• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দৈনিক অধিকার ঈদ সংখ্যা-১৯

পংক্তিরা নিঃশব্দে কেঁদে কেঁদে ওঠে

  অশোক কর

০৮ জুন ২০১৯, ১৪:৩৬

অর্ন্তদৃষ্টি

বেছে নাও অন্য জীবন নিস্তরঙ্গ এ জীবন তোমার নয় যদি আগুনে পোড়াতে চাও অন্তদৃষ্টি তোমার হাতে বর্শা তুলে নাও, শিকারী পারঙ্গমতার কথা লেখো লেখো-; অদৃশ্য মায়ার টানে তুমি ঝাঁপ দিয়েছো জলস্রোতে অন্তহীন বোঝাপড়া শেষেও আঁকাশের চাঁদ ধরাছোঁয়ার অনেক দুরে

বেছে নাও অন্য জীবন, নিস্তরঙ্গ এ জীবন তোমার নয় তোমার জন্য বর্শাফলকের ডগায় আগুনে পুঁড়ছে শিকারের মাংস অঙ্গারে জ্বলছে বুকের অর্ধেক, বাঁকিটুকু জুড়ে তোলপাড় অন্ধকার সেখানে বিষধর সরিসৃপ, মৃত্যু দুলছে পেন্ডুলামে মতো

কোন দিকে যাবে-? আগুনে পোড়াবে হৃদয়-? বল্লম হাতে তাড়াবে অন্ধকার-?

জন্মান্ধ দৃশ্যাবলী

দুরত্ব সীমাহীন, জলের অতল নীচে ছন্নছাড়া জন্ম কোলাহল, পরকাল, আর গৃহস্থালি গন্ধমাখা কৃপণ-স্বভাব পলাতক জীবন অন্ধকারে মাদঙ্গ, খোল-করতাল, আঙুলে কাঁপে থর-থর কেউ বুঝি কেড়ে নিল সর্বস্ব আমার কির্ত্তণখোলার ঘূর্ণাবর্তে ভূবনজোড়া অর্ন্তজলী’র টানে কিসের এতো মায়া...,

জেগে আছো? অনতিক্রান্ত নক্ষত্রের আলো পৌঁছাতে এখনও সহস্র আলোকবর্ষ দেরি, জন্মান্তর অপেক্ষায় হাঁড়কাঁপানো শীতে চুলার গনগনে আগুনে উষ্ণতা নেবো বলে পলাতক জীবনের পাতা চুয়ে ঝড়ে পড়া আলোছায়ায় জন্মান্ধ দৃশ্যাবলী দেখি; যেখানে ইচ্ছারা শুধু আদিম মুগ্ধদৃষ্টির সামনে আলিঙ্গনাবদ্ধ উষ্ণতায় একে-অন্যের দিকে চেয়ে আছে অপলক।

তীক্ষ্ণ তরবারি

‘বন্ধুবর কবি রাজা হাসানকে’

আমার মতই সেও... জানি, কেউ একজন কবিতা পড়ে, আর ভাঙা-পাঁজরের ফাঁকে ফাঁকে পংক্তিরা নিঃশব্দে কেঁদে কেঁদে ওঠে সে কেবলই অপ্রতিরোধ্য ভাঙার শব্দ …

দিকচিহ্নহীন সেই ভাঙনের কোন শেষ নেই আকাশলীনা, জোড়া বিস্তৃত-দিগন্ত জীবনভর ভাঙতে ভাঙতে এতদিন শুধুই কবিতার অনুর্বর জমিতে চাষাবাদ

আমার মতই সেও…ঘাসেদের কষ্ট-ভেজা সবুজ ডগায় জমা দুঃখ ছুঁয়ে নীরবে কাঁদে পিছুটানে হাঁটে বিস্তৃত জলাভূমি, নদীর কিনার লেখা অক্ষরেরা বেদনা-পাথর, জমে থাকে বুকে

নিবিড় বোনা সেইসব শব্দের বীজ সিক্ত বালুতে অঙ্কুরোদ্গমের অপেক্ষায় ভালবাসায় অকিঞ্চিৎকর হৃদয় ভিজিয়ে একাকী কাটাতে রাজি আরো অপার ভবিষ্যত

স্বপ্নসাধ

অন্ধকার নেমে এলে-, কল্পনারা প্রসঙ্গ হারিয়ে বেছে নিল নিঃসঙ্গ প্রহর, যাযাবর জীবনের প্রস্তুতি। চলে যাবার অপেক্ষমাণ ছায়াদের দেখা নেই কোথাও আগুনে পুড়ছে ঘরবাড়ি, সব স্বপ্নসাধ সেইসাথে পুড়ছে বুকের ভিতরটাও!

কষ্ট'রা বাড়তেই থাকে-, ছুঁয়ে ফেলা আকাশ নেমে আসে পাশে, হৃদয়ের কোনে কোনে শ্রুশ্রষা ছড়ায়। আলো আর অন্ধকারে ছড়ানো স্মৃতিগুলো শব্দহীন সুরে লুকায় ভেজা আর্তস্বর আর্তূর অভিমানে মুখ ঢাকে কান্নার মতো দীর্ঘশ্বাস !

তারপরেও কোথায় যেন, ক্ষীণ স্বপ্নসাধ! তারপরেও কোথায় যেন, স্বপ্ন অবকাশ!

সান্ধ্য-অনুরাগ

ঝাউপাতা মন-উচাটন বেহাগের সুর বাজছে সান্ধ্য-অনুরাগে ঘুমিয়ে পরার আগে ঝাউপাতা সাথে নেবে সুর-অনুরণন সেতারের তারে ভিজেছে শান্ত বাতাস!

যারা জানে, তারা জানে; প্রবালদ্বীপের ঢেউ কখন আছড়ে পড়ে কার বুকে কেউ তারস্বরে চেঁচায়, নিরবতা ভেঙে ছেঁড়ে জীবনের সুর মায়ামুগ্ধ ফুলের প্রজাপতি ওড়ায়!

ঝাউপাতা জানে, সব জানে; পরিত্যক্ত জাহাজ চন্দ্রাহত ভেসে চলে যায় দুরে নুপূর ছন্দ তোলে, সেতারে বিষাদ ছড়ায় সান্ধ্য-বেহাগ বাতাস বৃথাই খোঁজে ভেজাঘাসে শিউলী সুবাস!

তবু ঝাউপাতা সান্ধ্য-অনুরাগে চোখভরা মায়া নিয়ে নক্ষত্রের আকাশ খোঁজে চারপাশের অবারিত পৃথিবী আদ্র ভালবাসায় গলে গলে সারারাত ঝরে পড়ে অমলিন স্বপ্নসুখে!

ছবি

ছবি : কবি অশোক কর

লেখক পরিচিতি:

কবি অশোক কর। তিনি ১৯৫৯ সালের ২ জানুয়ারিতে বাংলাদেশের রাজবাড়ী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ।কৈশরউত্তীর্ণ কাল থেকেই শিল্পসাহিত্য চর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আশি ও নব্বুই দশকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ। সম্পাদনা করেছেন ‘ঝলক’ লিটল ম্যাগাজিন। বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্রধারা সৃষ্টির বুদ্ধিদীপ্ত অন্নিষ্ট লক্ষ্য করা গেছে তাঁর সাহিত্যকর্মে। ১৯৯৯ সাল থেকে পেশাগত কাজে অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রবাস জীবনেও সার্বিক আন্তরিকতায় বাংলা সাহিত্য সৃষ্টিতে নিরলস সংপৃক্ত রেখেছেন নিজেকে।

‘পরাবাস্তবের আড়ালে’ কবি অশোক কর এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড