• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ছোট গল্প : অপ্রকাশিতব্য

  পীযূষ অধিকারী

২৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:৩০
গল্প
ছবি : প্রতীকী

মুবিন সাহেব হাঁফ ছেড়ে বসলেন, দরদর করে ঘামছে তার বুক। আশপাশে বসা তার ও লুনার পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা অবশ্য তার দিকে এখন খেয়াল করছে না। তারা লুনাকে বুঝাচ্ছে, আর লুনা মাথা নিচু করে আছে। মুবিন জানে, লুনা সহজে সব মেনে নিচ্ছে মানে পরে সব ঝড় তার উপর দিয়ে যাবে।

লুনা হচ্ছে মুবিনের স্ত্র‍ী, দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে তাদের, বিয়ের বয়স এখনো বছর পেরোয় নি, বিয়ের পর ঢাকায় মুবিনের সংসার, নতুন সংসার। বিয়েতে তার অমত ছিলো কিনা মুবিন এখনো বুঝতে পারে নি। বিয়ের কিছুদিনের মাথায় মুবিন দেখলো লুনা যতটা সুন্দরী, ততটাই মিশুক, ততটাই একরোখা, ঠিক ততটাই রাগী। সে এসেই মুবিনের আশেপাশে একটা পরিচিত মহল গড়ে তুলে, বিয়ের আগে তার বাসার পাশে ব্যাচেলর ছেলেরা তার দিকে অবজ্ঞা দৃষ্টিতে চাইতো, এখন রীতিমত সালাম পায়।

দিন বিশেক আগে সামান্য বিষয় নিয়ে লুনা ও মুবিন সাহেবের কথাকাটা হচ্ছে,এরকম সময়ে লুনার নাম্বারে একটা অপরিচিতো কল আসে,মুবিন সাহেব নিজে কল ধরে। কল ধরে সে আরো রেগে যায়।পাশের ফ্লাটের এক ছেলে, ফ্লাক্স নিয়ে দাড়ানো আছে, চা নিবে বলে।অপরিচিত মানুষদের মোবাইল নাম্বার দেওয়া, কথা বলা মুবিন সাহেবের পছন্দ না, তাও আবার তার মত নতুন বৌয়ের। লুনাকে এসব নিয়ে ধমক সুরে কথা বলতেই সে রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে তার মালিবাগের মামার বাসায় চলে যায়। যার ফলাফল উনিশ দিনের মাথায় দুই পরিবার তার বাসায়।

মুবিন সাহেব একবার সবদিকে চোখ বুলালো, সিচুয়েশন তার পক্ষে না দেখে লুনার মামাকে ও তার দুই চাচাকে গাড়িতে তুলে দেবার নাম করে বাসা থেকে বের হয়ে এলো। সে এদিক ওদিক ঘুরে রাত দশটা বাজালো, বাসায় ফেরার ইচ্ছা থাকলেও সাহসে কুলোচ্ছে না। হঠাৎ তার মনে হলো কাল লুনার জন্মদিন, বিয়ের পর প্র‍থম জন্মদিন। পকেটে শতিনেক টাকা আছে, ভুলবসত মানিব্যাগ নিয়ে বের হয়নি সে। শার্টের পকেটে পেলো একটা মোচরানো কাগজ, ভাঙা হাতে লেখা লুনার মোবাইল নাম্বার, তার চাচা প্র‍থমবার লুনার নাম্বারটা টুকে নিতে বলে, সেটা এখনো আছে বলে খুশি হলো, নাম্বার নেওয়ার পর পকেটে রাখতেই তার বুক কাপা শুরু হয়, আশ্চর্য এখনো বুক কাপছে। মানিব্যাগ না নিয়ে আসার বোকামির জন্য নিজেকে কতক্ষন গালি দিলো। তাও কিছু কিনার জন্য মার্কেটে যাবে বলে একটা লোকাল বাসে উঠলো, সে মনে মনে লুনাকে সারপ্রাইজ দিবেই আজ, সে লুনাকে একটা কিছু দিয়ে (ফুল হলে ভালো হয়) বলবে, লুনা যা মনে চায় করবে তাতে তার কোন অমত থাকবে না, কারণ লুনা ভাল থাকলেই তার ভালো থাকা!

বাসে মানুষ বেশী নেই। কিছুদূর যাওয়ার পর বাসে এক মধ্যবয়সী লোক উঠলো, হাতে কয়েকজাতের গোলাপফুল বাধা আটি, কয়েকটা আটি।ফুল দেখে মুবিনের মুখের হাসি ফুটলো, লোকটার সাথে মুবিনের দুতিনবার চোখাচোখিও হল। শেষে মুবিন সাহেব ইতস্তত বোধ করে লোকটির পাশে বসলেন, কথাবার্তা বলে ভাব জমানোর উদ্দেশ্যে।

সহজেই সফল হবে মুবিন সাহেব কল্পনাই করতে পারে নি, কি মিস্টি সুবাস আসছে ফুল থেকে। সে লোভাতুর ভাবে ঘ্র‍াণ নেওয়ার চেস্টা করলো,তার মাথাটা ভারী হয়ে আসছে,চোখ বুজে যাচ্ছে, সে দেখলো লুনা রাগী দৃস্টিতে বসে আছে, পরক্ষনেই দেখলো অভিমানে লুনার চোখ ভেজা, লুনা বেশীক্ষণ রাগ ধরে রাখতে পারে না, মুবিন এখন রাগ ভাঙাতে যাবে, সে থাকতে লুনার চোখ ভিজে থাকবে কেনো, সে দৌড়াচ্ছে, দৌড়াচ্ছে। মুবিন সাহেরের তারপর কিছু মনে নেই।

ঘন্টাতিনেক পর, মুবিনকে অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তার পাশে পায় এক পথচারী। সে পুলিশ কে খবর দেয়, পুলিশ এসে খোজাখুজি করে মুবিনের বুকপকেট এ একটা মুচড়ানো কাগজ পায়, কাগজে একটা মোবাইল নাম্বার, লুনার নাম্বার।

এদিকে লুনা বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, তার জন্মদিন আজকে, সে মুবিনের জন্য একটা উপহার খামে ভরে তার উপরে মোবাইল দিয়ে টেবিলে রেখে দিয়েছে,একটা পার হয়ে যাচ্ছে, এখনো আসছে না, সে মুবিনের সব অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছিলো, লোকটা সহজ-সরল, বোকা। বোকা মানুষের উপর বেশীদিন রাগ করে থাকা যায় না।উপহার দেওয়া, অপরাধের ক্ষমা দুটো জিনিষই একজন ব্যাক্তি পেয়ে কি ভাবলো তা না জানা পর্যন্ত অসস্তি থাকে প্র‍েরকের। লুনার এখন তাই হচ্ছে।

লুনার মোবাইলে কল আসছে বারবার, অপরিচিত নাম্বার। লুনা তার এই জন্মদিনে প্রতিজ্ঞা করছে, সে আর কোন অপরিচিত নাম্বার এর কল ধরবে না, মুবিনের প্র‍তি এটাই তার খামে রাখা উপহার।

নিচে খাম, তার উপরে রাখা লুনার মোবাইলে রিং বেজেই চলছে.....।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড