• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইবিতে ছাত্রলীগ রাজনীতির অস্থিতিশীল পরিবেশ

  ইবি প্রতিনিধি

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:১২
ইবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ (ছবি : সম্পাদিত)

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগ রাজনীতির ইতিহাস সুখকর ছিল না। বর্তমান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব শাহজাহান আলম সাজুর দীর্ঘ সংগ্রাম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্ত জামাত-শিবিরের একক আধিপত্যে ছাত্রলীগের কোণঠাসা অবস্থা ছিল দীর্ঘকাল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হওয়ায় এবং এ সরকার লাগাতার তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ায় কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পায় ইবি শাখা ছাত্রলীগ।

কিন্তু নিজেদের মাঝে কোন্দল, আধিপত্য বিস্তারে দলীয় কর্মীদের মারধর, টেন্ডার বাজি, নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্য, স্থানীয়করণ, মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা, দলীয়করণ ও প্রশাসনকে অসহযোগিতার কারণে অনেক সময় বিতর্কিত হয়েছে ইবি শাখা ছাত্রলীগের এই সংগঠনটি। যার দরুণ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ কর্তৃক সম্মেলনের আগেই বিলুপ্ত হয়েছে কয়েকটি কমিটি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, স্বীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য স্থানীয় ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী নেতারা সবসময় এই সংগঠনটিকে তাদের হাতের মুঠোয় কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। স্থানীয় নেতাদের প্রভাব ব্যাপক হারে লক্ষ্য করা যায় এ প্রতিষ্ঠানটিতে।

দলীয় নেতাকর্মীরা দাবি করেন, স্থানীয়করণের কারণে স্বাধীন এ সংগঠনটি মুক্ত রাজনীতি চর্চা খর্ব হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও বাইরের তথা দেশের দূরবর্তী জেলাসমূহ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করার তেমন সুযোগ পায় না।

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির সর্বোচ্চ পদসমূহ তথা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আসীন হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পার্শ্ববর্তী দুই জেলা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের নেতাকর্মীরা এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটির সামনের সারির অধিকাংশ পদ স্থানীয়দের নিয়ন্ত্রণেই রাখা হয়।

দীর্ঘকালের ঐতিহ্য ভেঙে এবারই প্রথমবারের মতো রংপুর বিভাগ থেকে সভাপতি নির্বাচিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এস এম রবিউল ইসলাম পলাশ। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয় আবার সেই কুষ্টিয়া জেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম রাকিব। গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদ্য পদচ্যুত সভাপতি রেজওয়ানুল হোক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাদের মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই ইতিবাচক কার্যক্রম দিয়েই দায়িত্ব পালন শুরু করে পলাশ ও রাকিব। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের মনঃপুত নেতৃত্ব না আসায় প্রথম থেকেই টানা উত্তেজনা বিরাজ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। গুঞ্জন ছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটিকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কিন্ত স্থানীয়দের সঙ্গে একপ্রকার সমঝোতায় বিশাল বহর নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পলাশ ও রাকিব। তারপর কিছুদিন ডেঙ্গু নিধন, ঝোপঝাড় পরিষ্কার, অবৈধ গাড়িসমূহের লাইসেন্স চেক, শিক্ষার্থীদের জন্য অভিযোগ বক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থী বান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজের টেন্ডার বণ্টন শুরু হয়। গত ৬ আগস্ট এ টেন্ডার নিয়েই ছাত্রলীগের গ্রুপিং প্রকাশ্যে আসে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ ও বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি শো ডাউন দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে বহিরাগতদের ও সাবেক নেতাদের নিয়ে শো ডাউন দিতে দেখা যায় পদ বঞ্চিত ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে ইবি ছাত্রলীগ, গুঞ্জন থেকেই পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীদের বিদ্রোহী মনোভাব প্রকাশ্যে লক্ষ্য করা যায় এ দিনেই। যদিও ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা দাবি করে, বর্তমান দায়িত্ব প্রাপ্ত কমিটি টেন্ডার বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত, ছাত্রলীগের নামে কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড তারা ক্যাম্পাসে মেনে নেবে না।

কিন্ত পরদিনেই (১৯ আগস্ট) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপাচার্য কার্যালয়ে গিয়ে কোনো প্রকার টেন্ডার বাজি ও কোনো অনৈতিক কার্যক্রমে জড়াবে না বলে ঘোষণা দেয়। সেই সঙ্গে তারা উপাচার্যের কাছে ক্যাম্পাসকে বহিরাগত ও মাদক মুক্ত করার দাবি জানান।

এরপর বিভিন্ন আশ্বাসে বিদ্রোহী কমিটির একাংশ দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি সঙ্গে সমঝোতায় আসে। কিন্ত গত ২৫ আগস্ট বিদ্রোহী গ্রুপের মোসাররফ হোসেন নীলকে সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক লাঞ্ছিত করাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রাতভর চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিদ্রোহী গ্রুপ কর্তৃক লাঞ্ছিত হয় সাধারণ সম্পাদক ও মারধরের স্বীকার হয় তার ও সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা। তারপর থেকেই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেওয়া শুরু করে বিদ্রোহীরা।

পরবর্তীতে গত ৮ সেপ্টেম্বর সভাপতি পলাশের আহ্বানে আবারও মাদক বিরোধী র‍্যালি ও সমাবেশের মাধ্যমে আবারও সমঝোতায় আসে বিদ্রোহী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরা এবং একত্রে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এ দিকে, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সামাজিক যোগাযোগ ও বিভিন্ন পত্রিকায় কয়েকটি নিয়োগ ও নেতা বাণিজ্যের অডিও ফাঁসের পর ক্যাম্পাসে রাজনীতির মোড় আবারও পাল্টাতে শুরু করে। যদিও রাকিব সেই অডিও ফাঁসের কথা তার নই বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। সংবাদ সম্মেলন করে সে সাংবাদিকদের জানায় যে, তাকে অভিযোগ করে যে অডিওটি ফাঁস হয়েছে, সেটি তার নয়। বরং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে ফাঁসানোর জন্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সর্বশেষ, গত ১৪ তারিখ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজোয়ানুল হোক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বিভিন্ন অভিযোগে অপসারিত হলে, সেদিন রাত থেকেই প্রকাশ্যেই বর্তমান কমিটির বিরোধিতা শুরু করে বিদ্রোহী পদ বঞ্চিত গ্রুপের নেতাকর্মীরা। রাকিবের ফাঁস হওয়া অডিওর সূত্র ধরে টাকায় কেনা কমিটি মানবে না বলে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। তারা এ কমিটি দ্রুত বিলুপ্ত করে, নতুন কমিটি প্রদানের ব্যাপারে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবি জানায়। এ নিয়ে তারা লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে এবং দাবি মানা হলে কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

একইসঙ্গে গতকাল সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর ) উপাচার্যের কাছে নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁসের কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে রাকিবকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার ও শাস্তির দাবি জানায়।

উপাচার্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের একটি পক্ষ নেতাকর্মীরা বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে এসেছিল, কিন্ত তারা দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কোনো কথা না শুনেই উপাচার্য কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসে। বের হয়ে আসার সময় শিশির ইসলাম বাবু উপাচার্যকে বলে, আমরা আপনার কোনো কথা শুনবো না, আমরা কাজ (রাকিবের শাস্তি) দেখব।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, গুরুতর বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে।

সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করতে না পারলেও তাকেও ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিদ্রোহী ও পদ বঞ্চিতরা। ছাত্রলীগ কর্মীরা দাবি করেন, বর্তমান সভাপতি পলাশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে শিবির কর্তৃক তিনি কয়েকবার হামলার শিকার হয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন। ক্যাম্পাস হলে শিবির মুক্ত করণে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল বলে তারা উল্লেখ করেন। সভাপতির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায়ও তারা বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। সভাপতি একজন ক্লিন ইমেজের ত্যাগী ও সংগ্রামী ছাত্রলীগ নেতা, শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গ থেকে নেতা হয়ে আসায় স্থানীয়দের সবার হিংসার পারদ হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তারা।

এ বিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, রবিউল ইসলাম পলাশ ছাত্রলীগের একজন সৎ নিষ্ঠাবান কর্মী ছিলেন। পলাশ ছাত্রলীগের জন্য শতভাগ ডেডিকেটেড ছিল।

তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে পলাশ খুবই সহজ-সরল প্রকৃতির। সততার শতভাগ বহিঃপ্রকাশ আমি তার মাঝে দেখেছি। সে আমার কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিল। তার মতো একটা ছেলেকে সভাপতি হিসেবে পাওয়া ইবি শাখা ছাত্রলীগের গর্বের বিষয়। কিন্তু কোনো অভিযোগে ছাড়াই মিছিলে তার বিরুদ্ধে স্লোগান একজন ছাত্রলীগের সাবেক দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা হিসেবে আমি অত্যন্ত অপমানজনক মনে করি। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র আছে, নিয়ম কানুন আছে, কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, নির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করে হওয়া উচিত। পেশী শক্তি প্রদর্শন করে একজন নেতাকে তাচ্ছিল্য করা কখনোই কাম্য নই।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুর রহমান ও রাকিব হোসেন বলেন, ধারণা করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা কোনো সংগঠনের নেতাদের কাজ হতে পারে না। আজ পর্যন্ত কেউ ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ ভাইয়ের নামে কেউ অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। কোনো ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত ইবি শাখা কমিটির বিলুপ্তি সম্পূর্ণ অমূলক।

এছাড়াও, দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকা বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা শিশির ইসলাম বাবুকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে। শিশির সাইফুল ও অমিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, ২০০৯-১০ সেশনের হওয়ায় তার মাস্টার্স শেষ হয়েছে বছর দুয়েক আগেই, যার বিরুদ্ধে অস্ত্রবাজি, ব্যাপক হারে ভর্তি বাণিজ্য ও টেন্ডার বাজিসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ আছে। বিভিন্ন অভিযোগের কারণে গত শাহিন-হালিম কমিটির মেয়াদকালে বাবুকে একদিনও ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি। ক্যাম্পাসে তার উপস্থিতি দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীরা। তার উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে যেকোনো সময় অদ্ভুত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিদ্রোহীরা ছাত্রলীগ নেতারা বিতর্কিত ও দুর্ধর্ষ ক্যাডারদের কেন আশ্রয় দিচ্ছেন এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।

অপর দিকে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠনের একাধিক নেতা দাবি করেন, বর্তমান ছাত্রলীগ কমিটির নেতারা প্রশাসনের কাজকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের শতভাগ সহযোগিতা থাকবে বলে জানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা।

এ দিকে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীদের দাবি, প্রশাসনের কুকীর্তি ঢাকতে এবং টেন্ডার বাণিজ্য করতেই প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছে ছাত্রলীগ। এ জন্য তারা বর্তমান কমিটিকে নেতাদের প্রশাসনের পকেট কমিটি বলেও উল্লেখ করেছেন।

শোভন ও রাব্বানী অপসারিত হওয়ার পর স্থানীয় সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের একাট্টা বিরোধিতায় বর্তমান একঘরে হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। উত্তরাঞ্চল থেকে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় স্থানীয়রা স্বীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য সহযোগিতা করছে না তাকে বলে দাবি করছেন তার অনুসারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, আমার বিরুদ্ধে কেউ যদি একটা অনৈতিক অভিযোগ আনতে পারে এবং প্রমাণিত করতে পারে আমি নিজেই পদত্যাগ করব। আমি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করি না করব না, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, আমি সবসময় জাতির পিতাকে অনুসরণ করি, আমি আমাদের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা পালন করি। আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী মনোনীত ইবি প্রশাসনকে সকল উন্নয়নমূলক, ইতিবাচক কাজে সহযোগিতা আমাদের করা উচিত। প্রশাসনের বা ক্যাম্পাসে যে কারো কোনো অনিয়মের দেখা পেলে তার প্রতিবাদ ও প্রতিহত করব। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, আমি দেশনেত্রী শেখ হাসিনার সৈনিক, আমি কখনো কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াব না। আমি তাদেরকে জানিয়ে দিতে, কেন্দ্র ছাড়া তারা অবাঞ্ছিত বা অবৈধ ঘোষণা করার কেউ না বরঞ্চ এটা গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কাজ। তবে আমি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সাংসদের যেকোনো নির্দেশনা মেনে নেব, কেন্দ্রের যেকোনো সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। আমি প্রকৃত ছাত্রলীগ কর্মীদের বলতে চাই বিদ্রোহ না করে, সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করুন, আমি তাদের কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানাব। তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে সাংগঠনিক পন্থায় তাদের অভিযোগ জানাতে বলব।

এ দিকে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা, পলাশ-রাকিবের অবৈধ কমিটি মানি না, মানব না ইত্যাদি স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

একইসঙ্গে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকারা অডিও ফাঁসের সূত্র ধরে রাকিবকে বহিষ্কার করার ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে।

এ নিয়ে কেন্দ্রের সাবেক এক নেতা বলেন, ছাত্রলীগ হয়ে ছাত্রলীগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। ছাত্রলীগের এমন কোনো কাজ করা উচিত নই যাতে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। সবার মনে রাখা উচিত, ছাত্রলীগ একটি পরিবার। এ পরিবারের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই তা হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পরিবর্তনের সঙ্গে বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করার কোনো কারণ দেখি না। এরকম আচরণ ছাত্রলীগ বিরোধী। ছাত্রলীগ তার সুনির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই পরিচালিত হবে। কেউ গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার সাংগঠনিক শাস্তি অপরিহার্য। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীদের মনে রাখা উচিত ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। কেউ যদি ছাত্রলীগকে কলুষিত করে সে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশকেই বিতর্কিত করে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সিদ্ধান্তের প্রতি ছাত্রলীগ কর্মীদের শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত, কোন বিষয়ে কারো নৈতিক অবস্খলন ঘটলে তা আগে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত বিষয়ে প্রমাণ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। ছাত্রলীগ কর্মীদের এমন কোনো কাজ করা উচিত নই, যাতে অন্য কেউ মহান এই সংগঠনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ পায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ত্যাগের মহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির এ সংগঠনটির সদস্যরা দেশের জন্য উৎসর্গ করেছে নিজেকে, পদ পাওয়ার জন্য নই। দেশের জন্য কাজ করায় এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ছাত্রলীগ হয়ে ছাত্রলীগকে কেউ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে পারে না। কারও বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা সাংগঠনিকভাবে জানানো উচিত।

তিনি বলেন, তারা যেকোনো দাবি আমাদের জানাতে পারে, কিন্ত অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে পারে না, তা সাংগঠনিক ভাবে হতে হবে। তারা লিখিত অভিযোগ জানাতে পারে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে যে কমিটি দেওয়া হয়েছে, তারা যদি তা মেনে না নেয়, তারও নির্দিষ্ট পন্থা আছে। তারা লিখিত অভিযোগ জানাতে পারে কিংবা সাংগঠনিক পদ্ধতিতে এগোতে পারে। কিন্ত তারা অবাঞ্ছিত ঘোষণা কীভাবে করে।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কেউ অপরাধী হলে তার বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ছাত্রলীগের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, প্রমাণসহ আমাদের কাছে অভিযোগ দিক, এটা হলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারব।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসে এ রকম করার কোনো কারণ দেখি না। এরকম হলে একটা পক্ষ সুযোগ নেবে, বিশেষ করে জামায়াত-শিবির তো বসেই থাকে কখন ক্যাম্পাসে একটা ঝামেলা হবে, এ বিষয়গুলো যদি না বোঝে সবসময় ঝামেলা করার চেষ্টা করে তবে তো সমস্যা। তাদের উচিত তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে, ডকুমেন্ট ও তথ্য প্রমাণাদিসহ আমাদের কাছে আসুক, আমরা অভিযোগগুলোর তথ্য প্রমাণ যাচাই করে ব্যবস্থা নেব।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড