• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : সিফাতের বিশ্বাস

  আবদুল হান্নান জুলফিকার

২৪ মার্চ ২০১৯, ১২:৫৩
কবিতা
ছবি : প্রতীকী

দুপুরের খাবার খেয়ে ক্বায়লুলা করছিলাম। হঠাৎ দরজায় খটখট শব্দ, দরজা খুলে দেখি সিফাত। সালাম দিয়ে বললাম, কিরে দোস্ত! কেমন আছিস? ‘ভালো, জরুরী কথা আছে তোর সাথে।’

এই বলে এক হাতে চেয়ারটা টেনে এনে চেপে বসে আমাকে বলল, ‘তুই বস চৌকিতে’। মুখোমুখি দু’জন। বল কি হয়েছে, আর কেনো-ইবা এত তরিগরি? বললাম আমি তাকে।

একটু নড়েচড়ে পিপারেশন নিয়ে সিফাত বলছে, আচ্ছা দোস্ত! তোরা যে তাবলীগের নাম করে আইমিন রসুল সা: কি মসজিদে মসজিদে এমন তিন দিনের, পাঁচ দিনের, এক চিল্লার বা সাল ইত্যাদি ইত্যাদি করতে বলেছেন? বুখারি বা মুসলিমে এ ধরনের কোনো নজীর কোথাও আছে? প্রচলিত তাবলীগ নামক কোনো কিছুই নাই। এমনকি রাসুল সা: দ্বীনের ক্ষেত্রে এমন কাজ করতে বারণ করেছেন। অতএব তা নবআবিষ্কৃত আর যে সব কাজ ধর্মীয় পন্থায় নবআবিষ্কৃত হয় তা-ই বিদআত। পক্ষান্তরে হাদিসে আছে যে, প্রত্যেক বিদআত পথভ্রষ্ট আর পথভ্রষ্টকারীর শেষ ঠিকানা জাহান্নাম। তাহলে তোরা যে কাজটি করছিস, দ্বীনি কাজ, ধর্মীয় কাজ এমনকি ঈমান-এক্বিনের কথা বলে নবীওয়ালা কাজের কথা বলে তা গুমরাহ। যা এতক্ষণে তোকে প্রমাণিত করলাম। নিশ্চয় তুই বুঝেছিস। এই দেখ হাদিস (বুখারি) শরীফ। আমার বন্ধু সিফাত একখানা বাংলা পুস্তক এনে দলীল সরূপ আমাকে পেশ করলো। আবার দরদ স্বরে বলছে দোস্ত! তোকে বলি, এই বিদআত কাজ থেকে ফিরে আয়।

চেহারায় ঘাম নির্গত হচ্ছে বলতে বলতে। লাগাতার বলেই যাচ্ছিল তার বিশ্বাসী চেতনার কথাগুলি। মনে হচ্ছিল যেন অনেক আগের জমানো কথা। একটু জোর গলায় বললাম তাকে, তোর কথা শেষ হয়েছে?’ ফুটফুটে চেহারায় বলল, ‘হ্যাঁ।’

এতক্ষণ তোর কথা শুনলাম, খুব চমৎকার ভাবে বুঝিয়ে দিলি আমাকে। প্রচলিত তাবলীগ বিদআত। আমি খুব খুশী হলাম তোর যুক্তিযুক্ত কথা শুনে। তাবলীগ একটি পথভ্রষ্ট! এবার আমার কথাও তোকে শুনতে হবে, বললাম বন্ধু সিফাতকে।

শোন! প্রচলিত তাবলীগ কখনও বিদআতের অন্তর্ভুক্ত নয়, কেননা রাসুল সা: এই কাজ নিজে করেছেন মক্কা, মদিনার কাফির, মুশরিক, বেদ্বীনদের সরল পথ দেখিয়েছেন এই (তাবলীগ) কাজের মাধ্যমে। ঈমানের দাওয়াত দিয়েছেন এরই মাধ্যমে এবং তিনি আমাদের বলেও গেছেন ‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও।’ এখানে রাসুল সা: তাবলীগের কথাই বলেছেন যা তিনি নিজে করেছেন তাঁর জীবদ্দশায় আর তা-ই হল বর্তমান প্রচলিত তাবলীগ বা নবীওয়ালা কাজ।

এখন কথা হচ্ছে যে, রাসুল সা: তিন দিন, পাঁচ দিন, চিল্লা কিংবা সাল ইত্যাদি যা প্রচলিত এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে দিন-তারিখের কথা উল্লেখ করেননি তা ঠিক, কিন্তু তাই বলে তা বিদআত হয় না। কেননা প্রত্যেকটা কাজের একটা নিয়ম বা পদ্ধতি থাকে, যাতে তা পরিচালনা করতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা না হয়।

যেমন ধর, তুই ব্যবসা সরূপ একটা দোকান খুলেছিস। সেখানে নিয়মিত ব্যবসা চলছে। আচ্ছা ‘আল্লাহ্‌ তা’আলা তো ব্যবসা হালাল করেছেন তাইনা?’ সিফাত বলল হ্যাঁ, নিশ্চয়। তাহলে তো তিনি তাঁর নিয়ম বা পদ্ধতি আইমিন কোনদিন, কতদিন, কখন-কখন ব্যবসা করবে নিশ্চয় তাও বলে দিয়েছেন? সিফাত গলা উঁচিয়ে নাতো! এমন তো বলেনি!

আল্লাহ্‌ তা’আলা তো কুরআনে শুধু ব্যবসা করতে বলেছেন সেখানে তিনি ব্যবসা কখন করবে তা নির্দিষ্ট করেননি। না রাতে করতে বলেছেন, না দিনে। আচ্ছা এবার বল! তুই যে দোকান দিয়ে সেই ব্যবসা করছিস, খুব সকালে দোকান খুলছিস! আবার রাতে বন্ধ করে ফেলিস, কেনো? রাতে খোলা রেখে সারাদিনে বন্ধ রাখতেও পারতি, এমন করিসনি কেনো? আল্লাহ্‌ তা’আলা তো তুকে দিনে খোলা রেখে রাতে বন্ধ করে ব্যবসা করতে বলেন নি? যা করতে বলেনি তা করছিস আর যা করতে বলেছে তাও উল্টো। তাহলে তুই-ই বল এমন ব্যবসা কি বিদআতের অন্তর্ভুক্ত নয়?

আমি জানি তুই এটাই বলবি, ব্যবসার একটা নিয়ম-পদ্ধতি থাকে আর তা হচ্ছে সময়ে বন্ধ রাখা সময়ে খোলা রাখা। অথবা দিনে খোলা রাখা আর রাতে বন্ধ। তবে এখন তুকে বলছি আল্লাহ্‌ তা’আলা কুরআনে কোনো প্রকার নিয়মের কথা উল্লেখ করেননি? বিধায় যার যেমন ইচ্ছে বা সুবিধে তেমনি ব্যবসা করছিস। যেহেতু ব্যবসা এটা দুনিয়াবি কাজ, হয়তো তোর বুঝে আসবে না।

আচ্ছা ধর, মাদরাসা বা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘যেখানে কুরআন-হাদিসের বাণী মুসলিম শিশুদের শিক্ষা দেয়া হয়।’ এটাও একধরনের তাবলীগ। ঠিক কিনা? সিফাত মাথা নেড়ে বলল হুম! আচ্ছা, তাহলে সেখানে সারাদিন ক্লাস করে বিকেলে ছুটি হয় কোন যুক্তিতে? এমনও করতে পারতো যে, রাতে ক্লাস চলবে সারাদিন বন্ধ থাকবে! কেননা রসুল সা: এটা নির্ধারণ করেননি, তাবলীগ বা দ্বীন প্রচার কিংবা দ্বীনি শিক্ষা দিনে কিংবা রাতে করো।

এখন আমরা যদি শুধু দিনকেই প্রাধান্য দিই আর রাতকে বিলকুল ছেড়ে দিই সেটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হয় কিনা? তুর কথা অনুযায়ী নিশ্চয় বিদআত, কেননা রাসুলের বাণী ‘একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও’ তে, কোনদিন, কোন সময়, কোন তারিখে বা কখন-কখন এই দ্বীনকে মানুষের নিকট পৌঁছাবে তা তিনি নির্ধারিত বলে দেননি। অতএব যদি আমরা মাদরাসায় দিনকে প্রাধান্য দিয়ে রাতকে ছেড়ে দিই অবশ্যই বিদআত হবে। ‘এ পাঠদান কিন্তু একপ্রকার তাবলীগ। সেখানে দিনে প্রচার করে রাতে বন্ধ রাখা এক পক্ষ হওয়া বিদআত হবে না?’ আবার যদি তুই আমার কথায় ইমোশনাল হয়ে এখন থেকে শুধু রাতেই মাদরাসায় পাঠদান করিস তখনো কিন্তু বিদআত হবে কেন না রাসুল সা: শুধু রাতে দ্বীন প্রচার করতে বলেননি। আমি জানি তোর বিবেকে আর কোনো প্রকার উত্তর নেই যা, আমাকে বলতে তোকে বাধ্য করবে।

আচ্ছা তুই তো বহু জায়গায় ওয়াজ মাহফিল শুনিস তাই না? সিফাত এবার মুখ খুলে বলল হ্যাঁ! এবার আমি তাকে বললাম আচ্ছা তাহলে রাসুল সা: কি কখনো এভাবে প্রচলিত তাফসীর, ওয়াজ-মাহফিল দুইদিন ব্যাপী, তিনদিন ব্যাপী, পাঁচদিন ব্যাপী কিংবা দশদিন ব্যাপী এমন নির্ধারিত করে বলেছেন?

কখনই না? তাহলে এসব কি বিদআতের অন্তর্ভুক্ত নয়? কেননা এসব তো রসুলের জামানায় ছিলনা। এসব কি তোর বিবেকে বাধে না? শুধু তাবলীগকে নিয়ে কেনো এতটা মাথা ব্যথা? আরেকটা কথা তোর অবশ্যই জানা দরকার যে, এখন যেভাবে টিভি-টকশো-মিডিয়ায়, অডিও-ভিডিও আকারে দ্বীন ইসলাম প্রচার করা হচ্ছে তাকি শরিয়ত সম্মত?

নিশ্চয় নয় কেননা রাসুল সা: এমন করে দ্বীন প্রচারের কথা কোনোদিন বলেননি। এসব কি তোর বিবেকে ধরেনা? যদি তাবলীগের ক্ষেত্রে দিন-তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় বিদআত হয় তাহলে উপর উল্লেখিত কর্ম গুলোও বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে যেভাবে তুই বললি আমাকে। বিদআত হওয়ায় উল্লেখিত সকল দ্বীন প্রচারে কার্যক্রম গুমরাহের পথ হওয়া ছাড়া কোনো ভাবেই খালি হতে পারে না। অতএব বুঝতেই হবে যে, রাসুল সা: তাবলীগের ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু তার প্রচারের দিন-তারিখ নির্ধারিত করে দেন নি, তাই যে-যেভাবেই পারছে এই দ্বীনে ইসলাম প্রচার-প্রসার করছে, এতে একেক দল বা গুষ্ঠি একেক পদ্ধতি অবলম্বন করে দ্বীনে ইলাহি প্রচার করছে। তাকে আমাদের বিদআত বলা কতটা যুক্তিযুক্ত একবার ভেবেছি কি? লাগামহীন কথা বলা কখনো সমীচীন নয়।

সুতরাং একথা বলতে বাধ্য হবি যে, প্রত্যেকটা কাজের কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি অবশ্যই থাকে যা না হলে বিশৃঙ্খল হয়ে যায়। অতএব তাবলীগের মধ্যে যে দিন-তারিখ গুলো নির্ধারণ করা হয়েছে মূলত তা গুটি কয়েকজন মিলে দ্বীনের জন্য সময় ব্যয় করে তাদের সময়-সমর্থ অনুপাতে। পক্ষান্তরে সেখানে শুধু দ্বীন প্রচার নয় বরং দ্বীনে এলেম অর্জন করতে যাওয়াই মূলত উদ্দেশ্য। অতএব দ্বীন শিখতে গেলে যার যেমন ইচ্ছে তেমন সময় বের করে শিখতে যায়। আমি হয়ত তুকে বুঝাতে পেরেছি সিফাত!

কিছু না বলে চুপ করে বসে থেকে কিছুক্ষণ পর হুট করে দাঁড়িয়ে যায় সিফাত আর বলে দোস্ত, আয়! আমার বুকে আয়। আজ তুই যে ভুল ভাঙ্গায় দিয়েছিস তা আর কেউ পারেনি। এই তাবলীগ নিয়ে আমি অতটাই সন্দিহানে ছিলাম যতটা তাকে বিশ্বাস করতাম। এতদিন আমি তাবলীগের বিরুদ্ধে লেগেই থেকেছি। আজ তা থেকে তুই আমাকে মুক্ত করলি। আলহামদুলিল্লাহ! আচ্ছা দোস্ত আমার মত অনেকেই এমন ভুলের মধ্যে পরে আছে তুই ওদের জন্যও কিছু কর। যাতে আমার মত মতাদর্শদের ভুলটা ভাঙ্গে তাদের যাক।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড