• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাণ্ডুলিপির অব্যক্ত কথা

পথে পথে আলো বিলিয়ে দেওয়াদের গল্প ‘আলোর ফেরিওয়ালা’

  মুহাম্মদ বরকত আলী

১৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:১৮
কবিতা
প্রচ্ছদ : উপন্যাস ‘আলোর ফেরিওয়ালা’

আমি তখন বেকার বসে বসে সময় কাটাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম, কি করবো কি করবো। এমন সময় একটা অফার পেলাম। শিক্ষকতা করতে হবে। আমাদের পার্শ্ববটি গ্রামে একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। সেখানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার চাকুরি। আহা! কি আনন্দ। এমন একটা সম্মানজনক পেশা আমি হয়তো মনে মনে খুঁজছিলাম।

সেই থেকে আমার এই মহান পেশায় যোগদান। অনেকগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম। নন এমপিও স্কুল। শিক্ষকরা বেতন পান না। কাজে সুবাদে জানতে পারলাম অজানা অনেক তথ্য। আমার মনে হলো লেখা দরকার। কিছু একটা লিখতেই হবে। সবার জানা দরকার। এভাবে সময় যেতে থাকে। এবার আরও একটা চমক এসে হাজির হল আমার সামনে। হঠাৎ একদিন পড়ে ফেলি কবি আশরাফ সিদ্দিকীর বিখ্যাত কবিতা ‘তালেব মাস্টার’। ‘আমি যেন সেই হতভাগ্য বাতিওয়ালা আলো দিয়ে বেড়ায় পথে পথে কিন্তু নিজের জীবনই অন্ধকারমালা।’

এই কবিতাটা আমার হৃদয়ে অসংখ্য দাগ কেটেছে। একজন শিক্ষকের জীবনের করুণ বাস্তব কাহিনি। কবিতার শেষের দিকে তালেব মাস্টার অনুরোধ করেছেন তার জীবন কাহিনি নিয়ে কেউ একটা বই লিখুক। বিশেষ করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি অনুরোধ করেছেন তালেব মাস্টারকে নিয়ে পদ্মা নদীর মাঝি’র মত আরও একটি করুণ বাস্তবতার বই লিখতে। জানি না মানিক বাবু তালেব মাস্টারের কথা শুনেছিলেন কিনা। আমি আর বসে থাকতে পারিনি।

দু’এক কলম লিখতে থাকি। প্রধান শিক্ষকের নিকটে বসি। একান্তে আলাপ করি। জানতে থাকি অজানা সব তথ্য। স্কুল প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কিভাবে চলছে। কেন চলছে। এরপরও আমার দেখা কিছু বাস্তব গল্প। এর মধ্যে পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই নন এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলনের কথা। বিনা বেতনে অবসরে যাওয়া কত হতভাগ্য শিক্ষকের কথা। ইট খোলায় পোড়া মাটির গন্ধ নেওয়ার গল্প। হায়-আফসোসের গল্প।

এখান থেকেই শুরু করি ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ উপন্যাসের বাস্তব গল্প। আমার উপন্যাসের প্রধান চারিত্রে আছেন কাদের গাজী স্যার। কাদের গাজী স্যারে মধ্যে তালেব মাস্টারের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। যুগের পর যুগ চলে গেছে, কত কিছু বদলেছে তবুও তালেব মাস্টারের মত শিক্ষকদের ভাগ্য আজও বদলায়নি। এসকল আলোর ফেরিওয়ালারা মানবেতর জীবন যাপন করেন। অনেক শিক্ষক আছেন যারা সারা জীবন শিক্ষকতা করে বেতনের অপেক্ষায় থেকে থেকে এক সময় বিনা বেতনে অবসরে গেছেন। সেসকল শিক্ষকদের জীবনের গল্প নিয়েই আমার এই উপন্যাস।

গল্প/উপন্যাস বাস্তবতার উপর ভর করে কাল্পনিকের সংমিশ্রণেই লেখা হয়ে থাকে। আমার এই উপন্যাসটিতে মূলত বাংলাদেশের অবৈতনিক শিক্ষকদের জীবন জীবিকা, কমিটির দুর্নীতি, স্কুল পরিচালনা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

হয়তো কোনো একদিন এদেশে একজনও অবৈতনিক শিক্ষক থাকবে না। প্রত্যেক শিক্ষক পাবেন তাদের প্রাপ্ত মর্যাদা ও সম্মানী। কিন্তু তালেব মাস্টার, কাদের গাজী মাস্টারের মত অসংখ্য মাস্টার যারা বিনা বেতনে আলো বিলিয়েছেন নিজেদের সুখ বিসর্জন দিয়ে অসংখ্য সূর্যমুখীদের জীবনে; তাদের মধ্যে অনেকেই আজ দেশের বড় বড় আসনে বসে থেকে দেশ পরিচালনা করছেন। তাদের কি মনে আছে কাদের গাজী স্যারের কথা? তারা যেন মনে রাখে তালেব মাস্টার, কাদের গাজী মাস্টারের মত শিক্ষকদেরকে। যেসকল শিক্ষক বিনা বেতনে অসবর নিয়েছেন তারা অন্তত মানুষের অন্তরে এতটুকু ভালোবাসার জায়গা করে নিবেন। কখনো যেনো তাদের ভুলে না যায়।

আরও পড়ুন- যে গল্প মায়ের

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড