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি দল।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে ক্যাসিনো, মাদক, দলীয় প্রভাব, ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ, বৈঠকে অনুপস্থিত থাকাসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় দলীয় সমর্থন থেকে অনেকেই বাদ পড়লেও উত্তরে এর প্রভাব খুব একটা পড়েনি।

এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের মধ্য দিয়েই শুরু হয় আলোচিত এ শুদ্ধি অভিযান। এর প্রভাব আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটিতে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন ও সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রেও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের প্রাধান্য দিল শাসক দলটি। তবে এর প্রভাব তেমন একটা পড়েনি ঢাকা উত্তরে।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটির পুরনো ওয়ার্ড ছিল ৩৬টি। আর পরে ১৮টি বর্ধিত হয়ে মোট ৫৪টি ওয়ার্ড হয়েছে। এর মধ্যে পুরনো ৩৫টি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলররাই পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। আর বর্ধিত ওয়ার্ডেই কপাল খুলেছে ১৮ জনের। এ দিকে ৬ বর্তমান কাউন্সিলের কপাল পুড়েছে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতা, চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্যসহ বেশ কিছু অভিযোগের কারণে। এদের মধ্যে দুই জন বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন। নতুন আর ১৯ জনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নতুন করে মনোনয়ন পাওয়াদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই কোনো না কোনো পদধারী নেতা। আবার এদের বেশিরভাগই আগের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

কাউন্সিলর নন এমন যে ১৯ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডে আদম আলী মাদবর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জিন্নাত আলী মাদবর, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সালাউদ্দিন রবিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তোফাজ্জল হোসেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আবুল কাশেম মোল্লা, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মুরাদ হোসেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে মইজ উদ্দিন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইসহাক মিয়া, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে জাহিদুর রহমান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাখাওয়াত হোসেন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল্লাহ আল মঞ্জুর, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে আসিফ আহমেদ, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ মোহাম্মদ হোসেন, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে মোক্তার সরদার, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল মতিন, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ কে এম মাসুদুজ্জামান ও ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে শফিক উদ্দিন মোল্লা।

এদের মধ্যে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন পাওয়া আসিফ আহমেদ দলীয় কোনো পদধারী নেতা নন। আর সংরক্ষিত আসন থেকে ৩১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন নারী যুবনেত্রী আলেয়া সারোয়ার ডেইজি। এ ছাড়া এদের ১৩ জন বিগত নির্বাচনে অংশ নেন। আর চার জন করছেন প্রথমবারের মতো নির্বাচন।

উত্তরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে আদম আলী মাদবর আগেও নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে লড়েছিলেন। ওয়ার্ডটির বর্তমান কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেনের কাছে তিনি পরাজিত হন।

৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো লড়ছেন পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিন্নাত আলী মাদবর। ওয়ার্ডটির বর্তমান কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক।

৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান দুই কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বিভিন্ন অভিযোগে। তাদের দুজনই ডিএনসিসির কাউন্সিলরদের মধ্যে বিতর্কিত।

৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজ্জব হোসেনের বিরুদ্ধে ক্যাডার লালন, দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ফলে রজ্জবের পরিবর্তনে ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন রবিন। তিনি গত নির্বাচনে টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকে লড়েছিলেন।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোবাশ্বের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তার জায়গায় এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন। তিনি গত নির্বাচনে মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও পরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

৮ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশের মোল্লা। তিনি গত নির্বাচনে ট্রাক্টর প্রতীকে নির্বাচন করে কাজী টিপু সুলতানের কাছে হারেন।

৯৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মইজউদ্দিন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন।

ভাটারা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়াকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিগত নির্বাচনে রেডিও প্রতীকে লড়ে বর্তমান কাউন্সিলর জিন্নাত আলীর কাছে তিনি পরাজিত হন।

২০ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান। তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. নাছির।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেনকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনিও প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ওয়ার্ডটির বর্তমান কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ।

গত নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়া আব্দুল্লাহ আল মঞ্জুরকে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত আসন ১২ এর বর্তমান কাউন্সিলর ও ডিএনসিসি প্যানেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার ডেইজি। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলাম সেন্টুর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত নির্বাচনে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ওয়ার্ডটির বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন আসিফ আহমেদ। তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দখল, চাঁদাবাজিসহ তিন মামলায় কারাগারে রয়েছেন ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব।

৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু তাহের খান মারা যাওয়ায় ওয়ার্ডটি শূন্য হয়। বর্তমানে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এই ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ হোসেনকে।

সাঁতারকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে লাটিম প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বর্তমান কাউন্সিলর সফিকুল ইসলামের কাছে তিনি পরাজিত হন।

বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে তিনি অংশ নিয়ে পরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

দক্ষিণখান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মাসুদুজ্জামান ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে ট্রাক্টর প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান দেওয়ানের কাছে পরাজিত হন।

৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিউদ্দিন মোল্লা। তিনি গত নির্বাচনে অংশ নিয়ে ট্রাক্টর প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বর্তমান কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈমের কাছে তিনি পরাজিত হন। নাঈম করপোরেশনের কাউন্সিলরদের মধ্যে অন্যতম বিতর্কিত জনপ্রতিনিধি। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী লালন, চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

ওডি/এমআই

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড