• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাতুলের সবজি বাগান

  সোহেল বীর

১৪ মার্চ ২০২০, ১০:২০
রাতুলের সবজি বাগান

রাতুল ক্লাস ফোরে পড়ে। পড়াশোনায় অনেক ভালো। ভালো ছাত্র হিসেবে স্কুলে তার বেশ সুনাম। রাতুলদের স্কুলের নাম- ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিন স্কুলে আসতে তার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আজ টিফিনের পর হঠাৎ করে মনটা খারাপ। কাল থেকে স্কুল বন্ধ- শীতকালীন ছুটি। অনেক দিন স্কুলে আসা হবে না। রিফাত, জাফর, সিমি এদের সাথে দেখা হবে না অনেক দিন, তাই ভেবেই রাতুলের মনটা একটু খারাপ।

বাড়িতে এসে মাকে স্কুল বন্ধের কথা জানালে মা বললেন, ভালোই তো হলো, অনেকদিন মামাবাড়ি যাসনে, এবার নিয়ে যাব। মামাবাড়ির কথা শুনে রাতুল অনেক খুশি হলো। মনটা অনেকটাই ভালো হয়ে গেল।

দুইদিন পর মায়ের সাথে মামাবাড়িতে গেল রাতুল ও তার ছোট ভাই রাকিব। মামাবাড়িতে ছোটমামা থাকেন। বড় মামা ঢাকায় চাকরি করেন। ছোটমামা আই.এ পাশ করে লেখাপড়া ছেড়ে দেন। নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করেন। রাতুল জানতে পারল তার ছোটমামা মাঠে আছেন। জমিতে সেচ দিচ্ছেন। মামার সাথে দেখা করতে মাঠের দিকে হাঁটা শুরু করল রাতুল। মামা ছোটমাঠে আছেন। ছোটমাঠটা মামাদের বাড়ির কাছাকাছি। আরেকটা মাঠ আছে সেটা বড়মাঠ নামে পরিচিত। বড়মাঠটা একটু দূরে। রাতুল বড়মাঠ চিনলেও কখনো একা যায়নি, মামার সাথে গেছে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে রাতুল ছোটমাঠে এসে হাজির। আইল ধরে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল মাঠের মাঝখানে ছোটমামার মতো একজন। কাছে গিয়ে দেখল তিনি তার ছোটমামা। রাতুলের মুখে মামা ডাক শুনতেই পেছনে তাকালেন তার মামা। মামা স্যালো মেশিনের পানিতে ভালো করে হাত ধুয়ে রাতুলের কাছে আসলেন। রাতুলকে কোলে নিয়ে বললেন, মামা কেমন আছ? রাতুলের ছোট মামা রাতুলের নাম ধরে না ডেকে ‘মামা’ বলেই ডাকেন। -জ্বি ভালো আছি। -তোমরা কখন আসলে? -এইতো কিছুক্ষণ আগে। -কে কে? -মা, রাকিব আর আমি। বাবা ব্যস্ততার কারণে আসেননি। ছোটমামাকে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে বলল রাতুল। মামাও অনেক খুশি ভাগ্নেকে পেয়ে। ছোটমামা রাতুলকে নিয়ে বাড়ি আসলেন। অনেকদিন পর মামা-মামীসহ একসাথে খাওয়া দাওয়া করল তারা।

বিকেলে ছোটমামার সাথে রাতুল আর তার ছোটভাই মাঠের দিকে বেড়াতে গেল। মামা শীতকালীন সবজি চাষের জন্য জমির প্রস্তুতি দেখাতে লাগলেন। রাতুল এবার মামাকে তার শখের কথা বলল। তার অনেক দিনের শখ সবজি বাগান করা। মামাকে বলল কিছু সবজির চারা দিতে। রাতুলের মামা বললেন, যেখানে সেখানে চারা লাগালেই সবজি চাষ করা যায় না। সবজি চাষের জন্য আগে মাটি খুঁড়ে নরম করে চাষের উপযোগী করতে হয়। রাতুল মামার কথা শুনে বলল, ‘ঠিক আছে মামা, আমি বাড়ি গিয়ে বাবার সাথে মাটি খুঁড়ে রাখব, আপনি আমাদের বাড়িতে গিয়ে সবজির চারা দিয়ে আসবেন।

বাড়িতে এসে রাতুল তার বাবাকে সব খুলে বলল। বাড়ির পেছনে খোলা জায়গাটা সবজি বাগানের জন্য আগেই ভেবে রেখেছিল সে। তার বাবা কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ল। মাটি চাষের উপযোগী করে তুলল। পরের দিন ছোটমামা তাদের বাড়িতে আসলেন। সঙ্গে গোল আলুর বীজ, বেগুনের চারা, পালন শাকের বীজসহ বেশ কয়েকটি সবজির চারা আনলেন। বাবাকে সাথে করে বীজগুলো বপন করলো, জমি ভাগ ভাগ করে চারাগুলো রোপণ করে দিলো। প্রতিদিন সকালে পড়তে যাওয়ার আগে চারাগুলোই পানি দিতে লাগল। বীজগুলো থেকেও ধীরে ধীরে চারা বের হলো। এভাবে সবজি বাগান পরিচর্যা করতে লাগল সে।

অন্যদিনের মতো স্কুল থেকে বাড়ি এসে বিকেলে বাগান দেখতে গেল রাতুল। আলু গাছ বড় হয়ে গেছে, পালন শাকও বেড়ে উঠেছে, বেগুন গাছে বেগুন ধরেছে, অন্যান্য সবজি গাছও বড় হয়ে গেছে। সবজি বাগান দেখে রাতুলের মন আনন্দে নেচে উঠল। দৌড়ে গিয়ে বাবা মাকে ডেকে আনলো বাগান দেখাতে।

কিছুদিনের মধ্যে রাতুলের সবজি বাগানের খবরটি গ্রামের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ল। স্কুলের স্যার, বন্ধুসহ গ্রামের অনেকেই সবজি বাগান দেখতে এলো। সবাই রাতুলকে অনেক প্রশংসা করল। ছেলের প্রশংসা শুনে আনন্দে বাবা মায়ের বুকটা ভরে গেল। রাতুলের সবজি বাগান দেখে তার বন্ধুরাও বাগান করতে উৎসাহী হয়ে ওঠল।

ওডি/এএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড