• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পোশাকখাত-চামড়া-পেঁয়াজে অস্বস্তির বছর পার

  নূর মামুন

৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৩৬
অস্বস্তির বছর
অস্বস্তির বছর (ছবি : সম্পাদিত)

ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর। একদিন পরেই নতুন বছরের সূর্য উদয় হবে। বিদায় নেবে ২০১৯ সাল। তবে, পুরো বছরজুড়েই পোশাক শ্রমিক, চামড়া, পেঁয়াজসহ নানান কিছু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল ভরপুর। এতে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রী পরিষদে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বাণিজ্যমন্ত্রীর পরিবর্তন। এতে, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে বাদ দিয়ে তার জায়গায় আনা হয় তৈরি পোশাক খাতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যবসায়ী টিপু মুনশিকে।

দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই পোশাক খাত শ্রমিকদের আন্দোলনের মোকাবিলা করতে হয় বাণিজ্যমন্ত্রীকে। কিছুদিন ভালো গেলেও আবারও আলোচনায় আসেন তিনি। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল-উল-আযহায় পানির দরে কোরবানি পশুর চামড়া বিক্রি হওয়ায় সমালোচনায় সম্মুখীন হন তিনি। সর্বশেষ পেঁয়াজের দাম উচ্চ পর্যায়ে যাওয়ায় পদত্যাগ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন টিপু মুনশি।

বছরের আলোচিত ওইসব ঘটনাবলী নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।

আন্দোলনে বাড়ানো হয় পোশাক শ্রমিকদের মজুরি

গত বছরের ২৬ নভেম্বর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। সেই মজুরি গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরির কয়েকটি গ্রেডে বেতন আশানুরূপ বৃদ্ধি না পাওয়া এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে ভাতা কমে যাওয়া নিয়ে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। একপর্যায়ে পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বেতন-ভাতা যৌক্তিকীকরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি যৌক্তিকহারে বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফলে, পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করার জন্য নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার। নতুন কাঠামোতে চিকিৎসা, যাতায়াত, বাড়িভাড়া বাড়ানো ছাড়াও মূল মজুরির সঙ্গে পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করা হয়।

সংশোধিত বেতন কাঠামো অনুসারে ১ নম্বর গ্রেডে ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে মজুরি ছিল ১৭ হাজার ৫১০ টাকা। বেড়েছে ৭৪৭ টাকা মজুরি। ২ নম্বর গ্রেডের মজুরি ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা ধরা হয়েছে। আগে ছিল ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা। বেড়েছে ৭৮৬ টাকা। ৩ নম্বর গ্রেডে ২৫৫ টাকা বেড়ে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা, ৪ নম্বর গ্রেডে ১০২ টাকা বেড়ে ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা, ৫ নম্বর গ্রেডে ২০ টাকা বেড়ে ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং ৬ নম্বর গ্রেডে ১৫ টাকা বেড়ে ৮ হাজার ৪০৫ টাকা মজুরি হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির উপস্থিতিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে মজুরি সমন্বয়ের এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ছিনিমিনি

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ছিনিমিনি ছিল এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার অন্যতম। উপযুক্ত দাম ও ক্রেতা না পেয়ে পশুর চামড়া নদীতে বা মাটিতে পুঁতে রাখেন ভারাক্রান্ত কোরবানিদাতারা। কোনো কোনো এলাকায় ট্রাকভর্তি চামড়া নদীতে ফেলে দিতে বাধ্য হয় লোকজন। এই ঘটনায় দেশের গরিব-মিসকিনরা অন্তত ৫০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়। চামড়া নিয়ে এমন অরাজক ঘটনা সারা দেশের মানুষের মনে ব্যাপক দাগ দেয়। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাতেও ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে।

পেঁয়াজে কান্না ছিল দীর্ঘদিন

ভোক্তাদের রীতিমতো কাঁদিয়েছে এবারের পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমুখী বাজার। ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর এর দাম পর্যায়ক্রমে বাড়তেই থাকে। ২৫-৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ পৌঁছে যায় ২৫০-২৬০ টাকায়। দাম সামলাতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে সরকার। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ঢাকা নগরী ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে।

পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমুখী দামে অনেকে এর ব্যবহার কমিয়েও দিয়েছিল। রান্নায় পেঁয়াজ বাদ দেওয়া বা না খাওয়া নিয়েও আলোচনা উঠে। পরে মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিসর, তুরস্ক ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তার পরও অন্তত দুই মাস হুলুস্থুল অবস্থা ছিল পেঁয়াজের বাজারে।

তবে, এখনো পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হয়নি। এখন মৌসুমি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক হয়নি বাজার। বাড়তি দাম পাওয়ার জন্য অপরিপক্ব পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসায় আবারও বড় সংকটের শঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় প্রায় ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। আমদানি হয়েছে সাত লাখ ৯০ হাজার টন। সব মিলিয়ে পেঁয়াজ ছিল ৩১ লাখ দুই হাজার টন। তবে পচনশীল বলে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। ২০১৮ সালে উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার টনের একটি সরবরাহ ব্যবস্থা থাকলেও এ বছর আগের বছরের চেয়ে আমদানি কম হয়েছে দুই লাখ ৫৫ হাজার টন। আর এই ঘাটতিকে পুঁজি করেই বাড়তি সুবিধা নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু এখনো পেঁয়াজের দাম আগের সেই ২৫-৩০ টাকায় নেমে আসেনি। এখনো দেশি নতুন পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম হলেও ৫০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্ষেতের পেঁয়াজ চুরি

পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় পেঁয়াজ চুরির অভিযোগ উঠে।

উপজেলার মধ্যদীঘলকান্দি গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলী বেপারির ছেলে কৃষক ইয়াসিন আলী জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও তিনি ৪ শতক জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেন। এর মধ্যে দুই শতক জমি থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করেন। অবশিষ্ট দুই শতক জমিতে পেঁয়াজ ছিল। কিন্তু রাতে চোরের দল জমিতে এসে তার জমির পেঁয়াজ তুলে নিয়ে যায়। তবে, ওই এলাকায় আগে কখনো জমি থেকে পেঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটেনি। এবার বাজারে মূল্য বেশি হওয়ায় চুরির ঘটনা ঘটে।

ক্ষেত থেকে প্রায় রাতেই পেঁয়াজ চুরি হওয়ায়, আতঙ্কে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় চাষিরা কুঁড়ে বেঁধে রাত জেগে পাহারাও দিয়েছেন। এ ছাড়াও শিমুলতাইড়, দিঘলকান্দী, মহব্বতের পাড়া, কর্পূর, মূলবাড়ী, ফাজিলপুর, মহিচরণ, বালুয়াহাট, মধুপুর, হরিখালী, পাকুল্লা, চারালকান্দি এলাকা পেঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটে।

গুজবে লবণের দাম দ্বিগুণ

দেশে চাহিদার তুলনায় লবণের উৎপাদন বেশি। বছরের শুরু থেকে লবণ নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকলেও গত ১৮ নভেম্বর হঠাৎ সিলেট মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে, ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন ভোগ্যপণ্যের দোকানে। বাড়তি চাপে নিমিষেই ফুরিয়ে যায় বিভিন্ন দোকানের লবণ।

এক দিনের ব্যবধানে লবণের খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। মাসে এক কেজির চাহিদা থাকলেও অনেকেই ৩ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত কিনে ফেলেন। শুধু তাই নয় কোথাও কোথাও ৩৫ টাকার প্রতি কেজি লবণ ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ফলে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায় দাম।

পেঁয়াজের এই গুজব কান না দিতে আহ্বান জানান সরকার ও ব্যবসায়ীরা। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও তৎপর হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অনেক জায়গা জেল জরিমানাও করা হয়। তবে এই ঘটনায় আলোচনায় আসেননি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

ওডি/নূর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড