• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় (পর্ব- ১৩)

হিমালয় ভাইয়ের অসাধারণ অ্যানালিটিকাল অ্যাবিলিটি রয়েছে

  অধিকার ডেস্ক    ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:৫২

উপন্যাস প্রকাশন
ছবি : সম্পাদিত

একজন ব্যতিক্রমী মননের মানুষ মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়। ব্যতিক্রমী তার লেখার ধারা। কেউ কেউ মনে করে তিনি বিচিত্র রঙের গল্পকার। কারও কাছে সুচিন্তিত সমালোচক, আবার কারও কাছে সূক্ষ্ম বিশ্লেষক। অনেকের কাছে অবশ্য তিনি বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেট বোদ্ধা হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি তিনি পাঠক মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছেন ‘নামহীন দামহীন’ শীর্ষক বিশ্ব ব্যতিক্রমী এক আত্মজীবনীর মাধ্যমে। আসলে কেমন মানুষ হিমালয়? কাছের মানুষদের চোখে তার ব্যক্তিত্ব কেমন? ব্যতিক্রমী চিন্তার এই মানুষটিকে নিয়ে লিখেছেন তার সঙ্গে কিংবা আশেপাশে থাকা কিছু নিকটবর্তী মানুষ। তাদের বলা কথাগুলো নিয়েই ‘উপন্যাস প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘দৈনিক অধিকার’ এর ধারাবাহিক আয়োজন, ‘আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়'

আজ প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক এ আয়জনের ১৩তম পর্ব। এ পর্বে লেখক হিমালয়কে নিয়ে লিখেছেন- রকমারি ডট কম এর কর্মকর্তা আইরিন সুলতানা

প্রথম পরিচয় বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে। কাছের একজন একটি বইয়ের ফ্ল্যাপ পড়তে দিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলো ‘এটা পড়ে বলতে হবে লেখক কেমন মানুষ?’। সে আবার হয় নাকি? শুধু বইয়ের ফ্ল্যাপ পড়েই একটি মানুষ সম্পর্কে দুম করে কিছু বলা যায়? তবুও একখানা মন্তব্য দিলাম। লেখা পড়ে তখন আমার মনে হয়েছিল লোকটা বেশ কাঠখোট্টা। এরপর ঘটনার ওখানেই সমাপ্তি...

বেশ কয়েক বছর পর। অন্যরকম গ্রুপে ইন্টারভিউ দিতে এসে টেকো মাথার এই লোকটার সাথে দেখা। গতানুগতিক কোনো পরীক্ষা নয়। যেহেতু কন্টেন্ট রাইটার নিয়োগ হবে তাই অদ্ভুত কিছু বিষয় নিয়ে লিখতে দেয়া হলো। আমার যতদূর মনে পড়ে পরীক্ষা হিসেবে নয়, সেদিন বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছিল বলে একরকম আনন্দ নিয়ে লিখেছিলাম।

এরপর ইন্টারভিউ শেষে যেদিন প্রথম জয়েন করতে এলাম সেদিন দেখি আমি ছাড়া আর কেউ নেই। অবাক হলাম খুবই। হিমালয় ভাইয়া খুব আফসোস নিয়ে বলেছিলেন আরও একজনকে ডেকেছিলেন তবে তিনি কথা রাখেননি। পালিয়ে বেঁচেছেন।

যাইহোক অবশেষে এই টেকো মাথার অদ্ভুত লোকটা আমার নিয়মিত মেন্টর হলেন। এবং পুরো এক বছর তার সাথে কাজ করেছি।

কথাগুলো কেমন স্মৃতিচারণ মনে হচ্ছে। নিজের কথাই বেশি বলছি। অথচ লিখতে বলা হয়েছে আমার চোঁখে তিনি কেমন সেটা নিয়ে।

এবার আসা যাক তার সাথে আমার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল। প্রথমটায় কোনো কারণ ছাড়া বেশ ভয় লাগত। হয়তো আমার ইনট্রোভার্টনেস এবং তার গম্ভির ভঙ্গি এর জন্য দায়ী। কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম আসলে লোকটা কাঠখোট্টা, একটু ঠোঁটকাটা হলেও ভালো মানুষ, মজার মানুষ। কাজ করতে করতে হিমালয় ভাইয়াকে দেখতাম একেকজনকে একেক নামে ডাকছেন। পঁচানোর ঢং গুলোও নানান রকম। কেউ একবার ভুল করলে তাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেটা মনে করিয়ে দেয়া জীবনের একমাত্র লক্ষ্য তার। তবে আমার কেন যেন মনে হতো উনি একই কথা বারবার করে বলছেন।

হয়তো প্রয়োজন নেই কিংবা তেমন মজার মুডেও নেই তবুও একজনকে আগে যেসব কথা বলে পঁচাতো তাকে আবার একই কথা এবং ডায়লগ দিয়ে পঁচাচ্ছে। কেন যেন মনে হতো কাজটা সে ইচ্ছাকৃত করতো না। মানুষ অন্য কোনো চিন্তায় থাকলে এবং পুরোপুরি অন্যমনস্ক থাকলে আপনা আপনি এক কথা বারবার বলে শুধুমাত্র কথা চালিয়ে যাবার জন্যে। একান্তই আমার অবজারভেশন। অমত থাকতেই পারে।

হিমালয়

মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়

হিমালয় ভাইয়ার একটি বিষয় আমার বেশ ভালো লাগে। তা হলো সত্য অনুভূতির প্রকাশ। যেমন কোনো কিছু তার খুব ভালো লাগলে বা পছন্দ হলে আবেগ এবং এক্সাইটমেন্ট ধরে রাখা তার জন্য খুব মুশকিল। যে কোনো বাচ্চাও তখন তার এক্সাইটমেন্ট ধরে ফেলতে পারবে। অথচ বেশিরভাগ মানুষ ভালো লাগা এবং অনেক কষ্ট পাওয়ার অনুভূতিগুলোর মধ্যে এক ধরণের পরিমিতি বোধ রাখতে চায়। প্রয়োজনে কিছুটা নিজের মধ্যে রাখে আর কিছুটা অভিনয় করে। তবুও লোকসমাজে ব্যালেন্স থাকা চাই।

আরও যে গুণটি মুগ্ধ করে তা হলো প্রশংসা বা সমালোচনা যাই করুক না কেন তা হয় একেবারেই নির্ভেজাল, ভনিতাহীন। বরাবরই লোকটা আমার সমালোচনা করে এসেছেন তবুও যখন সামান্য প্রশংসা করতেন তখন মনে হতো এটাই আসল। আর এই প্রশংসাটুকুই উনি মন থেকে করেছেন। যেখানে কোনো মন ভালো করা কথা নেই। নিরেট প্রশংসা।

এবার আসি সেই কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যে যা দিয়ে হিমালয় ভাইয়া সবার কাছে হিমালয়সম হয়ে উঠতে চান। আমার নিজের অভিজ্ঞতা এ বিষয়ে সামান্য। যতটা শোনা সব লোকমুখে এবং ফেসবুকে। দুঃখের সাথে বলতে হয় তার বিশাল ফেসবুক পোস্ট পড়ার ধৈর্য্য আমার কোনোদিনও হয়নি। তবুও কালেভাদ্রে একটা দুটো পড়েছি আর ভেবেছি মানুষ এতদূর কীভাবে চিন্তা করে? কীভাবে এতো গভীরভাবে ভাবতে পারে?

আগের পর্ব পড়তে : হিমেল একজন “ইন্টারেস্টিং” মানুষ

লোকটা এতো লেখালেখি করেছেন অথচ তাই নিয়ে কোনো কথা না বললে যে পাপ হবে। যদিও আমার গণ্ডি তার নামহীন শেষ বইটির ২০০ পাতা আর দু একটি ফেসবুক পোস্ট পড়া পর্যন্ত। তবুও যতদূর পড়েছি তাতে ঘুরে ফিরে সেই একই বিন্দুতে এসে মিলছে। অসাধারণ অ্যানালিটিকাল অ্যাবিলিটি। বাংলাদেশের খেলা তো আছেই সাথে নায়ক, গায়ক, লেখক সকলের শেকড় পর্যন্ত গিয়ে ছাড়বেন। শুধু শেকড়েই থেমে নেই, রীতিমত শেকড়ের ইতিহাস ও চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বেন। এতো ডাইমেনশনেও ভাবা যায় তাকে না দেখলে বুঝতাম না। সম্প্রতি তার একটি লেখা পড়েছিলাম জেমস কে নিয়ে। ইদানিং বেশিরভাগ মানুষ আবার লিখছেন আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে আমি হাসান কে নিয়ে তেমন কোনো লেখা পাই না কখনো। অথচ সে আমলে এই হাসানের গান আমার বেশ ভালো লাগতো...

অন্যরকম গ্রুপে তিনি সবসময় রিক্রুটমেন্ট প্রসেসের সাথে থাকতেন। এর একটা বড় কারণ হতে পারে মানুষের সাইকোলজি তিনি খুব ভালো বুঝতে পারতেন। অনেকের কাছে হিমালয় ভাইয়ের উদ্ভট টাস্ক দেয়ার কথা শুনেছি। নিজে কখনো এই টাস্ক করিনি কিংবা দেখিওনি। অফিসে তার রুম আলাদা ছিল। সে হয়তো কেউ একজনের সাথে কথা বলছে তখন আমি গিয়েছি কোনো কাজে। হয়তো অনেক্ষণ বসে থাকতে হচ্ছে। তখন আমি অনেক মনযোগ দিয়ে ওনাদের কথোপকথন শুনতাম। বেশিরভাগটাই মজার হতো। তবে আমার খুব ইচ্ছে তিনি যখন কারো ইন্টারভিউ নেন বিশেষ করে রিক্রুটমেন্ট এর সময় তখন কেমন প্রশ্ন করেন, কীভাবে মানুষটার সাইকোলজি বুঝতে পারেন তা দেখার।

অনেক প্রশংসা হয়ে গেল এবার একটু সমালোচনা করি। প্রেডিকশন বিষয়টি ভালো। ভালোভাবে প্রেডিকশন করতে না জানলে ভবিষ্যতের জন্যে প্রস্তুতি নেয়া যায় না। তবে হিমালয় ভাইয়ের দুমদাম প্রেডিকশন করার বিষয়টি অনেকটা জুয়া খেলার মত আনন্দ দেয় তাকে। অন্তত আমার তাই মনে হয়। প্রেডিকশন মিলে গেলে বেশ আনন্দ পান এবং সকলকে সেটা দেখাতেও পছন্দ করেন। আবার না মিললেও বিষয়টাকে ডোন্ট কেয়ার ক্যাটাগরিতে ফেলে দিয়ে শান্তি বোধ করেন। ওনার নামহীন বইটি পড়ার পর আমার যে বিষয়টি জোরালোভাবে মনে হলো সেটা হচ্ছে নিজের প্রশংসা নিজে করার চর্চা। নিজের প্রশংসা অবশ্যই দোষের না। কিন্তু বিষয়টা আমার ভালো লাগে না। পছন্দের মানুষদের তাই এমন চর্চা করতে দেখলে খারাপ লাগে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে নিজেকে উদ্ভট হিসেবে মানুষের সামনে প্রকাশ করা। এটা সমালোচনা নয় তবে আমার বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। আমার মনে হয়েছে এখানে উদ্ভট কাজ করাটা তার মূল উদ্দেশ্য নয় অন্যেরা কী ভাবছে সেটা জানাই মূল উদ্দেশ্য। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে যখন তিনি আমার বিয়েতে হাঁস ও কবুতর উপহার নিয়ে এসেছেন। ভীষণ ভালো লেগেছিল আমার। খুশি হয়েছিলাম অনেক। দুদিন পর যখন তাকে ধন্যবাদ জানাতে যাই। তখন তার প্রথম প্রশ্ন ছিল এই উপহার পেয়ে অন্যদের প্রতিক্রিয়া কী?

পুরো এক বছর অন্যরকম গ্রুপে কাটিয়ে চলে এলাম রকমারি ডট কম এ। এখানে এসে সবাই আমার কাজের আগে প্রথমে হিমালয় ভাইকে বিশ্বাস করে। অর্থাৎ আমি কিছু পারি বা না পারি হিমালয় ভাইয়ের হাত ধরে যেহেতু রিক্রুটমেন্ট হয়েছে সেহেতু চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। নিজের উপর বিশ্বাস না থাকলেও এই লোকটার ওপর আসলেই বিশ্বাস আছে আমার। যখন তার সাথে প্রথম কাজ করা শুরু করি তখন প্রচণ্ড মানসিক চাপ দেয়া থেকে শুরু পঁচানো কোনোটাই বাকি রাখেননি তিনি। মাঝে মাঝে খুব রাগ হতো। কিন্তু একটা সময় গিয়ে বুঝলাম আমাকে দিয়ে যৎসামান্য যে লেখালেখি হচ্ছে তার অনেকটাই এই টেকো মাথার অদ্ভুত লোকটার অবদান...

বেশি আবেগ হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আমার অবজারভেশন পাওয়ার বেশ নিম্নমানের তাই যতটুকু দেখেছি বুঝেছি ততটুকুই বলার চেষ্টা করেছি। দিনশেষে একটাই চাওয়া খুব ভালো থাকবেন হিমালয় ভাইয়া। আর অনেক ভাগ্য করে এমন মিষ্টি দুটো মেয়ের বাবা হওয়া যায়। ভালো বাবা হয়ে ওদের ভালো রাখবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড