• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঢাকা কলেজে স্নাতকের ফল বিপর্যয়

  মো. রাকিবুল হাসান তামিম, ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি

২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:৩৬
ঢাকা কলেজ
অনশনরত ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থেকে শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়। যদিও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্ত করা হলেও বাস্তবিক অর্থে এখন তার উল্টো দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত সম্মান ২য় বর্ষের (২০১৫-১৬ সেশন) ফলে দেখা গেল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ফল ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

রসায়ন বিভাগে ৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জনই নট প্রমোটেড মানে অকৃতকার্য হয়েছে। আবার বাংলা বিভাগেও সকল বিষয়ে পাস করে উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র তিনজন। অথচ যেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা অবস্থায় ফলের দিক দিয়ে সবার ওপরে অবস্থান ছিল ঢাকা কলেজের। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার পর ফলে নেমে আসে চরম বিপর্যয়! কিন্তু কেন হচ্ছে এ ধরনের বিপর্যয়?

তা ঢাবি কর্তৃপক্ষ বা কলেজ কর্তৃপক্ষও স্পষ্ট করে বলতে পারছে না। আবার দীর্ঘ সময় পর পরীক্ষা শুরু করে ফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রতা আর ফলে চরম বিপর্যয় দেখা দেয়। যেখানে মান উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই অধিভুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেন সেখানে এমন ফল বিপর্যয় আর ত্রুটিপূর্ণ ফল হতাশ করেছে সবাইকে।

এই গণহারে অকৃতকার্য হবার প্রকৃত কারণ কী তা কেউ বলতে পারছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলছে শিক্ষার্থীদের সমস্যা, কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত তা অজানাই থেকে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এমন ফলে হতাশ ছাত্র শিক্ষক সকলেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, গণহারে অকৃতকার্য হওয়া বা এমন বিপর্যয়পূর্ণ ফলের প্রকৃত কারণ আমরাও জানিনা। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের উচিত এই ব্যাপারে পরিষ্কার মতামত প্রদান করা, কেননা প্রকৃত কারণ না জানালে শিক্ষার্থীরাই সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

শিক্ষার্থীরা জানান, এই ফলের আরও একটি অন্যতম কারণ হলো ‘সিলেবাসের অসামঞ্জস্যতা’। অনেক পরীক্ষায় তাদের জানানোই হচ্ছে না কী ধরনের বা কোন আঙ্গিকে প্রশ্ন করা হবে। আবার তাদের পাঠ্যক্রমের বিষয়ের সঙ্গেও অনেক ক্ষেত্রে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

এসব সমস্যা সমাধানে কলেজ প্রশাসন কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না। তারা আবার ঢাবির ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। ঢাবি আবার কলেজ কার্যক্রমকে দায়ী করছে।

ফলের বিপর্যয় এবং চলমান বিভিন্ন সংকট নিরসনে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়ে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পাঁচ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা কলেজের ৪ শিক্ষার্থী। আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা হলেন- ১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নোমান, ১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান উদ্দিন, ১৬-১৭ সেশনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস শাহাদাত সাকিব এবং ১৭-১৮ সেশনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম।

ঢাকা কলেজ

অনশনরত শিক্ষার্থীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এর মাঝে কয়েকবার শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ।

তবে অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা তা মানতে নারাজ। যতক্ষণ পর্যন্ত ঢাবির উপাচার্য না আসবেন বা এ সকল সমস্যার সমাধান না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত এ অনশন ভাঙবেন না বলে জানান তারা।

চলমান এই সংকট নিরসনে কলেজ প্রশাসনের উদ্যোগের ব্যাপারে শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

পরবর্তীতে রাত ১১টায় ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ঘটনাস্থলে তাদের অনশন ভাঙান এবং বলেন শিক্ষা মন্ত্রী বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

অনশনে বসা শিক্ষার্থী নাজমুস শাহাদাত বলেন, শিক্ষার ন্যায্য অধিকারের জন্য পৃথিবীর কোথাও আন্দোলন হয়েছে কি না আমার জানা নেই। বাংলাদেশেই এগুলো সম্ভব। দিন গড়িয়ে রাত্রিও নেমেছে তবুও ঢাবি প্রসাশনের কোনোরূপ মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই, এর আগেও আন্দোলন হয়েছে সেই আন্দোলনেও তারা মিথ্যা আশ্বাসের মাধ্যমে থামিয়ে দিয়েছিল, এবার আর কোনো মিথ্যা আশ্বাস নয়। এই সকল দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন ভাঙব না।

আমরণ অনশন কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষা নিয়ে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হয়। আমরা পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ দেখতে চাচ্ছি। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দাবি আদায় করে আমাদের ভাইদেরকে অনশনকে সফল করতে চাই। শুধু ঢাকা কলেজ নয় আমরা চাই বাকি ছয় কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রবল দায়বদ্ধতা থেকে এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে এই আন্দোলনকে বেগবান করে তুলবে। আমাদের ভাইদের আমরণ অনশনকে সফল করতে হলে প্রয়োজনে আমরাও আমরণ অনশনে বসব।

শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো -

১. পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ত্রুটিমুক্ত ফল প্রকাশসহ একটি বর্ষের সকল বিভাগের ফল একত্রে প্রকাশ করতে হবে

২. ডিগ্রী, অনার্স, মাস্টার্স সকল বর্ষের ফলে গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রকাশসহ খাতার পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে

৩. সাত কলেজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবনের ব্যবস্থা করতে হবে

৪. প্রতিমাসে প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টে প্রতি কলেজে দুইদিন করে মোট ১৪ দিন ঢাবির শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হবে। সেটা যদি ঢাবির পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে সাত কলেজের প্রশ্ন প্রনয়ন এবং খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব অবশ্যই সাত কলেজের শিক্ষকদের দিতে হবে

৫. সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশসহ ক্রাশ প্রোগ্রামের চালু করতে হবে

সবকিছু ছাপিয়ে শিক্ষার্থীরা চাইছেন সিলেবাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পরীক্ষার পদ্ধতি এবং কী কারণে এমন ফল বিপর্যয় হচ্ছে তার যথাযথ কারণ পরিষ্কার করা এবং অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার যথাযথ মান উন্নয়।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড