• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : একটি প্রায় সত্য গল্প

  কামরুন কেয়া

১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:১৪
গল্প
ছবি : প্রতীকী

হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি তোমার দিকে, তুমি বরাবরের মতই আমাকে চিনতে পারছনা। কি একটা ভঙ্গি করে তাড়িয়ে দিচ্ছিলে। কিছুটা অবাকও হয়ত হচ্ছ, এই ভেবে যে আমি সবসময় তোমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকি কেন! কেন তুমি যেখানে যাও ছায়ার মতন তোমার পিছু নেই। তুমি হয়ত মাঝে মাঝে ভাবো, আমার কথা। সত্যিই?

আমার কথা কি ভাবো তুমি! তোমার কাছে তো আমি একটা পশু শ্রেণীর জীব ছাড়া আর কিছুই নই। তাই ভাবার প্রশ্নই আসেনা। অথবা, কিছুটা ভয় পাও হয়ত। আমি বুঝি কিনুর, তোমার মুখের ভাষা আমার কাছে দুর্বোধ্য কারণ, তোমার কাছেই ঘেঁষতে পারিনা কিন্তু তোমার চোখের ভাষা আমি জানি।

আজকের থেকেও বেশি আশ্চর্য হয়েছিলাম সেদিন, যেদিন প্রথম তুমি আমাকে অস্বীকার করলে। আমাকে দেখে ভয়ে, ঘৃণায় কুকরে গিয়ে চিৎকার করে উঠলে। আমি হতভম্ব হয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরে বোঝাতে চাইছিলাম, আমি তোমার কে। আমাকে তোমার ভয় নেই। অথচ, ওই জড়িয়ে ধরাই আমার কাল হয়ে দাঁড়াল।

তোমার শরীর থেকে টপটপ করে লাল রক্ত ঝরতে লাগলো আমি ঠিক যেখানে স্পর্শ করেছিলাম সেখান থেকে। আশ্চর্য না বলো? আমি তোমার জন্য ক্ষতিকর হয়ে গেলাম? সেদিন অনেক্ষণ তোমার ভাইসহ বাড়ির অন্য লোকেরা আমাকে খুঁজে বেরিয়েছিল।

ভাগ্যিস পায়নি, পেলে কি করত বলতো? বাড়ির সামনের লিচু গাছটায় ঝুলিয়ে দিত নাকি? দেওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল আমার। তোমার অদ্ভুত রোগ হল। তুমি আমাকে দেখলেই ভয় পাওয়া শুরু করলে, তোমার বাড়িতেও আমাকে দেখতে, যেখানে আমি থাকতাম না সেখানেও। আমাকে কিসের ভয় বলতো? বাড়ির লোকজন, তোমার জন্য হাজার তাবিজ-কবজ এনে তোমার গলায় হাতে কোমরে ঝুলিয়ে দিল। তাতে যদি তোমার রোগ সারে।

সবথেকে কষ্ট পেয়েছি কিসে বলতো? যখন দেখলাম, আমার হাতের নখ লেগে কি একটু ছিঁড়ে গেছে তার জন্যে তোমাকে এন্টি আমি ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। আর এদিকে আমার ভেতরটা যে এতটা কেটে দিলে কই তুমি নামের ইনজেকশন তো আমাকে কেউ দিলনা। এমন কেন হল বলতো? আমরা তো ভালই ছিলাম সেই পুরনো বাড়িটাতে।

সেই থেকেই তোমার সামনে খুব একটা যাইনা। তবে দুর থেকে দেখি, তোমার চোখ। ওই চোখদুটো-ই শুধু আগের মতন আছে বাদবাকি সব তো বদলে গেছে তোমার! তোমার হাত, পা, তোমার ওমন তুলতুলে গা সব। পাছে তুমি ভয় পাও তাই সাবধানে থাকি আমাকে দেখছো নাকি। একদিন শুনলাম, তোমার পাশের একজন কে বলছিলে আমার কথা। আমার কথা! তেমন কিছুই না তবু আমার পা অবশ হয়ে এল। বলছিলে জানিস আমি যেখানে যাই ওটা আমাকে ফলো করে। আগে খুব ভয় পেতাম, এখন আর ভয় টয় লাগেনা।

এইটুকু কথা, শুধু এই কয়েকটা শব্দ যে তুমি পাশাপাশি বসিয়ে মিলন ঘটিয়ে দিলে মনে হল আমাদের পুনর্মিলন হল সেই কতযুগ আগের বিচ্ছেদের পর। তুমি আমাকে ভয় পাওনা আর? সত্যিই পাওনা? আগে যেমন পেতে না? আগে যেমন আমাকে ছাড়া তোমার চলতো না এখনো কি তেমন হবে! আবার তোমাকে পাবো আমি আগের মতন করে? তারপর, কতদিন তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছি। নতুন নতুন প্রেমে পড়া কিশোরের মতন দাড়িয়ে ছিলাম তোমার কলেজ থেকে ফেরার রাস্তাটায়। তুমি আমাকে দেখ ঠিকই কিন্তু দেখেও কেমন না দেখার ভান কর। কিন্তু সমস্যা কি জানো, তুমি আমার কথা বোঝনা। আমি যদি তোমার সামনে গিয়ে সব বলি, তোমাকে নিজের বলে জাহির করি তুমি বরাবরের মতন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইবে। আর ভাববে, এ কি বলতে চায়। হ্যাঁ, আমি তোমার মনের কথাও বুঝতে পারি।

কিনুর, তোমার আর আমার একটা সুন্দর জগৎ ছিল। তুমি তা ভুলে গেছ। আমি ভুলিনি। আমার নামও তোমার মনে নেই। আমার নাম রনুকি। আমার নাম যদি তুমি এখন শুনতে ভারী অবাক হতে তোমার নামের একদম উল্টো করলে আমার নাম। কিন্তু তোমার নাম তো আর কিনুর নেই। ওরা তোমার নাম রেখেছে হাসনাহেনা। কিসুন্দর ফুলের নামে নাম। যখন কেউ তোমার নাম ধরে ডাকে মনে হয় একপশলা বাতাস হাসনাহেনার সুগন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে গেল। না, তোমার উপর আমার কোন রাগ নেই। একটু অভিমান আছে। আমাদের ভালোবাসা এতটা ঠুনকো ছিলনা যে এত অল্প ঝড়েই উড়ে যাবে। এখানে তোমার দোষ তো নেই। তোমার তো আমাকে না চেনারই কথা ছিল । আমিই তোমাকে চেনাতে ব্যর্থ হয়েছি আমি তোমারকে।

আর তাই আজ আবার তোমার সামনে এসে দাড়িয়ে আছি। শুধু এই টুকু বলতে চাই , তুমি এইযে এত ভালো আছো তার সব প্রার্থনাই আমার। যখন আমরা একসাথে ছিলাম তখনো তাই ছিল। হঠাৎ একদিন কিযে হয়ে গেল, তোমাকেই আসতে হল মানবজনম নিয়ে। আমাকে একলা ফেলে। মানুষ তুমি বোধহয় খুব সুন্দর। আশেপাশের সবাইকে বলতে শুনেছি। আগেও ছিলে তাই। আমাদের প্রজাতিতে সুন্দর বলতে যা বোঝায় তার একদম উপরের আসনে তুমি ছিলে। আজ, কিছু বুঝতে পারছিনা। এইসব বলছি তুমি বুঝতেও পারছনা। আবার ভয় পেয়ে পালিয়েও যাচ্ছনা। তাহলে কি তুমি আমাকে চিনতে পারছো? পারলে তো আমাকে আগের মতন আদর করে কাছে টেনে নিতে। পারছনা হয়ত। অথবা, অবলা জীব ভেবে করুণার ভারে তাকিয়ে আছো। মায়া জিনিসটা তোমার মধ্যে সবসময়ই ছিল।

একি! চলে যাচ্ছো? আমার প্রতি তোমার দয়া এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল? আর কত পূর্ণিমা আমাকে অপেক্ষা করতে হবে বলতো? জানি, তোমার জানা কথা নয়। এ তো আগেই নির্ধারিত ছিল। আর এই জীবন তুমিই নির্ধারণ করে নিয়েছ। একবারও আমার কথা মনে হয় নি তোমার? আমি কিভাবে থাকবো? তোমার কি এই মানব জনমের পরীক্ষা নিরীক্ষাই বেশি পছন্দের ছিল? আমিও তো ইন্টারেস্টিং টাইপ ছিলাম। আমাকে ও তো অনুবাদ করতে পারতে। কেন করলে না। কেন আমাকে অপেক্ষায় রাখলে শুধু বলে গেলে ফিরে আসবো মৃত্যুর পর।

তোমার বাড়ির লোকজন, যারা তোমার এখন খুব আত্মীয় তারা তোমার কিছু একটা অসুখ করলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমি শুধু তখন খুশি মনে আগ্রহী হয়ে তাকিয়ে থাকি, তোমাদের ঘরের ছাদ থেকে। মৃত্যুই একমাত্র তোমাকে আনতে পারে আপনার কাছে। কিন্তু, এখন যেওনা, প্লিজ! আরেকটু থাকো। আমার কথা শেষ হয়নি এখনো। অবশ্য শেষ হবেওনা তোমার এই গিনিপিগের জন্মে।

হাসনাহেনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হ্যাঁ, স্কুল জীবন থেকেই সে বিড়াল অনেক ভয় পায়। এখন পেলেও প্রকাশ করেনা। সে, খেয়াল করেছে সবসময় তার আশেপাশে বিড়াল ঘুরঘুর করে। এই নিয়ে তার কৌতূহল ও আছে কিছুটা। কিন্তু, আজ একটু আগে বিড়ালটা প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার উপর। তারপর অনেক্ষণ ম্যাও ম্যাও করে চিল্লাচিল্লি করছিল।

সে কিছু বুঝতে না পেরে অনেকক্ষণ মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে দেখলো, ওটার চোখে কি নিদারুণ আকুতি। আশ্চর্য, বিড়ালের চোখে এমন আকুতি থাকবে কেন। সে ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু আশেপাশে কাউকে বুঝতে দিলনা। রাস্তায় সবাই যে যার মতন ছুটে চলছে। সেও ছুটে চলল। একবার বা হাতের ঘড়িতে সময়টা দেখে নিল। সময়মত পৌঁছাতে হবে, তানাহলে তার খুবই ইম্পরট্যান্ট একটা ক্লাস মিস হয়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড