আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে সপ্তম দিনের মতো আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে লড়াই চলছে। স্বায়ত্তশাসিত নাগোরনো-কারাবাখে শনিবার (৩ অক্টোবর) রাতভর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আরও ৫১ সেনা নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আর্মেনীয় নৃগোষ্ঠী শাসিত আজারবাইজানের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলটির কর্তৃপক্ষ।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, অঞ্চলটিতে আরও অর্ধশতসহ সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে ভয়াবহ এই লড়াইয়ে এক সপ্তাহে আড়াই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারাল। যদিও আজারবাইজানের পক্ষ থেকে তাদের সেনা হতাহতের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। অবশ্য আর্মেনীয় গোলার আঘাতে ১৯ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে বাকু।
আজারবাইজান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ড্রোন ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে জানিয়েছে, শুক্রবার (২ অক্টোবর) রাতে আর্মেনীয় সামরিক হার্ডওয়্যার স্থাপনা লক্ষ্য করে তারা এ বিস্ফোরণ ঘটায়। একই সঙ্গে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও একই রাতের বেশ কিছু বিস্ফোরণের ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করেছে।
আর্মেনিয়া সমর্থিত নাগোরনো-কারাবাখ কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছে, এবার তাদের প্রধান শহর স্টেপ্যানাকার্ট লক্ষ্য করে আজেরি বাহিনী ফের রকেট হামলা চালায়। শুরুর দিকে দুই পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে ট্যাংক ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করলে আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন : আজারবাইজানের ভয়ঙ্কর আক্রমণে পালাচ্ছে আর্মেনীয় সেনারা
৯০ এর দশকের পর দুই বিরোধী পক্ষের এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা। এটি ক্রমেই বিস্তৃতি হয়ে অঞ্চলটিতে সর্বাত্মক যুদ্ধ পরিস্থিতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর্মেনিয়ার সামরিক মিত্র রাশিয়া এবং আজারবাইজানের ঐতিহ্যগত মিত্র তুরস্কের এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পাড়ে, এমন আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।
অবশ্য শুক্রবার আর্মেনিয়া জানিয়েছিল, সংঘাত নিরসনে আজারবাইজানের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের (ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে ইয়েরেভান। কিন্তু আর্মেনিয়ার এমন ঘোষণার পর ওইদিন রাতেই ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হওয়ায় সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে এখন।
ফ্রান্স একটি শান্তি আলোচনা ফের শুরুর উদ্যোগ নিলেও শনিবার পর্যন্ত তা সফল হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। আজারবাইজান থেকে বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী পাইপলাইনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়লে ওই সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন : আজারবাইজানে পারমাণবিক হামলার হুঁশিয়ারি আর্মেনিয়ার
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত (বর্তমান রাশিয়া) এই দেশ দুটির সামরিক বাহিনীর মধ্যে শুরু হওয়া এবারের যুদ্ধ আগের সংঘাতগুলোর তুলনায় ভিন্ন। চলমান সংঘর্ষের মাত্রা, ধরণ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতিক্রিয়া— এসব কিছুই ওই অঞ্চলের সাম্প্রতিককালের সব উত্তেজনাকে ছাড়িয়ে গেছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে হঠাৎ করে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে বড়ো বড়ো কামান, ট্যাঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। যে জায়গাটির দখল নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলছে, নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সেই নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী দখল করে নিয়েছিল।
আন্তর্জাতিকভাবে অঞ্চলটি আজারবাইজানের হলেও এটির কর্তৃত্ব রয়েছে জাতিগত আর্মেনীয়দের হাতে। উভয় দেশই অঞ্চলটিকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। সাম্প্রতিক লড়াই শুরুর নির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, আজেরি বাহিনী অঞ্চলটি পুনর্দখল করতে গেলে সর্বশেষ এই যুদ্ধের সূত্রপাত।
আরও পড়ুন : আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের যুদ্ধে পাকিস্তানকে উস্কানি দিচ্ছে ভারত
আর্মেনিয়া ১৯৯২-৯৪ সালে যখন এই নাগোরনো-কারাবাখ দখল করে নেয় তখন সেখান থেকে প্রায় দশ লাখ আজেরি উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিল। এরপর থেকে এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মধ্যে গত কয়েক দশকে বারবার কূটনৈতিক অচলাবস্থা এবং সংঘাতের সৃষ্টি হয়, হুমকি দেওয়া হয় একে অপরকে আক্রমণের।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড