• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম (১১তম পর্ব)

  রোকেয়া আশা

২৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:৫৬
ছবি
ছবি : প্রতীকী

- স্টিফান, তোমার টিমমেটরা বোধহয় খুঁজছে তোমাকে। মাহিরা স্টিফানকে একটু ঘুরিয়ে ভদ্রভাবে চলে যেতে বলছে, বুঝতে পারে সবাই। স্টিফান কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। মাথা ঝাঁকিয়ে হাসে। তারপর চলে যায়। মাহিরা এরপর দলের বাকিদের দিকে তাকায়। তারপর বলে, ‘এই ফিউদর লোকটাকে দেখেই শয়তান শয়তান লাগে।’ আয়েশাও একমত হয়ে বলে, ‘হ্যাঁ। মিশুর দিকে যেন কিভাবে কিভাবে তাকায় দেখলেই।’ দীপ্ত মাথা নাড়ে। কিছু একটা ঘাপলা আছে। ফিউদর লোক সুবিধার না ঠিক, কিন্তু ইয়ুন দুয়োর ঘটনার সাথে একমাত্র ফিউদরই জড়িত - তা বোধহয় না। মাস্টারমাইন্ড বোধহয় অন্য কেউ আছে। - এই, হয়েছে তোমাদের? মাশা আর কির এসে তাড়া দেয়। ওদের সামনে আর আলোচনা বাড়ায় না দীপ্তরা কেউই। ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মিশুর সাথে আজও সাইডব্যাগ। ল্যাপটপের ব্যাগ আলাদা। হেঁটে বের হওয়ার সময় মাহিরা দাঁড়িয়ে পড়ে। - কি হলো? শাহেদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মাহিরা উবু হয়ে বসে পড়ে। কনভার্সের ফিতা খুলে গেছে মাহিরার। বাকিরা সবাই আগেই বের হয়ে গেছে, শাহেদ তাই চুপচাপ অপেক্ষা করে মাহিরার কনভার্সের ফিতা বাঁধা দেখতে দেখতে। - তুই ফিতা বাঁধতে পারিস না? শাহেদের প্রশ্নে মাহিরা মুখ গোল করে ফেলে। - পারি। কিন্তু প্যারা লাগে। আগে আম্মু বেঁধে দিতো। মাহিরার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় শাহেদের। মাহিরার মা দীর্ঘদিন ধরেই প্যারালাইজড ; জানে শাহেদ। - ফিতা ছাড়া কনভার্স কিনতি তাহলে। মাহিরা মুখ তুলে তাকায়। ফিতা বাঁধা শেষ ওর। - তাই তো! আমার তো ফিতা ছাড়া কনভার্সও আছে। ওটা কেন আনিনি? শাহেদ হেসে ফেলে। - চল, বের হই। ওরা বের হতে যাবে, এমন সময় চোখে পড়লো নাতানিয়াকে। তায়ে হির সাথে ফিসফিস করে কথা বলছে। দুজন কনটেস্টেন্ট যে এখনো যায় নি, সেটা খেয়াল করে নি কেউই । শাহেদ অবাক হয়। তায়ে হি আসলে করছে টা কি? গতরাতে শিল্পা আর আজ নাতানিয়া। ইন্ডিয়ার একজন প্রোগ্রামার আর আজ ইন্ডিয়ার গাইড। ইয়ুন দুয়োর ব্যাপারে কিছু? শাহেদের দৃষ্টি অনুসরণ করে মাহিরাও তাকায় ওদিকে। - কোরিয়ার ওই ছেলেটা না শাহেদ ভাই? মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে শাহেদ। মাহিরা কিছুক্ষণ তাকায়। - আমার কাছে কোরিয়া আর জাপানের সব ছেলেকে দেখতে একরকম লাগে। শাহেদ হাসে। - ফিচার একইরকম তো, তাই। তবে এটা তায়ে হিই। - কিভাবে চিনলা? - ওর নাকের শেপটা দেখ। কিছুক্ষণ ছেলেটার নাকের দিকে তাকিয়ে থাকে মাহিরা। কোন বিশেষত্ব না পেয়ে হাল ছেড়ে দেয়। - ভাই, চলো বের হই। ভ্যানের কাছে গিয়ে দেখে ফিউদর নেই। ফিউদর এসে পৌঁছায় বেশ কিছুক্ষণ পরে। তাড়াহুড়ো করে ছেলেমেয়েদের ভ্যানে উঠিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। কোন বাক্য বিনিময় হয় না তখন তাদের। কির আজও পেছনে বসেছে। ফিউদরের পাশের সিটটা তাই ফাঁকা । রিয়ারভিউ মিররে ভ্যানের পেছনে বসা মানুষদের দেখা যায় না। ফিউদরের মাথায় আইজ্যাকের উপদেশ ঘুরছে। দীপ্ত আর শাহেদের দিকে নজর রাখা দরকার।

বাইরে আবারও ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে। মাথা থেকে আইজ্যাক আর হামাজিয়ান রামকে সরিয়ে ড্রাইভিংয়ে মন দেয় ফিউদর। ভালো কিছু ভাবার চেষ্টা করে। আজ রাতে তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে, তারপর ভ্যালেন্তিনাকে নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যাবে। কোন ভালো ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে যাওয়া যায়। ভ্যালেন্তিনার খুব পছন্দ ইটালিয়ান পাস্তা। এক্সট্রা চিজ দিয়ে। মিনিস্ট্রি বেশি দূরে না, দ্রুতই পৌঁছে গেলো ওরা।

গাড়িটা পার্ক করে ছেলে মেয়েদের নামিয়ে দিলো ফিউদর। না চাইতেও দীপ্তের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো ফিউদরের। একজোড়া গভীর কালো চোখে স্পষ্ট অবিশ্বাস, আর আরেকজোড়া রুপোলী চোখে ধূর্ত চতুরতা। দুজনেই যা বোঝার বুঝে গেলো। যুদ্ধের আভাস। ভেতরে গতদিনের মতো কোলাহল নেই। ইয়ুন দুয়োর ঘটনাটার ধাক্কা উঠতে পারে নি সমবেতরা। কোরিয়ার টিম ছয়জন নিয়েই কন্টেস্টে চালিয়ে যাবে ; ইভানের ঘোষণা শুনে সবাই জানতে পারলো৷ - তাহলে, আমরা এখন প্রবলেমগুলো দিয়ে দিচ্ছি। মোট পাঁচটা প্রবলেম সলভ করবেন আপনারা, জুলিয়া ভাষায়। এবং সময়, তিন ঘন্টা। হলরুমে গুঞ্জন ওঠে, মাত্র তিন ঘন্টায় পাঁচটা প্রবলেম? কোরিয়া চুপ। যেন সময় কম দেওয়া নিয়ে ওদের কোন। মাথাব্যথাই নেই। একজন সদস্য কম থাকলেও না। দীপ্ত সিরিয়াস কণ্ঠে বলে, ‘মাহিরা, মিশু, ম্যাথ গুলো করে দে। দ্রুত। মাহিরা, তুই প্রথম তিনটা নে, মিশু শেষ দুইটা।’ কিশোরী দুজন মাথা নেড়ে সায় দেয়। তারিকুলকে পাজল সলভে লাগিয়ে দেয় দীপ্ত, সাথে শাহেদকেও। জানে না, কতগুলো প্রবলেম সলভ করতে পারবে। ফিউদর হলরুমের এক কোণ থেকে কোরিয়ার টিমের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই টিমটাকে ওর স্যাবোটেজ করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে? ওরা কোনভাবে যদি তিনটা প্রবলেমও সলভ করে ফেলে তাহলেও পয়েন্ট টেবিলে ভালো অবস্থানেই থাকবে।

তায়ে হি টিমের লিড নিয়েছে। প্রত্যেকের মুখ নির্বিকার। অস্বস্তিতে পড়ে যায় ফিউদর। একটা ছোট বাগ সে তৈরি করেছে গতরাতে ; হোটেলে গিয়ে তায়ে হির ল্যাপটপে হটস্পট চালু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলো। হটস্পট চালু হতেই নেটওয়ার্কটায় বাগটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। অন্তত এমনটাই মনে হচ্ছিলো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তায়ে হি ল্যাপটপ বেরই করছে না। ম্যাথ করছে। এই পরিশ্রম যদি পুরোটাই পানিতে যায় আর কোরিয়া যদি নকআউট লেভেলে পৌঁছে যায়, তাহলে ফিউদরের কি হবে সে জানে না। হামাজিয়ান রামকে সে ভয় পায়। লাইভ ভিডিওর সেই ছেলেটার বিভৎস আত্মহত্যার পেছনে কোন না কোনভাবে হামাজিয়ান রামের হাত আছে। ফিউদর নিশ্চিত এ ব্যাপারে। তাকে ফিউদর চটাতে চায় না।

কিন্তু তায়ে হি যদি প্রবলেম সলভের জন্য লেখা শুরু না করে তাহলে ফিউদরের এই পুরো চেষ্টাটাই মাঠে মারা যাবে। - একটু তো প্রোগ্রাম লিখো বাছা! তায়ে হির উদ্দেশ্যে মনে মনে বিরবির করে ফিউদর।

(চলবে...)

‘দ্যা গেম’-এর ১০ম পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : দ্যা গেম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড