• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ডেঙ্গু বিষয়ে যে সচেতনতা ও যা জানা দরকার

  অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন হাওলাদার

০৪ আগস্ট ২০১৯, ১৩:২৪
বাকৃবি
ছবি : প্রতীকী (ইনসেটে লেখক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন হাওলাদার)

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ইত্যাদি ভাইরাস কারণের রোগগুলো মশা বাহিত। এছাড়া ম্যালেরিয়াও মশা বাহিত অর্থাৎ মশা এই রোগগুলোর ভাইরাসকে বহন করে বাহক হিসেবে কাজ করে।

তবে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ইত্যাদি ভাইরাস এডিস মশার কামড়ে হয়। দুটো প্রজাতি এডিস ইজিপ্টাই এবং এডিস এলবোপিকটাস বাহক হিসেবে কাজ করে। গতবছর চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ মারাত্নক আকার ধারণ করেছিল আর গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবার ডেঙ্গু সারা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। মোটা দাগে এই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা রোগগুলোর ব্যবস্থাপনা দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

এক. প্রতিরোধ ব্যবস্থা অর্থাৎ আগে থেকেই প্রতিরোধ করা যাতে রোগ না হতে পারে। দুই. প্রতিকার ব্যবস্থা অর্থাৎ রোগ হওয়ার পরে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা।

বাহক বাহিত রোগের ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সবচেয়ে উত্তম এবং কার্যকারী। মনে রাখতে হবে মশার আক্রমণ হতে রক্ষার জন্য শর্টকাট কোনো পন্থা নেই। সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। আমি এখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছি।

আসুন দেখা যাক কী কী পদক্ষেপ আমরা নিতে পারি :

ক) প্রত্যাহিক ব্যবস্থাপনা বা স্বল্প মেয়াদী কার্যক্রম : ১. বেশিরভাগ মশাই পানিতে বিশেষ করে জমাটবদ্ধ পানিতে ডিম পারে। এগুলোই মশার প্রজনন স্থান। আপনার বাসার আশেপাশে এবং ভেতরে ফুলের টবে, টায়ারে, শুকনো পাতা, প্লাস্টিক বোতল, ভাঙ্গা হাঁড়ি, ড্রাম, চৌবাচ্চা, গর্ত, ইত্যাদিতে পানি জমে থাকলে প্রতি দু-একদিন পরপর সেগুলো ফেলে দিন। বাসার সকল সদস্যকে এই কাজে সচেতন করুন এবং সম্পৃক্ত করুন। ২. স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত করে ১নং বর্ণিত কাজ নিয়মিত করুন। ৩. মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফুল স্লিভ কাপড় পরিধান করুন। দিনে এবং রাতে ঘুমানোর জন্য মশারি ব্যবহার করুন।

৪. এডিস মশা সাধারণত সকালে (সকাল ১১টা পর্যন্ত) এবং বিকালে (৪টা থেকে ৬-৭টা পর্যন্ত) বাইট বা কামড়ায়। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি সাবধান থাকুন। ৫. মশার পপুলেশন কমানোর জন্য অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করা। এক্ষেত্রে Phenothrin/ methoprene/ পাইরেথ্রিন/ম্যালাথিয়ন/ Temephos/স্পিনোস্যাড গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করা যেতে পারে। কীটনাশক স্প্রে করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্তকর্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া রিপিলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। লেবুর রস/নিমের তেল/ Citronella এর তেল/ ইউক্যালিপটাস গাছের তেল ভালো রিপিলেন্ট হিসেবে কাজ করে।

খ) মধ্য মেয়াদী কার্যক্রম : ১. নিয়মিত মশার (পূর্ণাঙ্গ ও লার্ভা) উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। এক্ষেত্রে ওভিট্রাপ বা এরূপ ট্রাপকে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি সাত দিন পরপর মশা জনসংখ্যা পর্যবেক্ষণ করা। কোনো সময়ে হঠাৎ করে বেড়ে গেলে ঐ সময়ে ঐ এলাকায় দ্রুত ক্রাস প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া। ২.সল্প মেয়াদী কার্যক্রমগুলোকে চলমান রাখা। প্রতিটি এলাকায়/ওয়ার্ডে ছোট টিম গঠন করা যারা নিয়মত এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। এই টিমে অবশ্যই একজন কীট/মশা বিষয়ে অভিজ্ঞ সদস্যকে রাখতে হবে। ৩. প্রত্যকে এলাকাতে ঝোঁপঝাড়, ডোবা, নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা। ডোবা, নালা, ছোট পুকুর ইত্যাদিতে কচুরিপানা, অন্যান্য আগাছা পরিষ্কার করে তাতে কার্পজাতীয় মাছ চাষ করা যেতে পারে। এরা মশার লার্ভাকে খাবার হিসেবে ব্যবহার করে।

গ) দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রম : ১. মশাসহ যেকোনো বাহকবাহিত রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে একটি জাতীয় টাস্ক-ফোর্স গঠন করা। এতে জনপ্রতিনিধি, ডাক্তার, কীটতত্ত্ববিদ অবশ্যই রাখতে হবে। এই কমিটির অন্যতম প্রধান কাজ হবে জাতীয় পর্যায়ে বাহকবাহিত রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি গাইড লাইন তৈরি করা। যেকোনো জরুরি অবস্থায় দ্রুত রেসপন্স করা। ২. মশা দমনে সারা বছরব্যাপী কার্যক্রম নেওয়া। ৩. স্থানীয়ভাবে মশা দমনের জন্য সক্ষমতা অর্জন করা। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ইত্যাদির বন্দোবস্থ করা।

৪. নতুন নতুন উপায়ে মশা দমনে কার্যকর পন্থা উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা ব্যবস্থা করা। আমি Baciilus thuringiensis নামক ব্যাক্টেরিয়া হতে পাওয়া এক ধরনের মশকনাশক প্রোটিনের ওপর কাজ করেছি এবং এরা সফলভাবে কেবলমাত্র মশার ওপরই এরা কাজ করে। এই Baciilus thuringiensis নামক ব্যাক্টেরিয়া উৎপাদন করে স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়া আরও কিছু ছত্রাক আছে যারা মশার ওপর জন্মিয়ে মেরে ফেলে। এই সমস্ত জৈবিক উপায়গুলোর ওপর বেশি জোর দিতে হবে।

৫. মশাসহ প্রায় ৭০ ভাগ পোকা মাকড় Wolbachia নামক একধরনের ব্যকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। এদেরকে ব্যবহার করে মশাকে দমন করার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ৫.পরমাণু শক্তি ব্যবহার করে অনেক দেশেই এসএইটি (SIT-Sterile Insect Technique) প্রযুক্তি ব্যবহার করে মশাকে দমন করেছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিতে পারে। ৬. যেহেতু ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া রোগগুলো ভাইরাস বাহিত এবং এদের কোনো টিকা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, সেহেতু টিকা তৈরির কার্যক্রম নেওয়ার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেওয়া এবং সেই সমস্ত উদ্যোগে বাংলাদেশে বলিষ্ঠ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করা। সর্বোপরি আমাদের সকলকে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য, সাহস, জ্ঞান দিয়ে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা রোগগুলোর মোকাবিলা করতে হবে।

লেখক : ইনসেক্ট বায়োটেকনলজি এবং বায়োপেস্টিসাইড ল্যাবরেটরি, কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড