• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

১০ হাজার টাকার বিনিময়ে

ইবিতে বদ্ধ কক্ষে অসদুপায়ে পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ

  ইবি প্রতিনিধি

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:৪২
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক সাজ্জাদুর রহমান টিটু (ছবি : সংগৃহীত)

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছিটকিনি লাগিয়ে দরজা বন্ধ করে, কোনো পরিদর্শক ছাড়াই মোবাইল দেখে ও নকল করে একই দিনে তিন কোর্সের ৯ ঘণ্টা পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদুর রহমান টিটু ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক শিক্ষার্থীকে ৩টি কোর্সের পরীক্ষায় একই সঙ্গে গ্রহণ করার এই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই ঘটনা ফাঁস হওয়ায় রীতিমত আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে ইবি ক্যাম্পাসে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর নিকট পৃথক পৃথক প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি ও ছাত্র উপদেষ্টা।

অ্যাকাডেমিক পরীক্ষার মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন অনৈতিক, ও আইন সাংঘর্ষিক দায়িত্বহীনতার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকবৃন্দ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা যায়, ‘গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদুর রহমান টিটু ৯ম ব্যাচের ৩য় সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থীর ৩টি কোর্সের ৯ ঘণ্টার পরীক্ষা একসঙ্গে আবদ্ধ কক্ষে গ্রহণ করেন। গোপন তথ্যর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় ওই কক্ষটি ভেতর থেকে ছিটকিনি দিয়ে বন্ধ ছিলো। পরে ওই কক্ষ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ওই শিক্ষার্থীসহ তিনটি বিষয়ের পরীক্ষার খাতা, স্মার্ট ফোন ও নকল জব্দ করা হয়। আবদ্ধ কক্ষে কোনো পরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন না। পরে ওই শিক্ষার্থী ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা সুযোগ পেয়েছে বলে জানায়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি ছাত্র উপদেষ্টা কর্তৃক বৃহস্পতিবার পৃথক পৃথক দুই লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে উক্ত কোর্স সমূহের প্রশ্নপত্র সংশ্লিষ্ট কোনো কোর্স শিক্ষক কর্তৃক প্রণীত নয় বলে উল্লেখ্য আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, সহকারী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদুর রহমান টিটুর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দায়িত্বহীনতা ও বিধি বহির্ভূতভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করা প্রমাণিত হয়েছে যা পরীক্ষা শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এহেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিনটি অভিযোগ দেন।

অভিযোগগুলো হলো- পরিদর্শক ছাড়াই একই দিনে ১০৫, ১০৬, ১০৭ তিনটি কোর্সের ৯ ঘণ্টার তিন দিনের পরীক্ষা বদ্ধ কক্ষে গ্রহণ ও নকলের সুযোগ প্রদান, সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক ছাড়া ৩টি কোর্সের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় মনোনীত পরিদর্শক কর্তৃক পরীক্ষা গ্রহণ না করা।

আনিত অভিযোগের সঙ্গে ওই শিক্ষকের সম্পৃক্ততা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সান্ধ্য-কালীন কোর্সের ব্যাপারে সকল প্রকার অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে তাকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বর্ণিত অপরাধের কেনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না বলে নোটিশ দাখিল করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে সান্ধ্যকালীন কোর্সের সমন্বয়কারী আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদুর রহমান টিটু বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার সময় আমি ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলাম না। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ লাভলু বলেন, ‘সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ হওয়ার পর আবার নতুন করে যে অর্ডিন্যান্স হয়েছে তাতে কি ধরনের শাস্তি উল্লেখ আছে তা আমার জানা নেই। এই পরীক্ষার খাতাপত্র কীভাবে মূল্যায়িত হয় সেটি আমাদের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে কোনো সময় জানানো হয় না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর ব্যাপারে আমি বিষয়টি লিখিতভাবে প্রশাসনের কাছে বিবৃতি দিয়েছি।’

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নাসিম বানু বলেন, ‘এমন গর্হিত কাজের দরুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে, শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং শিক্ষার গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। বর্তমান প্রশাসন ইতোমধ্যে দুর্নীতির কারণে ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে। এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকরা তদন্ত সাপেক্ষে কোনো ছাড় পাবে না বলে প্রত্যাশা করি।’

এ বিষয়ে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রেবা মন্ডল বলে, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে বিষয়টি ভালোভাবে না শুনে কিছু বলা যায় না, আমি এতটুকুই শুনেছি যে, এ রকম একটা পরীক্ষা হয়েছে, এবং এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। তবে শুক্রবার হওয়ায় এটি নিয়ে আমাদের অনুষদীয়ভাবে বসা হয়নি। তবে, এটা দুঃখজনক ঘটনা, অনাকাঙ্ক্ষিত, আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত একটি বিষয়।’

এ বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নুরুন নাহার বলে, ‘এই ঘটনাটি কীভাবে ঘটল তা আমি জানি না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বললেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবধারিত লক্ষ্য। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করতে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৩তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভার সুপারিশ ক্রমে ২৪২তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ ঘোষণা করেন প্রশাসন। তখন প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তটি দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এ বিষয়টির প্রশংসা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির চাপে আবার পাঁচ মাস পরেই সেই সান্ধ্যকালীন কোর্স ফিরে আসার খবরে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা।

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড