• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আজ আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী 

ফের মাথা চাড়া দিতে পারে অভিবাসন ইস্যু! 

  আয়াজ উর রাহমান

১৯ আগস্ট ২০১৯, ১২:৪২
এস জয়শঙ্কর
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (ছবি : সংগৃহীত)

অবৈধ অভিবাসন নিয়ে ব্যাপক নড়ে চরেই বসেছে ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার। আর এই ইস্যুতে এবার বাংলাদেশকে ফের একবার চাপ প্রয়োগ করতে পারে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

সোমবার (১৯ আগস্ট) রাতে তিন দিনের সফরে আসছেন ভারতের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মৃত্যুর পর তিনি নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। আর দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর।

এর আগে ২০১৪ সালে সুষমা স্বরাজ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর একই বছরের ২৫ জুন প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকায় এসেছিলেন।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাবে অবৈধ অভিবাসন ও অনুপ্রবেশের বিষয়টি। এই বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করতে পারেন। আলোচনায় আসতে পারে কানেক্টিভিটি, রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানির বণ্টনের বিষয়। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রকাশিত খবরে এসব বিষয় প্রকাশিত হয়।

এছাড়া দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে তার এই সফর। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একাধিক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হতে পারে।

সম্প্রতি নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জয়শঙ্কর। এছাড়া তাজিকিস্তানে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকেও মিলিত হয়েছেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই বৈঠকে অমীমাংসিত তিস্তাসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন ড. মোমেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন জয়শঙ্কর। যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বার বার আশাবাদ ব্যক্ত করলেও মূলত তেমন কোনো সমাধানের পথ বাংলাদেশকে দিতে পারেনি তারা। আর এর অন্যতম কারণ মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ।

গত তিন বছরে উভয় দেশ ৬০টির মতো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া দীর্ঘদিনের পুরনো সীমান্ত ও সমুদ্রসীমা বিরোধের সমাধানও হয়েছে এই সময়ের মধ্যে। তবে তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুটির এখনো কোনো সমাধান হয়নি। তাই তার এ সফরকে কেন্দ্র করে এ বিষয় নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী বাংলাদেশ।

আসন্ন শীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে ঢাকা আসছেন জয়শঙ্কর। টানা তৃতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই হবে শেখ হাসিনার প্রথম ভারত সফর।

আগামী অক্টোবরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য নয়াদিল্লি সফর নিয়েও দুই দেশের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হতে পারে।

সফর শেষে আগামী ২১ আগস্ট নয়াদিল্লি ফিরে যাবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ড. এ কে আবদুল মোমেনও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের আমন্ত্রণে নয়াদিল্লিতে গত জানুয়ারিতে প্রথম বিদেশ সফর করেন।

এর আগে গত ৬ আগস্ট তিন দিনের সফরে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফর করেন। সফরে তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার বিষয়ে তেমন কোনো সমাধান না হলেও সীমান্তের পুরোটাতেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানায় অমিত শাহ্।

বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল উভয় দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোসহ সীমান্তে চোরাচালান, সীমান্তে পাচার, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, জাল মুদ্রা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো বিষয়ে আলাপ আলোচনা।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত বাংলাদেশিদের অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে তা ঠেকাতে সীমান্তে বাংলাদেশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এছাড়া ভারত সীমান্তের পুরোটাতেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে চায় বলে জানিয়েছে।

ভারতের আনা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জবাবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে কোনো বাংলাদেশি ভারতে যায় না। যারা যায় তারা ভিসার মাধ্যমে যায়। এছাড়া তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘আমাদের দেশ থেকে তোমাদের দেশে বেড়াতে যায়, চিকিৎসা সেবা নিতে যায় বা শিক্ষা সফরে যায়। নেক্সটডোর নেইবার (প্রতিবেশী) তোমরা, সেজন্যই যায়।’

সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘আইন অনুযায়ী করা হলে তাতে বাংলাদেশের আপত্তি করার কিছু নেই। জয়েন্ট বাউন্ডারি অ্যাক্ট অনুযায়ী যেভাবে আগে তারা করেছে সেভাবেই বাকিটা করলে আমাদের অসুবিধা নেই।’

এ দিকে অনুপ্রবেশ ইস্যু যৌথ বিবৃতিতে রাখার বিষয়ে ভারত বাংলাদেশকে এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করেছে বলে সফররত বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, অনুপ্রবেশ ইস্যু যৌথ বিবৃতিতে রাখার ব্যাপারে ভারতের দিক থেকে একটা চাপ তৈরি করা হয়েছিল। দিল্লীর বৈঠকে এসব আলোচনা হলেও অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কোনো ঐকমত্য না হওয়ায় কোনো যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়নি। দুই দেশ আলাদা আলাদাভাবে বক্তব্য তুলে ধরেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যদিও অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি এবার বাংলাদেশ এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল না, কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তোলা হয়। তবে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের বক্তব্য গ্রহণ করেনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতকে জানিয়েছেন, ‘অনুপ্রবেশের ব্যাপারে তারা যেটা আমাদেরকে বলছেন, যেটা ওনারা বলতে চাচ্ছেন, যে তোমাদের দেশ থেকে তো বহুলোক আসে। আমি সেখানে বলেছি, আমাদের দেশ থেকে এখন আর অবৈধভাবে যায় না। ভিসা নিয়েই যায়। অবৈধভাবে যাওয়ার কোনো প্রশ্ন আসে না কারণ আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে। প্রবৃদ্ধি বেড়ে গেছে।’

ভারতের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত বছর ২৩ লক্ষ লোক বৈধভাবে গিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তারাই স্বীকার করেছেন, গত বছর নাকি আমাদের ১৪ লক্ষ লোককে তারা ভিসা দিয়েছেন। আর মাল্টিপল ভিসা দেওয়া ছিল। সব মিলিয়ে ২৩ লক্ষ বাংলাদেশের নাগরিক গত বছর ভারত গিয়েছিল।’

এছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে পশ্চিমবাংলায় সামনের বিধানসভা নির্বাচনের সময় সীমান্তে নজরদারির জন্য বাংলাদেশকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘ওনারা (ভারত) বলছিলেন যে, পশ্চিমবাংলায় ইলেকশন হবে, সেই সময় বর্ডারটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমি বলেছি, বর্ডার আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’

অন্য দিকে গত ২৩ জুলাই ভারতের সংসদ লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানানো হয়, ভারতে গ্রেফতার হওয়া অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যায় শীর্ষে এখন বাংলাদেশি মানুষ। পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করে গ্রেফতার হয়েছেন ৯ হাজার ৩২৩ জন বাংলাদেশি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তারা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এখন রয়েছেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, এই পাঁচ বছরে ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে গ্রেফতার হয়েছেন ৫৮৩ জন বাংলাদেশি। অন্যদিকে, মেঘালয় সীমান্তে ২৭০ জন, আসাম সীমান্ত থেকে ৫৯ জন এবং মিজোরাম সীমান্ত থেকে ১৪ জন বাংলাদেশি গ্রেফতার হয়েছেন।

এর আগেও হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ্ ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের বিতাড়িত করা হবে বলে বহুবার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এছাড়া প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে ভারতে ভোটের প্রচারে নেমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ক্ষমতায় এলে তার সরকার অবৈধ বাংলাদেশিদের লোটাকম্বল নিয়ে ফেরত পাঠাবে।

মূলত ভারতের হিন্দু কট্টরপন্থী বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত থেকে মুসলিমদের বিতাড়িত করার নানা ছল চাতুড়ি করে আসছে। দেশটিতে থাকা হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন আরএসএস ইতোমধ্যেই ভারতের মুসলিমদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করে চলেছে। আর এসব বিষয়কে শুরু থেকেই প্রশ্রয় দিয়ে আসছে সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকার। কেননা আরএসএস এরই রাজনৈতিক মঞ্চ হল বিজেপি।

বিজেপির এবারের নির্বাচনের অন্যতম ইশতেহার ছিল প্রতিবেশী দেশের সংখ্যালঘুদের তারা নাগরিকত্ব দেবে। এ ধরনের ইশতেহার সাম্প্রদায়িকতাকেই যে উস্কে দিচ্ছে তারই ইঙ্গিত বলা যায়। আর এমনটা বিজেপির সভাপতি ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্‌ এর বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্যেও প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নির্বাচনের পূর্বে বার বার ঘোষণা দিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশের সংখ্যালঘুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেবেন। আর ভারতে থাকা মুসলিমদের দেশ থেকে বিতাড়িত করবেন।

ভারতের বিভিন্ন নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক বিশ্লকেষকরা বলছেন, মূলত বিজেপির এজেন্ডা হিন্দুত্ববাদী বলে তারা নিজেদের ভোট রক্ষায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের ব্যবহার করার প্রচেষ্টা হিসেবেই এ ধরনের সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নিয়েছে। আর মুসলিমদের বিতাড়নের অন্যতম কারণ ভোটের লড়াইয়ে বিজেপি মুসলিমদের থেকে প্রাধান্য কম পাবে এটাই স্বাভাবিক। আর তাই তারা দেশ থেকে মুসলিম বিতাড়নের ছল চাতুড়ি করছে।

ওডি/এআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড