সরকার আব্দুল্লাহ তুহিন, জাককানইবি প্রতিনিধি
আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই পহেলা বৈশাখ। বৈশাখের প্রথম দিনটিকে ঘিরে হালখাতা, পান্তা ইলিশে পেটপূর্তি, গান-বাদ্য আর উৎসব আমেজে মেতে ওঠা বাপদাদার সম্পত্তির মতো বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য। পুরনোকে পেছনে ফেলে নতুনকে বরণ করে নিতে বছর শেষে আবার আসছে বৈশাখ। প্রাণের এ উৎসবকে বরণে বাঙালি মেতে উঠে আনন্দোৎসবে।
প্রতিবারের ন্যায় দিনটিকে বরণ করে নিতে এবারও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দিনটিকে উদযাপনের জন্য পুরো আয়োজনের দায়িত্ব পড়ে চারুকলা বিভাগের ওপর। নানারকম ঐতিহ্যমুখী নিদর্শন গড়তে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এবারের বৈশাখের মূল প্রতিপাদ্য- ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছে বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন ধরনের প্রতিকৃতি। সঙ্গীতের মূর্ছনা এবং নানা আড্ডার মধ্য দিয়ে পুরোদমে চলছে কাজ। ক্ষণে ক্ষণে চলছে তুমুল আড্ডাও।
এবারের নতুন বছরের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে দীর্ঘ পনের দিন আগে শুরু হওয়া অক্লান্ত পরিশ্রমে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা বিভিন্ন স্ট্রাকচারগুলো। যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে। দিন-রাত নিরলস পরিশ্রমে এ কয়েকদিনে বাঁশের চটা বেঁধে-বেঁধে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তৈরি করছেন বিশাল আকৃতির পেঁচা, ঘোড়া, টেপাপুতুল, ময়ূরপঙ্খী নাও, পালকী, শখের হাঁড়ি, বিভিন্ন মুখোশ, ডালা, পাখা, পটচিত্র, কাগজে বাঘসহ দারুণ সব মোটিফের কাঠামো। এগুলোর গায়ে রঙিন কাগজ বসিয়ে এতে আনন্দের সঞ্চার করছেন শিক্ষার্থীরা।
পুরোনো ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক আবহের বাংলার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার চেষ্টা (ছবি : দৈনিক অধিকার)
প্রতিবছরের মতো এবারো মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান একটি মোটিফ থাকবে। এবারের প্রধান মোটিফ হবে ‘ময়ূরপঙ্খী নাও’। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সারা বাংলাদেশ ও বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে এবার নানান আয়োজন গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৈশাখ উদযাপন কমিটি ১৪২৬ এর সদস্য সচিব চারুকলা বিভাগের কল্যাণাংশু নাহা জানান, সকল অশুভ চিন্তার নিপাক যাক এরই অন্তঃস্থলগত মনমানসিকতাকে ধারণ করে বিবেক এবার জাগ্রত হোক প্রতিটি বাঙালির। অসাম্প্রদায়িক ও অহিংস, সহনশীল, নারীবান্ধব ও সুবিবেচক সমাজ গঠনে এটি একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়াক বিশ্বের বুকে। বাঙালি জাগুক তার পুরোনো ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক আবহের বাংলার প্রতিচ্ছবিতে। জয় হোক চিরায়ত বাঙালিয়ানার।
পহেলা বৈশাখ ১৪২৬ উদযাপন উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম দিনে চৈত্র সংক্রান্তিতে থাকছে চারুকলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপঙ্কর বৈরাগীর সার্বিক নির্দেশনায় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিনীত নৃত্যপালা। থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক মাজহরুল হোসেন তোকদারের (বাঁধন তোকদার) নির্দেশনায় শিক্ষকদের অভিনীত যাত্রাপালা ‘বাঙালি’ এবং ফানুশ উৎসব। দ্বিতীয় দিনের প্রধান আয়োজনে বৈশাখকে কেন্দ্র করে চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে বৈশাখের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপি চলবে বৈশাখী মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, গ্রামীণ বিভিন্ন খেলা, যেমন খুশি তেমন সাজো।
নানা আড্ডার মধ্য দিয়ে পুরোদমে চলছে কাজ (ছবি : দৈনিক অধিকার)
এছাড়া, ক্যাম্পাস সংলগ্ন দোকানগুলোতে স্থানীয়রা হালখাতাও খুলে থাকে। সারা দিনভর আয়োজনের মধ্যভাগের সাংস্কৃতিক আয়োজনেও থাকছে বৈচিত্রতা।
বৈশাখ উদযাপন কমিটির সাংস্কৃতিক আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সঙ্গীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিক সরকার জানান, এবার একেবারেই ভিন্নভাবে বৈশাখের আয়োজন রাখা হয়েছে সাংস্কৃতিক পর্বে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পরিবেশনা রাখা হয়েছে বৈশাখী আয়োজনে নতুনত্ব দেবার জন্য। সেজন্য চলছে নিয়মিত পরিচর্যা ও অনুশীলন। এছাড়া, অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল জাবিরের নির্দেশনায় যাত্রাপালা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’। বৈশাখ বাঙালির ঘরে ঘরে এসেছে আনন্দ উচ্ছ্বাস আর সম্ভাবনার বারতা নিয়ে। এভাবেই বাঙালির মননে লালিত হয়ে আসছে, আসবে বৈশাখ। তাইতো বাঙালি মন নেচে গেয়ে বলে ওঠে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড