• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ছোটগল্প : ভয়ংকর দর্পণ

  মাহবুব নাহিদ

১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:৩০
গল্প
ছবি : প্রতীকী

চট্টগ্রাম থেকে বাসে ঢাকায় ফিরছিলাম। দুপুরে বাসে উঠেছিলাম এই ভেবে যে সন্ধ্যা নাগাদ পৌঁছে যাবো কিন্তু ড্রাইভারের অতিরিক্ত পাণ্ডিত্যের কারণে বাস পৌঁছালো রাত একটা পঁয়ত্রিশে। বাস শহরের মধ্যে যাবে শুনে সায়দাবাদ নামলাম না। সুপারভাইজারকে ডাক দিলাম, সে কাছে আসলো। তাকে বললাম আমি লালবাগ যাবো, আমাকে শাহবাগ নামিয়ে দিবেন। এই সামান্য কথায় তার এত হাসির কারণ বুঝতে পারলাম না তবে সে সারা বাস কাঁপিয়ে হাসি দিলো।

হাসার সময় তার মুখের ভঙ্গিটা খুবই বিশ্রী মনে হলো। সে বললো, ‘কোনো সমস্যা নাই, আপনি যেখানে নামতে চান নামিয়ে দিবো’। তবে আমার কেনো যেনো একটা ভয় ভয় লাগছিলো। সেই ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিলো যখন পিছনে তাকিয়ে দেখি বাসে আমি ছাড়া আর কোনো যাত্রীই নাই। আর ড্রাইভার তখন বাসটাকে উথালপাতাল করে চালানো শুরু করলো। সারা রাস্তা চালালো গরুর গাড়ির গতিতে আর শেষ মুহূর্তে এসে রেসিং কারের মত চালানো শুরু করলো। আমি আর কথা বাড়ালাম না। বাস কয়েক মিনিটের মধ্যে কমলাপুর চলে আসলো। কমলাপুর এসে বাস বামে না গিয়ে সোজা যাওয়া শুরু করলো। আমি তখন নিজের অজান্তেই চিৎকার করে উঠলাম। বললাম, ‘এইদিক দিয়ে কেনো যাচ্ছেন?’

ড্রাইভার পিছন দিকে ফিরে তাকালো, আর বললো, ‘এইদিক দিয়াই যামু। আপনের ভয় নাই আপনেরে জায়গামত নামাইয়া দিমু’। কিন্তু ড্রাইভার আমার দিকে ফিরে তাকাতেই আমার সারা অঙ্গ একদম কেঁপে উঠলো। মনে হলো আমার মধ্যে আমি আর নেই। আমি দেখলাম, ‘সুপারভাইজার গাড়ি চালাচ্ছে’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি তো সুপারভাইজার, আপনি কেনো গাড়ি চালাচ্ছেন?’ উত্তরে সে বললো, ‘এই গাড়িতে আমিই সব, সুপারভাইজার আমি, ড্রাইভার আমি হেলপারও আমি’ এই কথা বলেই সে এসে গাড়ির দরজা খুললো।

গাড়ি তখনো চলছে কিন্তু স্টিয়ারিংয়ে কেউ নেউ। আমি দ্রুত ব্যাগ নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। নেমে কি মনে করে যেনো একবার পিছনের দিকে তাকালাম। দেখলাম স্টিয়ারিঙয়ে যে বসা দরজায় হেলপার হিসেবেও সে দাঁড়ানো আর সুপারভাইজারও একই চেহারার ব্যক্তি। আমি একদম ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে একটা দৌড় দিলাম। এক দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম নটরডেম কলেজের সামনে। বড় এক বাঁচা বেঁচে গেলাম মনে হলো। কিন্তু নটরডেম কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে যেটা বুঝলাম একটা ভুলও হয়ে গেছে, মোবাইল টা ফেলে এসেছি গাড়িতে। আর এখানে কোনো রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না।

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম, কোনো কিছুই নাই রাস্তায়। দুই একটা সিএনজি যাচ্ছে তাও মানুষভর্তি, তারা দাঁড়ানোর কোনো প্রয়োজন করছে না যেনো। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটা অটো রিকসা দেখতে পেলাম, মনে হচ্ছে উড়তে উড়তে আসছে যেনো। আমি হাত দেখাতেই মারাত্মক ব্রেক করে আমার সামনে দাঁড়াল। আমি শুধু কোথায় যাব তা বললাম কিন্তু কত ভাড়া তা নিয়ে কোনো কথাই বললাম না। হুট করে উঠে গেলাম রিকশায়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড