• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় (পর্ব- ১০)

হিমালয় ভাই যে কোনো কিছুর ব্যাখ্যা করে সংখ্যা দিয়ে

  অধিকার ডেস্ক    ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৪৪

উপন্যাস প্রকাশন
ছবি : সম্পাদিত

একজন ব্যতিক্রমী মননের মানুষ মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়। ব্যতিক্রমী তার লেখার ধারা। কেউ কেউ মনে করে তিনি বিচিত্র রঙের গল্পকার। কারও কাছে সুচিন্তিত সমালোচক, আবার কারও কাছে সূক্ষ্ম বিশ্লেষক। অনেকের কাছে অবশ্য তিনি বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেট বোদ্ধা হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি তিনি পাঠক মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছেন ‘নামহীন দামহীন’ শীর্ষক বিশ্ব ব্যতিক্রমী এক আত্মজীবনীর মাধ্যমে। আসলে কেমন মানুষ হিমালয়? কাছের মানুষদের চোখে তার ব্যক্তিত্ব কেমন? ব্যতিক্রমী চিন্তার এই মানুষটিকে নিয়ে লিখেছেন তার সঙ্গে কিংবা আশেপাশে থাকা কিছু নিকটবর্তী মানুষ। তাদের বলা কথাগুলো নিয়েই ‘উপন্যাস প্রকাশন’ এর উদ্যোগে ‘দৈনিক অধিকার’ এর ধারাবাহিক আয়োজন, ‘আমার চোখে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়'

আজ প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক এ আয়জনের ১০ম পর্ব। এ পর্বে লেখক হিমালয়কে নিয়ে লিখেছেন- অন্যরকম গ্রুপের এইচআর টিম মেম্বার তাসাউফ বিন ফারুক। চোখে দেখে কি একজন মানুষকে জানা যায় কিংবা বোঝা যায়? আমার মতে মানুষেকে চিনতে হয় চিন্তা দিয়ে।

হিমালয় ভাইয়ের সাথে পরিচয়ের ছয় বছর পূর্ন হলো কিছুদিন আগে। পরিচয়ের সূত্রটা আগে বলার প্রয়োজন বোধ করছি। তাতে অনেক কাছের পরের বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে সহজেই। অন্যরকম গ্রুপে ইন্টার্নশিপের সুযোগ হয়েছে কিন্তু তার জন্য একটা ইন্টারভিউ দিতে হবে। সেখানে সুবর্ন স্যারের সাথে থাকবেন কোম্পানি সিইও। ঘাবড়ে গেলাম। স্যারকে তো চিনি কিছু সিইও কে তো চিনি না। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে দেখি স্যারের সাথে রং জ্বলে যাওয়া কালো পাঞ্জাবি পরা সিইও বসা।

সিইও সাহেব ছেঁড়া একটি স্যান্ডেল পরে ইন্টারভিউ নিতে এসেছেন। আমি হতাশ হয়ে গেলাম। ঝকঝকে একটা কোম্পানিতে এমন হত দরিদ্র সিইও ঝুটলো কী করে! ইন্টারভিউতে প্রশ্ন যা করার সব সুবর্ন স্যারই করলেন, সিইও শুধু গালে হাত দিয়ে বসে থাকলেন। ইন্টারভিউ প্রায় শেষ এমন সময় সিইও একটি প্রশ্ন করলেন তোমার হবি কি? অবসর কাটাও কি করে? আমি উত্তর দিলাম মুভি দেখি প্রচুর আর শখের ফটোগ্রাফি। ফটোগ্রাফি করি শুনে উনি আমার পোর্টফলিও লিঙ্কটা নোট করে নিলেন। ইন্টারভিউ সেখানেই শেষ।

সেদিন ইন্টারভিউতে সিইও আসতে পারেন নাই। তার বদলে এসেছিলেন হিমালয় ভাই, অন্যরকম গ্রুপে জয়েন করার পর সেটা জানতে পেরেছি। প্রথম প্রথম হিমালয় ভাইয়ের কথা বাত্রা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হতো। যে কারও কাছেই সেটা মনে হবে। হুট করে আপনাকে এমন অপমান করবে যে আপনি কী উত্তর দিবেন এদিক ওদিক খুঁজেও বুঝতে পারবেন না। কিন্তু এটা হচ্ছে তার হিউমারের অংশ।

আপনি একটা কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে গেলেন, আপনাকে প্রশ্ন করা হলো আপনার নাম আরিফ কেন? অন্য কিছুও তো হতে পারতো। স্বাভাবিক উত্তর হয়তো দিবেন বাবা মা নাম রেখেছেন ।ইন্টারভিউ যিনি নিচ্ছেন তিনি আপনাকে বললো ফোন দেন আপনার বাবা কে জিজ্ঞাসা করেন কেন তিনি এই নাম রেখেছেন। ইয়ার্কি মনে হচ্ছে? বাপকে ফোন না দেয়া পর্যন্ত আপনার কিছু নিস্তার নাই।

এই স্ট্রেস নিতে পারলে দ্বিতীয় প্রশ্ন আসতে পারে না হলে ইন্টারভিউ এখানে শেষ। হিমালয় ভাই এভাবেই ইন্টারভিউ নেয়। একজনকে এসাইনমেন্ট দিয়েছিল ৬ ইঞ্চি স্কেল দিয়ে ঢাকা শহরের ওভার ব্রিজের দৈর্ঘ্য মাপতে হবে। আর একজনকে দিয়েছিলো চন্দ্রিমা উদ্যানের গাছ গুনতে। প্রথম দেখাতে এগুলাকে স্রেফ পাগলামি ছাড়া অন্য কিছু মনে হবে না কিন্তু সময়ে ব্যাবধানে এগুলোর ফিলসফিকাল দিকগুলো পরিষ্কার হতে থাকে। নামহীন দামহীন বইয়ে এই ধরনের অনেকগুলো পাগলামির ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

হিমালয়

বাঁ'য়ে মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়, ডানে তাসাউফ বিন ফারুক

নামহীন দামহীন বই মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় সম্পর্কে অনেক কিছুই তুলে ধরেছে। ছয় বছর তার সাথে থেকে তাকে যতটা না জানতে পেরেছি এই বইয়ের ৬০০ পেজ পড়ে তার থেকে ঢের বেশি জেনেছি। তার এনালিটিকাল এবিলিটি আর মনে রাখার ক্ষমতা আমাকে সব সময়ই মুগ্ধ করেছে এখনো করে। রিলেশন বিল্ডিং এর স্টাইল তার ভিন্ন। দত্তক নেবার নেশা তার আছে তবে এর জন্য তিনি এক পয়সাও খরচ করে না। আর দত্তক পরিবারে আমি তার দ্বিতীয় পুত্র। দত্তক যাত্রা শুরু হয় মোরসালিনকে দিয়ে।

আগের পর্ব পড়তে : তিনি মানুষকে ‘স্তর’ দেখান এবং স্তরকে ভাঙতে সাহায্য করেন

সংখ্যা নিয়ে মানুষের যে বাড়াবাড়ি ধরণের আসক্তি থাকতে পারে তাও এই হিমালয় ভাইকে দেখেই জানা। ছোট বেলা থেকে আমার পছন্দের সংখ্যা ছিল ৩। এটা অনেকেরই থাকে। কিন্তু হিমালয় ভাই যে কোন কিছুর ব্যাখ্যা করে সংখ্যা দিয়ে। মানুষের মাঝে সে সংখ্যা দেখে। আমার সংখ্যা ৩৯৭, কারো বা ৩৪ কেউ কেউ আবার ৪ ডিজিটের সংখ্যাও পেয়েছে। অনেক জানতে চেয়েছি এই সংখ্যাগুলো আপনি পান কীভাবে? কিসের উপরে নির্ভর করে? তার উত্তর আমি কোন দিনও পাই নাই। শেষমেশ এই রহস্য বের হয়ে আসে তার নামহীন দামহীন বই থেকে। একটি একটি করে সংখ্যা ধরে মিলিয়ে নেয়া যায়।

এই মানুষটিকে প্রথম থেকেই দেখে আসছি আবেগশূন্য অবস্থায়। আবেগশূন্য বলা ঠিক হবে কিনা তা জানি না, আবেগ বলতে আমরা যা বুঝি হিমালয় ভাইয়ের ভেতর তা কোন দিনও দেখি নাই। পরিচয়ের কিছুদিন পরে জানলাম আরিফা নামে একটা মেয়ের সাথে তার আবেগ লেনদেনের রিলেশন! এই শুনে তো আমি টাস্কি খেলাম, হিমালয় ভাই করছে প্রেম! দুনিয়াতে এও সম্ভব?

আরিফা আপুর চোখে হিমায়ল ভাইয়ের প্রতি আমি যতটা না আবেগ দেখেছি হিমালয় ভাইয়ের ভেতরে তার বিন্দু মাত্র আমি দেখি নাই। কিছুদিন পরেই তাদের বিয়ের দাওয়াত পেলাম। হিমায়ল যে টাইপের মানুষ আমার ধারনা ছিল সে টিশার্ট আর জিন্স পরে না বিয়ে করতে যায়, কিন্তু না চাপে পরে যেমন বাঘ আর হরিণ একই ঘাটে পানি খায়, হিমালয় ভাইও দেখি সেই পন্থায় লাল টাই আর কালো স্যুট পরে বিয়েতে হাজির।

হিমালয় ভাইয়ের মোস্ট ট্রাজিকাল চেঞ্জ আমি দেখি উনিশ আর তেইশ জন্মের পরে। বাচ্চাকাচ্চা তার কোন কালেই পছন্দের ছিল না। কিন্তু তাদের জন্মের পরে হিমালয় ভাইয়ের চেঞ্জ চোখে পড়ার মত। এখন তার দিন দুনিয়ের অনেক কিছুই উনিশ আর তেইশ কে নিয়ে। তার এই চেঞ্জ এর ব্যাখ্যা খুব সহজেই দেয়া যায় বাচ্চাকাচ্চা হলে মানুষ এমনিতেই চেঞ্জ হয়ে যায় কিন্তু চোখ দেখে অন্য কারণ।

উনিশ তেইশ জন্মের পরপরই ভয়ঙ্কর সারভাইবালের ভেতর দিয়ে গেছে। ৩৫ দিন আইসিইউ তে থাকার পরে তারা বাড়ি ফিরেছে। উনিশ তেইশের এই স্ট্রাগল থেকে ঠিকে যাওয়াই তাকে তার মেয়েদের প্রতি আরও আবেগ প্রবণ করেছে বলেই আমার ধারনা। স্ট্রাগল সারভাইভ এই জাতীয় বিষয় হিমালয় ভাইকে উজ্জীবিত করে বারাবর। উনিশ তেইশ যদি দুনিয়াতে আর দশটা বাচ্চাদের মত আসতো কি তাদের প্রতি তাদের বাবার এত আবেগ কাজ করতো? স্ট্রাগল আরিফা আপুও করেছে তার প্রতিও হিমালয় ভাইয়ের আগেব বেড়েছে, যার প্রমাণ এখন মাঝে মাঝে পাওয়া যায়।

চা খানতো আপনি নাকি? কিন্তু একই সাথে দুই হাতে দুইকাপ চা নিয়ে খেয়েছেন কোন দিনও? হিমালয় ভাই পারে, চায়ের প্রতি তার বাজে টাইপের আবেগ, মদ খাবার ট্রাই করে তা হজম করতে না পেরে শেষমেষ উনি চায়ের প্রতি ঝুকেছেন। কিন্তু ডাক্তারের হুমকিতে তার চা পানেও এখন ভাটা চলচ্ছে, তারপরেও বাজারে চায়ের দাম কেন বেড়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না।

আমি মিডিউকার টাইপের মানুষ তাই গভীর ভাবনা খুব একটা আসে না তবে তার আরও একটি দক্ষতা আমাকে ধাক্কা দেয়া তা হচ্ছে শব্দের ব্যবহার। আমি নিজে মাঝে মাঝে লেখার চেষ্টা করি কিন্তু শব্দের খেলায় মাত পারি না কখনই তাই হিংসা হয় মাঝে মাঝেই হিমালয় ভাইকে দেখে।

প্যাশন যে মানুষকে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে শেখায় বা বাধ্য করে তা হিমালয় ভাইয়ের থেকেই শেখা। কিন্তু তারপরও বলি, "আপনার কি মনে হয় না আপনার আর একটু ভালো হওয়া উচিত?"

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড