• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তার সাথে অশরীরী দেখা

  মাহবুব নাহিদ

১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:২৮
ছবি
ছবি : নান্দনিকতার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ

মাত্র নিশীথিনী পড়ে শেষ করলাম। কিছুতেই নিজেকে স্থির করতে পারছি না। একদম পাগল হয়ে যাচ্ছি। সারা শরীর ঘর্মাক্ত। চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। মনের প্রচ্ছদ বেয়ে টপটপ করে রক্ত ঝড়ছে। একটা আবছা শরীর আমার আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমায় ভয় দেখাচ্ছে না তবে আমি ভয় পাচ্ছি। একটা চশমা আমার সামনে ভেসে ওঠে। এ কি মিস্যার আলীর চশমা নাকি স্যারের চশমা! আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না। আমি উদ্বেলিত, আন্দোলিত হয়ে যাচ্ছি।

আমি চিৎকার করে কাঁদতে চাই তবুও যেন পারছি না। আমি তার সাথে কথা বলতে চাই। সে কি আমার কথা শুনবে? মনে হাজারটা প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠছে। আচমকা দরজায় একটা বিকট শব্দ হলো। ভয় ভয় লাগছে, তবে এ যে ভয় পাওয়ার সময় নয়। এ তো সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময়। দরজা খুলতে গিয়েও পারছি না। অল্প একটু খোলার পর দরজা যেন আবেশেই আটকে গেলো। তবে একটা চশমার ছায়া আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। এ যে মিসির আলীর চশমা নয়। এ যে স্যারের চশমা। দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে হুমায়ুন আহমেদ।

তারপর আমার অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়ে ওপাশ থেকে একটি লাইন ভেসে আসলো, ‘তুমি কি কিছু বলতে চাও?’

আমি বললাম, ‘আপনার উপন্যাসের নামগুলো দিয়ে প্রেমিকাকে একটি চিঠি লিখেছি। সাথে একটি কবিতা-

বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ফুল হাতে আমি দাঁড়িয়েছিলাম প্রেয়সীর সামনে। তাকে রুপা ডেকেছিলাম, আমি হিমু হতে চাইনি কিংবা মিসির আলীর মত রহস্যময়। শুধু বলেছিলাম আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ। দারুচিনি দ্বীপে সমুদ্র বিলাস হয়তো ভাগ্যে লেখা নেই তবে শ্রাবণ মেঘের দিনে যখন আকাশ জোড়া মেঘ করবে তখন হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম নিয়ে তার সামনে দাঁড়াবো। দূরে কোথাও হারিয়ে যাবো তাকে নিয়ে। লিলুয়া বাতাস আমাদের হারিয়ে নিয়ে যাবে, উড়ালপঙখি হয়ে উড়ে যাবো আকাশে। এই মেঘ, রৌদ্র ছায়া এই বৃষ্টিমালা কিছুই থাকবে না, থাকবো শুধু সে আর আমি।

যখন চারিদিকে তাকিয়ে দেখবো কোথাও কেউ নেই তখন হাতে একগোছা জলপদ্ম নিয়ে বলবো, ‘সৌরভ নাও আর নাইবা নাও আজ এই পৃথিবী তোমার জন্য সাজঘর। আজ এই নির্জন পৃথিবীতে রচিত হবে তোমার আমার স্বপ্নের বাসর। আমার ছেলেবেলায় আমি তোমারেই স্বপ্নে দেখেছি, নিদ্রায় জাগরনে আমি তোমারেই খুঁজেছি। তুমি আমার কাছে অন্য ভুবন এক, তুমি এক মহিয়সী মানবী, তুমিই আমার নীল অপরাজিতা, তুমি আমার স্বপ্নে দেখা হলুদ পরী, তুমি আমার ছায়াসঙ্গী তুমিই আমার মায়ার বাক্স, তুমি আমার গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না, তুমি আমার সকাল বিকাল, তুমিই অপরাহ্ন, কাঠপেন্সিলে তোমার ছবি এঁকেছি, রংপেন্সিলে দিয়েছি রঙ, বল পয়েন্টে লিখেছি আমার প্রেমের নিবেদন আর ফাউন্টেনপেন দিয়ে লিখেছি আমাদের ভালবাসার রোদন ভরা এই বসন্ত।’

দরজার ওপাশে তুমি দাঁড়িয়ে থেকো না, স্বপ্নের ঘরে তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে। ভয়ংকর ভুতুরে এক অন্ধকারে অন্ধকারের গান শুনিয়েছিলে! তুমিই সেই মেয়েটি, তুমিই নিশথিনী। আমার আপন আধার ভেঙে এই আমি সকল কাঁটা ধন্য করে পেয়েছি তোমারে, হারাতে চাইনা তোমায়। তুমিই আমার প্রেম রুপসী, তুমি অন্য এক ভুবন। এসো করো স্নান এই রুপালী জ্যোৎস্নায়, ভালবেসে যদি সুখ নাহি হয় তবে কি হবে এ জীবনে আমার! অপেক্ষার পালা শেষ করে চলো প্রেমের নির্বাসনে, মহুয়া বাতাসে, অচিনপুরে হারিয়ে যাই, চলো ভালবাসায় ভালবেসে ভালবাসার মরনে মরে যাই।

পূর্নিমা কিংবা অমাবস্যায় নয়,

আমি প্রতি রাতেই আকাশের দিকে তাকাই,

হয়তো হলদে রংয়ের হিমু হয়ে কোন এক রুপার খোঁজে।

গৃহত্যাগী হবার জ্যোৎস্না বুঝি আর উঠবে না!

তাতে কি এসে যায়? আশায় তো বুক বাধা যায়।

সেই জ্যোৎস্নাময় রাতের আশায়।

আমার ওই জ্যোৎস্না যেন বালিকা ভুলানো জ্যোৎস্না হয়।

সে যেন নবদম্পতির জ্যোৎস্না হয়,

সেই দম্পতিও যেন আর কেউ নয়,

সেই জোড়া যেন তুমি আর আমিময় ।

সেই জ্যোৎস্না তোমার মুখে পড়বে না যেন,

বরং তোমার চাঁদমুখ দেখে জ্যোৎস্নাই মুখ লুকাবে।

তোমার ভরা জ্যোৎস্নায় আমার গৃহদ্বার উন্মুক্ত হবে যেন।

জ্যোৎস্নাময়ী রাতে রাতে আলোকিত হবে আমার পৃথিবী।

তুমি আর আমি হাটবো জ্যোৎস্নায় আল্পনা করা পথে।

পূর্নিমার চাঁদ স্থির হয়ে তোমায় দেখবে,

তোমার ভালবাসা আমায় ডাকবে শুধু

এরপর স্বপ্নটা ভেঙে গেল...।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড