• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিএনপির ৩ মেয়রপ্রার্থীর সাক্ষাৎকার লন্ডনে!   

  আয়াজ উর রাহমান

১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১২:১৭
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী
ইশরাক হোসেন বামে, তাবিথ আউয়াল মাঝে, শাহাদাৎ হোসেন ডানে (ছবি : সংগৃহীত)

আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে আগামী বছর চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বিএনপি। এই লক্ষ্যে ঢাকার দুই সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থী ও চট্টগ্রামের মেয়রপ্রার্থীকে লন্ডনে ডেকেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার বিএনপি থেকে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পুত্র প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন খোকা। এছাড়া সম্ভাব্য তালিকায় আরও রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। আলোচনায় আছেন মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও।

অন্য দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির তালিকায় অন্যান্যবারের মতো এবারও তাবিথ আউয়ালই যোগ্য মেয়রপ্রার্থী হিসেবে তালিকায় রয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন শাহাদাৎ হোসেন। তবে তাকে প্রার্থী করার একটি সিদ্ধান্ত থাকলেও কারাবন্দি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বকর ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানেরও আগ্রহ রয়েছে।

তবে সব কিছুই নির্ভর করছে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের ওপর। প্রার্থী চূড়ান্তে এরই মধ্যে লন্ডনে সাক্ষাৎকার দিতে ডাক পেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এরপর পর্যায়ক্রমে ঢাকা দক্ষিণ থেকে ইশরাক হোসেন খোকা ও চট্টগ্রাম থেকে শাহাদাৎ হোসেন ডাক পাবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

রবিবার (১৭ নভেম্বর) লন্ডনে সাক্ষাৎকার দিতে রওনা দিচ্ছেন মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। পর্যায়ক্রমে বাকিরাও যাবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা উত্তরে গত নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাবিথ আউয়াল। গত আগস্টে তাকে টেলিফোন করে প্রস্তুতি নিতে বলেন তারেক রহমান।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণের বেশিরভাগ ভোটারই স্থানীয় বাসিন্দা বলে তাদের মধ্য থেকেই প্রার্থী করতে চায় দলের হাইকমান্ড। তবে স্থানীয় বাসিন্দা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বা তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের নির্বাচন করার আগ্রহ নেই।

এই হিসেবে বিএনপি থেকে এবার টিকেট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সাদেক হোসেন খোকার পুত্র ইশরাক হোসেন খোকার। মেয়রপ্রার্থী হিসেবে লড়তে এরই মধ্যে আগ্রহও প্রকাশ করেছেন তিনি। ইশরাক বলেন, দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি নির্বাচনে লড়ব। আমার বাবা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। তাই বাবার অভিজ্ঞতাকেও আমি কাজে লাগাতে পারব।

জানা যায়, পুরান ঢাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার। তার এমন জনপ্রিয়তার পিছনেও রয়েছে একটি বিশাল ভূমিকা। ১৯৯০ সালে ভারতে কয়েকশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয় কট্টরপন্থি হিন্দুরা। এতে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শুরু হয়। সেই রেশ এসে কিছু পড়ে বাংলাদেশেও। বিশেষ করে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা ঘটে। কিন্তু সে সময় সেই দাঙ্গা রুখে দেয় সাদেক হোসেন খোকার প্রতিরোধ ও দৃঢ় নেতৃত্ব। তার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে পুরান ঢাকায় ভারতের সেই ঘটনার আঁচ তেমন একটা পড়েনি। এমন ভূমিকা নিয়ে পুরান ঢাকাবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেন খোকা। আর এ কারণেই পরবর্তীতে পুরান ঢাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান বিএনপির সিনিয়র এই নেতা। তার সেই ভূমিকা আজও মনে রেখেছে পুরান ঢাকার হিন্দু সম্প্রদায়।

তার এই জনপ্রিয়তা দেখা যায় ১৯৯১ সালের নির্বাচনে। ওই সময় ঢাকায় বিএনপির ভরাডুবির মধ্যেই ঢাকা-৭ আসন (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় এসেছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।

এরপর ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকা মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।

বিএনপির জনপ্রিয় এই নেতা গত ৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনির ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তার মৃত্যুতে ঢাকায় শোকের ছায়া নামে। লাখো মানুষের ঢল দেখা যায় প্রয়াত এই নেতার জানাজায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির বেশিরভাগ অংশই যেহেতু পুরান ঢাকার আওতাধীন কাজেই আসন্ন নির্বাচনে তার পরিবারের কেউ লড়াই করলে জনগণের সমর্থন বেশি পাওয়ারই সম্ভাবনা থাকবে। এছাড়া সাদেক হোসেন খোকা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। এ হিসেবেও পারিবারিকভাবে খোকার পরিবারের প্রতি থাকবে আলাদা দৃষ্টি। এই হিসেবে বিএনপি থেকে এবার টিকেট পেতে পারেন খোকা পুত্র ইশরাক হোসেন খোকা।

তবে দক্ষিণে মেয়র পদে আলোচনায় আছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। তার ঘনিষ্ঠদের কাছে মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। দলের নীতিনির্ধারকদের কারও কারও সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন সোহেল। সম্প্রতি মহানগর দক্ষিণের একাধিক সভায়ও নেতাকর্মীরা তাকে মেয়র পদে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন। তবে পুরো বিষয়টি হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান হাবিব উন নবী সোহেল।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, সব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সে মোতাবেক সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও যাবে।

সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন এই সম্পর্কে তিনি বলেন, কারা প্রার্থী হবেন তা নিয়ে দলের একটি সিদ্ধান্ত আগেই থাকে। এবারও সে রকম প্রস্তুতি তো আছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ হয়েছে, তাদের তিনি তার পছন্দের প্রার্থীদের নাম জানিয়েছেন।

ঈদের আগে তারেক রহমানের নির্দেশে দুই মেয়রপ্রার্থী তাবিথ ও ইশরাক বাড্ডায় গণপিটুনিতে নিহত নারী তাসলিমা বেগম রেনুর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের ঈদ উপহার দেন। এর মাধ্যমে তারেক রহমান তার দুই প্রার্থীর ব্যাপারে নেতাকর্মীদের কাছে বার্তা দিয়েছেন।

নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয় নিশ্চিত। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছিল। তখন দলের নেতাকর্মীদের অধিকাংশ হয় কারাগারে নইলে পলাতক ছিল। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নেতাকর্মীরা জামিনে আছেন। আগাম প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। তাই নির্বাচন মোটামুটিভাবে স্বচ্ছ হলেই জয়ী হবেন তারা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটিতে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রাথমিক নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যক্রম করেছেন ইশরাক। ঈদের দিন বিকালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযানেও অংশ নেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে ইশরাক হোসেন বলেন, এ সরকারের অধীনে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। আগামী সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- এটিও মনে করি না। তারপরও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করতে আমি প্রস্তুত।

তিনি বলেন, আমার বাবা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। আমিও প্রকৌশলী। ঢাকাকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি। আমি নিজেও যানজট নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তাই বাবার অভিজ্ঞতা আর আমার পড়াশোনাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক ঢাকা গড়তে পারব।

অন্য দিকে তারেক রহমানের নির্দেশের পর উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মহানগর ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন তাবিথ বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া কয়েক দিন আগে তাবিথকে নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আগুনে পুড়ে যাওয়া মিরপুর-৭ ঝিলপাড় চলন্তিকা বস্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তাবিথ আউয়াল বলেন, গতবার প্রার্থী ছিলাম। নির্বাচনের পর থেকেই উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এখনো করছি। নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুত।

অন্য দিকে চট্টগ্রামের সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, দল নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি প্রার্থী হবেন। প্রস্তুতির কোনো সমস্যা নেই। তবে অতীতে যেভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে তা বন্ধ করতে হবে।

সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২০ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি অথবা শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই লক্ষ্যে চলতি বছর নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার কথাও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

ওডি/এআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড