আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দখলদারিত্ব নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার সীমান্ত সংঘর্ষ কমেই যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছে। প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আর্মেনিয়া।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর রবিবার রাতে আজারবাইজান সেনা নাগোরনো-কারাবাখ সংলগ্ন আর্মেনিয়া-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দখল নিতে অভিযান চালায়। তাদের প্রতিরোধ করে সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনীয় বাসিন্দাদের মিলিশিয়া বাহিনী ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’। এরপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আর্মেনিয়া ফৌজও।
দীর্ঘ ছয় দিনের লড়াইয়ে দুপক্ষের বেশ কিছু ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ধ্বংস হয়েছে। দুপক্ষের কয়েকশো সেনার পাশাপাশি বহু অসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। আর্মেনিয়া হুমকি দিয়েছে, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্রবাহী দূরপাল্লার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই প্রজাতন্ত্রের লড়াইয়ে ইতোমধ্যেই জড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বেশকিছু দেশ। মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজানকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে তুরস্ক। অন্যদিকে, খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনিয়ার প্রতি ঝুঁকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা বিশ্ব এবং রাশিয়া।
আরও পড়ুন : মাঝ আকাশে জ্বালানি নিতে গিয়ে বিধ্বস্ত মার্কিন যুদ্ধবিমান
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান দ্বন্দ্বে সামরিক হস্তক্ষেপ না করার জন্য ন্যাটো ও রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তুরস্কের পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতি কার্যকর করে নাগোরনো-কারাবাখসহ অধিকৃত এলাকাগুলো থেকে আর্মেনীয় সেনাকে সরতে হবে।
চার হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটারের নাগোরনো-কারাবাখের অধিকার নিয়ে আর্মেনিয়া-আজাবাইজান মতবিরোধের সূচনা ১৯৮৮ সালে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সদ্যস্বাধীন দুই দেশের মতবিরোধ গড়ায় সামরিক সংঘাতে। সোভিয়েত জমানায় আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত এই অঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ বাসিন্দার অধিকাংশই আর্মেনীয় খ্রিস্টান।
আরও পড়ুন : হার মানল রাশিয়া, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সীমান্তে যুদ্ধ চলছেই
১৯৯৪ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে নাগোরনো-কারাবাখ এবং আশপাশের বেশকিছু অঞ্চল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৬ সালেও ওই এলাকার দখল নিতে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল আজারবাইজান ফৌজ।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহ্যাম আলিয়েভ সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ওই এলাকা দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেন। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে নাগোরনো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপনাকার্টসহ কয়েকটি শহরকে নিশানা করে অভিযান চালায় আজারবাইজানের স্থল ও বিমানবাহিনী। এরপর থেকেই লড়াই ক্রমশ তীব্র হতে শুরু করেছে।
আর্মেনিয়ার মদদপুষ্ট ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’ স্বীকার করেছে, নাগোরনো-কারাবাখের কিছু অংশ দখল করেছে আজারবাইজান ফৌজ। এক টেলিফোন কথোপকথনের সূত্র ধরে আর্মেনিয়ার সংবাদমাধ্যমের অভিযোগ, আজারবাইজানের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে পাক সেনা। অডিও ক্লিপে আজারবাইজানের দুই ব্যক্তিকে পাক সেনার উপস্থিতি নিয়ে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : ভারতের কারাগারে সবচেয়ে বেশি বন্দি বাংলাদেশিরা
উল্লেখ্য, সত্তরের দশকে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের সময় আরব জোটের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে ইসরায়েলবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল পাক ফৌজ।
আর্মেনিয়া সেনার অভিযোগ, আজারবাইজানের পক্ষে তুরস্ক তাদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। বিমান হামলায় তাদের বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। আজারবাইজান সিরিয়া থেকেও ভাড়াটে সেনা এনেছে বলেও অভিযোগ।
অন্যদিকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে রুশ সেনার আগমনের খবর মিলেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতির বার্তা দিয়েছেন দুদেশকে।
আরও পড়ুন : ভুটানে ঢুকতে দিচ্ছে না ভারতীয় ব্যবসায়ীদের
পুতিন রুশ সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নাগোরনো-কারাবাখ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও চলতি সপ্তাহে সংঘর্ষ বিরতির আবেদন জানিয়েছেন আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের কাছে।
গত পাঁচ বছরে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেছে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। কিন্তু সাময়িক শান্তি ফিরলেও নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে কোনো সমাধানের সূত্র মেলেনি।
আন্তর্জাতিক সামরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২০ সালের রিপোর্ট বলছে, সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের ১৩৮টি দেশের মধ্যে আজারবাইজানের অবস্থান ৬৪। আর্মেনিয়া ১১১-তে।
আরও পড়ুন : বসনিয়ার জঙ্গলে শীতে কাঁপছে একদল বাংলাদেশি
আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর মোট সদস্য এক লাখ ২৬ হাজার। সংরক্ষিত বাহিনীতে রয়েছে ৩ লাখ যোদ্ধা। অন্যদিকে, আর্মেনিয়ার সৈন্য সংখ্যা ৪৫ হাজার। সংরক্ষিত সেনা ২ লাখ। তবে সহযোগী ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’-তে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার যোদ্ধা।
সূত্র : আনন্দবাজার
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড