• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ব্যর্থ কমোড নকশাকার থেকে আইফোনের ডিজাইনার

  লাইফস্টাইল ডেস্ক

০৮ জুলাই ২০১৯, ২০:২২
জনি আইভ
কমোড ডিজাইনে ব্যর্থ হলেও আইফোনের নকশা করে দুনিয়া জোড়া খ্যাতি কুড়িয়েছেন স্যার জনি আইভ। (ছবি : সংগৃহীত)

বিখ্যাত শিল্পীদের তালিকায় তার নাম না থাকলেও তিনি একজন বড়মাপের শিল্পী। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে তার মতো বড় শিল্পী খুব কমই আছেন। তিনি স্যার জনি আইভ। আইফোন, আইপ্যাড, অ্যাপল ওয়াচ এবং ম্যাকবুকের মতো জনপ্রিয় যন্ত্রগুলোর নকশা করে পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়েছেন। তার নকশা করা যন্ত্রগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বাজারে আসার আগেই। কিন্তু তিনি এতসব বিখ্যাত জিনিসের নকশার পাশাপাশি টয়লেটের কমোডের নকশাও করেছেন। কিন্তু এত জনপ্রিয় এক নকশাকারকে কেনইবা কমোডের নকশা করতে হয়েছিল? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিখ্যাত এই নকশাকারের কিছু না জানা খবর।

তার গল্পের শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। আইম্যাক কম্পিউটারের নকশা করার মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রের নকশার জগতে যাত্রা আরম্ভ করেছিলেন তিনি। অ্যাপলের সাথে কাজ শুরু করেছিলেন। তার মাথা থেকেই এসেছে অ্যাপলের বিশ্ব কাপানো সব পণ্য। একেকটি যন্ত্র রূপে এবং গুণে অনন্য করে সাজিয়েছেন তিনি। বলা হয়ে থাকে তার নকশা আর স্টিভ জবসের মেধায় অ্যাপল এতদূর আসতে পেরেছে।

কিন্তু শোনা যাচ্ছে এই মানুষটি অ্যাপল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কারও কারও ধারণা অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর তার অভাব বোধ করতে শুরু করেছেন তিনি। আর এরমধ্যে অ্যাপলের হাল নতুন করে ধরেছেন টিম কুক। যার ফলে তার কাজের জায়গা ছোট হয়ে আসছিল দিনকে দিন। অনেকেই বলছেন টিম কুক স্টিভ জবসের মতো শিল্প সমঝদার নন। তাই তার সাথে জনি আইভের বনিবনা হচ্ছে না ঠিকঠাক। হয়তো দেখা যাবে নিজেই নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। সেটি কী আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র নাকি অন্য কিছুর সেটি সময়ই বলে দেবে।

তুমুল জনপ্রিয় এই গেজেট ডিজাইনারের অবশ্য অন্যান্য অনেক জিনিসের নকশা করার অভিজ্ঞতা আছে। এরমধ্যে আংটি, ক্যামেরা, কলম, টেলিফোন এমনকি টয়লেটের কমোডও রয়েছে।

অ্যাপল শুধু সারাবিশ্বে ব্যবসা নিয়েই বসে থাকেনি। তারা মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে আফ্রিকায় এইডস নির্মূলের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। দাতব্য এই কাজের জন্য প্রয়োজন পড়ে বেশকিছু অর্থের। আর সেই টাকা সংগ্রহের জন্য একটি আংটির ডিজাইন করেন জনি আইভ। তবে এই কাজটি তিনি একা করেননি। তার সাথে ছিল আরেক নকশাকার মার্ক নিউসন। বিখ্যাত এই নকশাকার জনি আইভের দীর্ঘদিনের বন্ধু। দুই বন্ধু মিলে ঠিক করেন আস্ত একটি হিরের টুকরো দিয়ে আঙটি বানাবেন তারা। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এই কাজটি ঠিকই করে নেন তারা। অসাধারণ সুন্দর এই আংটিটি বিক্রি হয়েছিল আড়াই মিলিয়ন ডলারে।

আংটি

আড়াই মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল তার নকশা করা এই আংটিটি। (ছবি : ইন্টারনেট)

ক্যামেরার নকশা জনি আইভ অনেক করেছেন। কিন্তু এর সবই ছিল অন্য কোনো পণ্যের সাথে যুক্ত। পুরোদস্তর ক্যামেরার নকশা তিনি আগে কখনো করেননি। এই কাজটিও করতে হয়েছিল দাতব্য কাজের জন্য। সঙ্গী হিসেবে সেবারও ছিলেন বন্ধু মার্ক নিউসন। ২০১৩ সালের নকশা করা ক্যামেরাটির নাম ছিল লাইকা ডিজিটাল রেঞ্জফাইন্ডার। তবে দেখতে খুব আহামরি ছিল না ক্যামেরাটি। একদমই মামুলি আর অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি বডির এই ক্যামেরাটি তৈরিতে অবশ্য ঝক্কি পোহাতে হয়েছে বেশ। একটা মাত্র ক্যামেরা তৈরি হবে তার জন্য শ পাঁচেক মডেল এবং প্রায় হাজারখানিক যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয়েছিল তাদের। দাতব্য কাজের তহবিল সংগ্রহের জন্য তৈরি করা এই ক্যামেরাটি বিক্রি হয়েছিল অবশ্য চড়া দামেই। ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারে এই ক্যামেরাটি বিক্রি করেছিলেন তারা।

বছর দুয়েক আগে সারা বিশ্বের তরুণদের মাঝে একটি খেলা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ফিজেট স্পিনার নামের একটি খেলনা ঘুরিয়ে একা একাই খেলা যেত এই খেলাটি। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল এই খেলনা দিয়ে খেললে মানসিক চাপ কমে যায়। এই ধারণাটিকে অনেক আগেই সত্য করে দেখিয়েছিলেন জনি আইভ। ইন্টার্ন করার সময়ই তিনি তৈরি করেন একটি কলম। যেটি এমনভাবে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করত। এই কলমের আগায় একটি বল এবং ক্লিপ লাগিয়েছিলেন তিনি। যা ঘোরালে মানসিক চাপ থেকে মিলত মুক্তি।

আধুনিক সময়ের আশ্চর্য যন্ত্র মোবাইলের নতুন নতুন ডিজাইন করেছেন যিনি সেই জনি আইভ কিন্তু টেলিফোনেরও নকশা করেছিলেন একসময়। সেই নকশার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে বেশ বড়সড় একটি পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন জনি আইভ। তার নকশা করা সেই ল্যান্ডফোনটির নাম দিয়েছিলেন ওর‍্যাটর। ভবিষ্যতের টেলিফোন কেমন হবে এমনই এক নকশার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ব্রিটিশ সরকার। আর সেখানে অদ্ভুত এক টেলিফোনের নকশা দিয়ে পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বর্তমান সময়ের মোবাইল ফোনের এই সেরা নকশাকার। এই পুরস্কারটি তিনি অর্জন করেছিলেন আশির দশকে যখন তিনি ছাত্র ছিলেন।

ক্যামেরা

একটি মাত্র ক্যামেরা তৈরি করতে পাঁচ শয়ের বেশি ক্যামেরার মডেল বানাতে হয়েছিল জনি আইভের। (ছবি : ইন্টারনেট)

তবে সবচেয়ে অদ্ভুত নকশাটি করেছিলেন চাকরির প্রথম দিকে। যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল পলিটেকনিক থেকে পাস করার পর তিনি যোগ দিয়েছিলেন ট্যানজারিন নামক লন্ডনের একটি ডিজাইন এজেন্সিতে। কত রকমের যে জিনিসের নকশা করেছিলেন সে সময়। চিরুনি থেকে শুরু করে টয়লেটের কমোডেরও নকশা করেছিলেন পরবর্তী সময়ে বিশ্ব কাঁপানো এই নকশাকার। তবে তার করা কমোডের সেই নকশায় মন ভরেনি ক্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানের। তারা বাতিল করে দিয়েছিল তার নকশাটি।

সূত্র : বিবিসি

ওডি/এসএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড