• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম (১২তম পর্ব)

  রোকেয়া আশা

৩১ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:০৫
গল্প
ছবি : প্রতীকী

ফিউদর অস্থির বোধ করছে। তায়ে হি সম্ভবত তাহলে প্রবলেম সলভের সময় শুধু ম্যাথটাই করে। অথবা এমনও হতে পারে, জুলিয়ায় প্রোগ্রাম লিখতে পারে না ছেলেটা। মনে মনে নিজেকে শাপ শাপান্ত করতে থাকে ফিউদর। ওদের প্রত্যেকের ব্যাপারেই ভালো করে খোঁজ নেওয়া৷ উচিৎ ছিলো আগে। বেশি কিছু না, একটু সবার প্রোফাইল চেক করলেও হয়তো জানা যেতো, তায়ে হি জুলিয়া ভাষা জানে কি না।

ভুল একটা হয়ে গেছে। বুঝতে পারছে ফিউদর। তবে সম্ভবত এখনো চাইলে ভুলটা শুধরে নেওয়া সম্ভব। বিদ্যুতের মতো আচমকাই আইডয়াটা চলে আসে ফিউদরের মাথায়। এখন তো সবারই হটস্পট চালু আছে। এই ফাঁকে কোরিয়ার কারো নেটওয়ার্কে বাগটা ঢুকিয়ে দিলেই তো হয়। ইশ্! এই সহজ কথাটা কেন এতক্ষণ মাথায় আসেনি?

ধীরে ধীরে একদম কোণার দিকে চলে যায় ফিউদর। সাথের ফাইলব্যাগটা থেকে ট্যাব বের করে নিজের। ল্যাপটপ ব্যবহার করে না সে। অফিসে এবং বাড়িতে ডেস্কটপ আছে তার। সাধারণ সময়ে ট্যাব দিয়েই চালিয়ে নেয়। দ্রুত চেক করতে থাকে, কার কার হটস্পট চালু আছে। হা জুন, নামটা কোরিয়ান সম্ভবত। নাকি চীনা? দ্বিধায় পড়ে যায় ফিউদর। শালার এই এশিয়ান নামগুলো এত কঠিন আর কনফিউজিং কেন!

বোঝার চেষ্টা করে ফিউদর, নিজে যেই টিমকে গাইড করছে তাদের নামই ঠিকমতো মনে রাখতে পারে না সে ; অন্য টিমের ছেলেদের নাম মনে রাখবে কিভাবে! কয়েক মুহূর্তের দ্বিধা। তারপরই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, যা হয় হবে। এই হা জুন অথবা জুলাই যাই হোক, এর নেটওয়ার্কেই বাগটা ঢোকাবে সে। তিনটা প্রবলেম সলভ করে ফেলেছে টিম কোরিয়া। চতুর্থ প্রবলেমের সলিউশনটা লিখতে গিয়েই অসামঞ্জস্যতাটা টের পায় হা জুন। - তায়ে হি? হা জুনের গলার সিরিয়াসনেসটা বুঝতে পারে সবাই৷ তায়ে হি প্রশ্ন করে, ‘কি হয়েছে?’ - রান করাতে পারছি না। এরর আসছে বারবার। অথচ আমি নিশ্চিত, পুরো প্রোগ্রামে কোন এরর তো দূর, ওয়ার্নিংও আসবে না। অবাক হয় অন্যরা সবাই। পাশ থেকে একজন প্রশ্ন করে, ‘তোমার কি হটস্পট এক্সেস ফ্রি ছিলো? পাসওয়ার্ড দাও নি?’ - পাসওয়ার্ড তো ছিলো, হা জুনের উত্তর। তায়ে হি চুপ থাকে কিছুক্ষণ। এই সিকিউরিটি ভাঙা কঠিন কিছু না। এখানে আসার পর থেকেই ওর মনে হচ্ছে, কোরিয়ার টিমটাকে কেউ স্যাবোটেজ করছে৷ হা জুনের নেটওয়ার্কে সম্ভবত কোন ভাইরাস ঢুকেছে। সাধারণ বাগও হতে পারে। কিন্তু এখন সেসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই৷ সে দ্রুত তার পাশে বসে থাকা তরুণের দিকে তাকায়। - বিউং সেওক, হা জুন আর লিখতে পারবে না। তোমাকেই যা করার করতে হবে। তরুণ মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।

দীপ্ত দ্রুত হাতে কীবোর্ডে টাইপ করছে। এটা ওদের চতুর্থ প্রবলেম। এদিকে সময় বাকি আছে মাত্র আধ ঘন্টা। মাহিরা, মিশু আর তারিকুলের আপাতত কাজ নেই। তারিকুল হলরুমের একদম কোণায় বসে থাকা ফিউদরের দিকে তাকায়। এয়ার কন্ডিশন্ড ঘরে বসেও দরদর করে ঘামছে লোকটা। অদ্ভুত তো! ওইদিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয় তারিকুল। ওদের থেকে কিছুটা দূরে ইন্ডিয়ার টিম। পাঞ্চালী একমনে টাইপ করে যাচ্ছে। চোখে কালো চিকন ফ্রেমের চশমা। চশমাটা থাকায় কিছুটা অন্যরকম লাগছে দেখতে ওকে। পরিচিত কিংবা বহুকাল আগে দেখা কোন একটা মুখের সাথে বোধহয় মিল আছে পাঞ্চালী মৈত্রের। কার? মাহিরাও একই সময়ে ইন্ডিয়ার টেবিলের দিকেই তাকিয়ে। তবে ও দেখছে শিল্পা খুরানাকে। কালো, এবং নিখুঁত গরন শরীরের। মাহিরার নিজের ফিগারও ঈর্ষণীয়, তবে শিল্পার গরন - অবিকল সরস্বতীর মূর্তি। কিন্তু মাহিরার নজর অন্যদিকে। শিল্পার চোখ। কালো চোখ দুটোয় বিন্দুমাত্র দ্বিধা কিংবা ভয়ের লেশমাত্র নেই। গতকালের পর এতদ্রুত এত স্বাভাবিক?

মাথাটা ঝেড়ে ঠিক করে মাহিরা। এইসব কি ভাবছে! শিল্পা দ্রুত ট্রমাটা কাটিয়ে উঠছে- এ তো ভালো কথা৷ ও শুধুশুধু এটা নিয়ে এত খচখচ বোধ কেন করছে! তারিকুল পাঞ্চালীর থেকেও চোখ সরিয়ে নেয়। সামনে থাকা মিনারেল ওয়াটারের বোতলটা খোলে। পানি খায়৷ এখানে কিছু একটা হচ্ছে। কিন্তু কি হচ্ছে তা ই কেউ বুঝতে পারছে না।

টিং করে শব্দটা হতেই সবাই একসাথে চমকে উঠলো। সময় শেষ। দীপ্ত মুখ গোমড়া করে সলিউশন গুলো সাবমিট করে। - রেজাল্ট কখন জানাবে দীপ্তদা? মিশু প্রশ্ন করে। গোলাপি সুতোর কাজ করা ফিরোজা রঙের সালওয়ার কামিজ পরনে। কপালে গোলাপি টিপ, চুল খোলা। হলরুমে ঢোকার পর থেকে প্রতিটা ছেলেই অন্তত একবার করে হলেও তাকিয়েছে মেয়েটার দিকে। মিশুর সহজ কিশোরী মুখের দিকে তাকিয়ে দীপ্ত বলে, ‘জানিনা রে দিদি। বলে দেবে ওরাই।’ মিশুর সাথে কথা বলতে বলতেই দীপ্তের চোখ যায় স্টিফানের দিকে। ব্লন্ড চুলের ছেলেটি সুযোগ পেলেই এদিকে তাকাচ্ছে। সকালে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় মাহিরা আর শাহেদ পিছিয়ে পড়েছিলো কিছুটা। তখন আয়েশা হাসতে হাসতেই স্টিফানের কথা বলছিলো। আয়েশার ধারণা স্টিফানের মাহিরাকে পছন্দ। ক্রাশ ট্রাশ হবে। তখন দীপ্ত তেমন মাথা ঘামায় নি। তবে এখন মনে হচ্ছে ঘটনা সত্যি। মাহিরা কি করছে দেখার জন্য তাকাতে দেখে, মাহিরা ফোন হাতে নিয়ে একমনে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করছে। স্টিফানকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই কিনা, বোঝা যাচ্ছে না। মাহিরা আজ চুল গতদিনের মতো পনিটেইল করে নি৷ খোলাই রেখেছে৷ পরনে রয়েল ব্লু স্কিন জিন্স, আর হালকা সাদা রঙের শর্ট স্লিভ একটা সুতি টপ্স। হ্যান্ড পেইন্ট করা, কাঠগোলাপ আর শিউলি ফুলের৷ বা হাতে একটা স্মার্ট ওয়াচ। মাহিরাকে কি মিশুর মতো সুন্দরী বলা যায়? না বোধহয়। সাধারণ বাঙালি চেহারা। তবে কৈশোরের সহজ ভাবটা মুখে থাকায় বোধহয় দেখতে চলনসইই বলা যায়। স্টিফানের কি এই সহজ কৈশোরটাই পছন্দ? মাইক্রোফোনের শব্দে দীপ্ত সচকিত হয়। সবাইই। লাঞ্চের জন্য বলছে। খাবার এখানেই সার্ভ করা হবে। তবে প্যাকেট লাঞ্চ সবার। লাঞ্চ শেষে রাশিয়ান আইটির ওপর একটা ডকুমেন্টারি দেখাবে। তারপর ফলাফল ঘোষণা করবে। লাঞ্চের প্যাকেটগুলো টিমের নাম লিখে বুথ থেকে নিতে হবে৷ দীপ্ত, শাহেদ, সুমন আর তারিকুল উঠে যায়। বুথে গিয়ে খাবার নিয়ে আসতে। আয়েশা ওদের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে বলে, - দেশের সব ফেস্টে লাঞ্চে এক রাইস, সবজি আর মুরগী খেতে খেতে আমার জীবন বরবাদ হয়ে গেছে। এইখানে অন্তত আমার টেস্ট চেঞ্জ হবে। মিশু আর মাহিরা গম্ভীর মুখে সায় দেয়। যদিও, ওরা অত ফেস্টে কখনো যায় নি। ওদের ভাবভঙ্গী দেখে আয়েশা হেসে ফেলে৷ - একটু বস। ওয়াশরুম থেকে আসি৷ চুল খুলে গেছে আমার। হিজাব খুলে বাঁধতে হবে। আয়েশা উঠে দাঁড়াতেই ওর হাত ধরে ফেলে মাহিরা। - একা যাবা নাকি? - কেন? মাহিরা উত্তর দেয়না। আয়েশা বুঝতে পারে। আগেরদিন ফিমেল ওয়াশরুমেই ইয়ুন দুয়োকে মুমূর্ষু অবস্থায় পাওয়া গেছে। ওদের ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিছুক্ষণ ভাবে আয়েশা। তারপর বলে, - যেকোন একজন আয়। সবাই একসাথে উঠে গেলে সুমনরা এসে চিন্তা করবে। - আচ্ছা, মিশুকে নিয়ে যাও। আমি বড় মানুষ। একাই থাকতে পারবো। গম্ভীর মুখে বলে মাহিরা। ওদের দিকে তখন দূর থেকে দুইজোড়া চোখ লক্ষ্য রাখছে। একজোড়া চোখ ফিউদর স্মিরনোভের। আরেক জোড়া চোখ নীল। আরও ধূর্ত। বুদ্ধিমান এবং স্মার্ট।

(চলবে...)

‘দ্যা গেম’-এর ১১তম পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : দ্যা গেম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড