• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিনামূল্যে পাঠদানের স্কুল ‘তরী’

  আরিফুল ইসলাম আরিফ, জাবি প্রতিনিধি

২৪ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৪৭
জাবি
জাবির সবুজ মাঠে বিনামূল্যে পাঠদানের স্কুল ‘তরী’ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনের সবুজ মাঠে গিয়ে দেখা গেল এক ঝাঁক শিশুকে পড়তে। আর এসব শিশুদের পড়াচ্ছেন ক্যাম্পাসেরই কয়েকজন শিক্ষার্থী। এই শিশুদের কেউ ক্যাম্পাসে বাদাম, কেউ চা-সিগারেট বিক্রি, কেউ বা কাগজ ও পানির বোতল কুড়িয়ে অর্থ উপার্জন করে পরিবারে আর্থিক অবদান রাখে।

এই সব শিশুর এক এক জন জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক। এত কম বয়সেই যাদের জীবন যুদ্ধে নামতে হয়েছে তাদের কাছে পড়াশোনার সক্ষমতা অর্জন করা এক প্রকার হাস্যরস বটে। তবে এ সকল সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র, অসহায়, ছিন্নমূল ও পথশিশুদের পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠশালা ‘তরী’।

সমাজের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা ও পথশিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে ২০০৮ সালের ২৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২৯তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাত ধরে ‘আলোর পথে আমরা’ স্লোগানকে ধারণ করে জাবি ক্যাম্পাসে পথচলা শুরু করে ‘তরী’। সেদিন ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-তরুণীদের হাতে গড়ে ওঠে এ সংগঠনটি।

ছবি

সবুজ মাঠে শিশুদের পাঠদান চলছে (ছবি : দৈনিক অধিকার)

প্রথমে শুধু পাঠদানের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে তরীর শিশুদের খাতা, কলম, ব্যাগ, স্কুলের পোশাক, শীতের পোশাক ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়ে থাকে স্বেচ্ছাসেবীদের পক্ষ থেকে।

পথশিশুদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের স্কুলগুলোর দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান করে থাকে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা। বর্তমানে প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী এখানে শিক্ষাগ্রহণ করছে। প্রতি সোমবার বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ক্যাফেটেরিয়া, ছায়ামঞ্চ অথবা সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনে সবুজ মাঠে পাঠদানের আসর বসে বলে জানান তরীর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী জাকিউল ইসলাম।

তিনি বলেন, শুধু শিক্ষাই নয়। শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিকাশ সাধন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য সেবা, শীতের সময় শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও সামাজিক অভিভাবকের দায়িত্বও পালন করে থাকে সংগঠনটি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করছে। এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ইতোমধ্যে জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ। সহজে ও ভালোভাবে এসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করা হয়।

সংগঠনটি পরিচালনা করতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কী না জানতে চাইলে জাকিউল ইসলাম বলেন, খোলামাঠে পড়াশোনা করাতে সমস্যা হয় না, তবে বৃষ্টির সময় শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তখন বিভিন্ন ভবনের বারান্দায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসতে হয়। আগে আমরা প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতাম। কিন্তু বর্তমানে এখানে ১ম-৭ম শ্রেণির স্টুডেন্ট পড়তে আসে।

ছবি

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ‘তরী’ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

তরীর সাধারণ সম্পাদক সাগর হোসেন বলেন, এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বাদাম বিক্রি করে, কেউ চা-সিগারেট, কেউবা কাগজ-পানির বোতল কুড়ায়। তরীর মাধ্যমে তারাও এখন স্বপ্ন দেখে তারা দেশের সম্পদ হবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসবে। সংগঠনটির একজন সদস্য হিসেবে এটি গর্বের।

তরীর উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো বিকাশে তরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমরা চাই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তরীর মতো সংগঠন গড়ে উঠুক। যারা তরীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে তারা এক দিকে যেমন নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করছে তেমনি তার সঙ্গে তারা সমাজের প্রতি তাদের যে দায়বদ্ধতা সে বিষয়ে সচেতন হচ্ছে।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড