• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লকডাউন বা কোয়ারেন্টিনই কী সমাধান?

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ এপ্রিল ২০২০, ০৯:২২
সেনাবাহিনী
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী (ছবি : সংগৃহীত)

বাংলাদেশে অন্তত ৩৪টি জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় লকডাউনের বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় লকডাউনের বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে।

করোনাভাইরাসের সর্বশেষ আপডেট জানানোর সময় আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন যে আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে চারটি জেলার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে। আগেরদিন নতুন ৯টি জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের কথা জানানো হয়।

অথচ আইইডিসিআরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শুরুরদিকে নতুন নতুন জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার হার ছিল ধীরগতির। তবে সেসময় আক্রান্ত ব্যক্তি কোন জেলার অধিবাসী, সেই তথ্য জানাতো না সংস্থাটি।

এর কয়েকদিন পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান যে প্রথম তিনজন আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন নারায়নগঞ্জ ও মাদারীপুরের বাসিন্দা। এরপর ২৩শে মার্চ আইইডিসিআর প্রথমবার সাতটি জেলার নাম জানায় যেখানকার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সেই জেলাগুলো ছিল ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মাদারীপুর, কুমিল্লা, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা ও গাজীপুর।

এরপর ৩রা এপ্রিল নতুন করে দুটি জেলায় - রংপুর ও কক্সবাজার - করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের তথ্য জানানো হয়। ৬ই এপ্রিলের মধ্যে মোট ১৫টি জেলায় কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর জানানো হয়। তালিকায় নতুন করে যোগ হয় জামালপুর, নরসিংদী, শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা।

৯ই এপ্রিলের মধ্যে জেলার সংখ্যা বিশ পার করে। তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয় কিশোরগঞ্জ, নীলফামারি, ময়মনসিংহ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ। এর পরদিনই আরো প্রায় ১০টি জেলায় শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী। মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ব্রাক্ষ্ণণবাড়িয়া, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, পটুয়াখালী ও বরগুনায় কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া যায়।

রবিবার আইইডিসিআর জানায় নতুন আরো চারটি জেলায় - ঝালকাঠি, ঠাকুরগাও, লালমনিরহাট, লক্ষ্ণীপুর - শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি। নতুন করে চারটি জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সবাই লকডাউনের মধ্যেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়েছেন

রবিবার আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান নতুন করে চারটি জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সবাই লকডাউনের মধ্যেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়েছেন। যাদের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই গত এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা অথবা নারায়নগঞ্জ থেকে ঐ জেলাগুলোতে এসেছেন।

শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও স্বীকার করেন যে নারায়নগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের গোপনে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে তাদের। নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের অনেকের কর্মস্থলই নারায়নগঞ্জ, কিন্তু মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে কোন কাজ না থাকায় তারা নিজ নিজ এলাকার দিকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কেউ কেউ আবার আশঙ্কা করেছেন যে নারায়ণগঞ্জে তারা যেখানে বসবাস করেন, সে বাড়িতে বা তার আশপাশে যদি কারো দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায় তাহলে হয়তো সে এলাকা থেকে আর বের হতে পারবেন না। সেজন্য তারা গ্রামের বাড়ি চলে যান।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মোশতাক হোসেনের ধারণা যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় সামাজিকভাবে একঘরে করে দেবার প্রবণতা বাড়ছে বলে এটি নিয়ে মানুষের মনে এক ধরণের ভীতি তৈরি হয়েছে। সে কারণে রোগ শনাক্ত হলে বা অনেক সময় উপসর্গ দেখা দিলেও মানুষের মধ্যে পালিয়ে অন্য কোনো এলাকায় চলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে শুধুমাত্র প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব দিয়ে লকডাউন বা কোয়ারেন্টিন পালন নিশ্চিত করা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাস যেন দেশের বিভিন্ন স্থানে না ছড়াতে পারে, তা নিশ্চিত করতে ২৬শে মার্চ থেকে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তিন দফা বাড়িয়ে সেই ছুটির মেয়াদ নেয়া হয়েছে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত।

ছুটি শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা লকডাউন ও জেলায় প্রবেশ বা সেখান থেক বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্তত ১৯টি জেলা কার্যত লকডাউন রয়েছে - অর্থাৎ সেসব জেলা থেক বের হওয়া বা অন্য জেলা থেকে সেখানে প্রবেশ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর আংশিক লকডাউন অবস্থায় রয়েছে ১৬টি জেলা।

কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে শুধুমাত্র প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব দিয়ে লকডাউন বা কোয়ারেন্টিন পালন নিশ্চিত করা যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন মোশতাক হোসেন।

আরও পড়ুন : করোনায় সরকারকে আ স ম রবের তিন পরামর্শ

লকডাউন বা কোয়ারেন্টিনের মধ্যে রোগী দ্রুত শনাক্ত করে তাকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া, তার আশেপাশের মানুষকে কোয়ারেন্টিনে নেয়ার মত পদক্ষেপ নেয়াই যথেষ্ট নয়, আশেপাশের কমিউনিটিকেও সংযুক্ত করতে হবে, বলেন মোশতাক হোসেন।

সূত্র- বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড