• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কাউন্সিলে আলোচিত জবি ছাত্রদল

  জবি প্রতিনিধি

০৭ জুলাই ২০১৯, ০০:০৩
জবি ছাত্রদল
ছবি : সম্পাদিত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তুমুল আলোচনায় রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদল। আগামী ১৫ জুলাই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। আর একে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন দলীয় অফিসে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশীরা নিজেদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদেরকে মাঠে প্রমাণ করতে ও নেতাদের মন জয় করতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতেও দলীয় অফিসের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল ও সমাবেশ করে যাচ্ছেন পদ প্রত্যাশী নেতারা।

কিন্তু এবারের কাউন্সিলে যেন শুধু প্রতিষ্ঠান ও সিণ্ডিকেট দেখে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য বলছেন পদ প্রত্যাশীরা। যারা মাঠে কাজ করেন এবং দলের ভঙ্গুর অবস্থায় ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে থাকেন, তাদেরকে যেন কাউন্সিলে মূল্যায়ন করা হয়। আর এদিক থেকে এবারের কাউন্সিলে এগিয়ে রয়েছে পুরান ঢাকার জাতীয়তাবাদী দলের মূল শক্তি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদল।

জানা যায়, ২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ছাত্রদলের ঘাটি হিসাবে পরিচিত এ ইউনিটটির নেতাকর্মীরা ১/১১ এর সময় জরুরি অবস্থা ভেঙ্গে নিয়মিত মিছিল ও মিটিং করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের অন্যান্য ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রদলকে বিতাড়িত করা হয়। সেক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শক্ত অবস্থান ধরে রাখে। এরপরেও দলীয় কোন কর্মসূচিতে জবি ছাত্রদল ক্যাম্পাসের ভিতরে মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মুছে দিলে ক্যাম্পাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তীব্র আন্দোলনে তা আবার পূনঃস্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

২০১৩ সালের ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে জবি ছাত্রদল। এ সময় পুলিশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহগণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও জবি ছাত্রদলের সাবেক নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজের কোমড়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। আহত ছাত্রদল নেতা দীর্ঘদিন আউসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আলামিন, মাযহারুল ইসলাম রাসেল, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান রানা ও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মামুন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সুমন ও তানভীরের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু ফিরে আসার পথে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটের কাছ থেকে র‌্যাব-১-এর সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে যান। এখন পর্যন্ত তাদের হদিস পাওয়া যায়নি।

২০১৫ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসের সামনে অবরোধ চলাকালীন পুলিশের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা নয়ন বাছার। এখন নয়ন বাছার ভারতের ভেল্লরে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে জবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুরান ঢাকা অচল করে রাখে। বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে পুরান ঢাকাসহ রাজধানীতে এ ইউনিটটির নেতাকর্মীদের ভূমিকা অগ্রগামী।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ কাউন্সিলে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহবৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাপ্পী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবিএম মাহামুদ আলম সরদার, সাধারণ সম্পাদক পদে কেন্দ্রীয় কমিটির সহগণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কে এম সাখাওয়াত হোসাইন।

মাহমুদুল হাসান বাপ্পী পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাবা গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। চাচা সেলিমুজ্জামান সেলিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য, বর্তমানে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজধানীতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে একাধিকবার তিনি আটক হন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবিএম মাহমুদ সরদার স্কুলজীবন থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। মাদারীপুরের জনপ্রিয় এ ছাত্রনেতা ১/১১ থেকে রাজধানীর রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। ২০১৩ সালে খালেদা জিয়ার অফিসে গুলির প্রতিবাদের বিক্ষোভে পুলিশি নির্যাতনে তার হাত ভেঙ্গে যায়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর থেকে আটক হন তিনি। কোতয়ালী, সূত্রাপুর, রমনা, পল্টন থানায় তার নামে কয়েকটি করে মামলা রয়েছে।

জবি ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহগণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কটুক্তি করার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ তার কোমড়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। স্লোগান মাস্টার খ্যাত মূত্যুঞ্জয়ী এ নেতা তারেক রহমানের সাজার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন। একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বাবা স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

জবি ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কে এম সাখাওয়াত হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে রাজনীতিতে জড়িত। ১/১১ থেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে তিনি সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে।

এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন বলেন, ‘মাঠে যারা সক্রিয় ভূমিকা রাখে তাদেরকেই কমিটিতে মূল্যায়ন করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন সহ দলের প্রতিটি আন্দোলনে রাজধানীর অন্য ইউনিটের চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ভুমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল। তাই শুধু প্রতিষ্ঠান দেখে নয় আন্দোলন সংগ্রামের মাঠে যারা অগ্রগামী এবং ত্যাগী ছিল তাদেরকেই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মূল্যায়ন করা হোক।’

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড