• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জাবির বটতলায় হরেক পদের ভর্তার সমাহার

  আরিফুল ইসলাম আরিফ, জাবি প্রতিনিধি

২৩ মার্চ ২০১৯, ১২:০০
জাবি
হরেক রকম ভর্তার পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

‘এই যে মামা এই দিকে, ভর্তা আছে, হরেক পদের ভর্তা, ভর্তা দিয়ে মন মাতিয়ে দেব, দেব অন্যরকম স্বাদ, এরকম ভর্তা আর কোথাও পাবেন না, চলে আসুন’ দুপুর হতে না হতেই এমন হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বটতলা। হরেক রকম ভর্তার পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা।

কী নেই সেই ভর্তা উৎসবে! বাদাম ভর্তা, সরিষা ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, ডাল ভর্তা, শিম ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ভেণ্ডি ভর্তা, টমেটো ভর্তা, আলু ভর্তা, লাউশাক ভর্তা, কলা ভর্তা, কচু ভর্তা, রসুন ভর্তা, ডিম ভর্তা, মরিচ ভর্তা। এছাড়াও ইলিশ মাছের ভর্তা, শুঁটকি মাছের ভর্তা, চিংড়ি মাছের ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা, রুই মাছের ভর্তা, চিকেন ভর্তা, লইটা শুঁটকিসহ আরও অনেক ধরনের ভর্তা খেতে পারবেন একদম টাটকা। ক্যাম্পাসের বটতলায় খুব সস্তায় পাওয়া যায় এসব ভর্তা। প্রতিটি ভর্তার দাম মাত্র ৫ টাকা।

জাবি

এসব ভর্তা যেমন সুস্বাদু তেমনি এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগুণও

বাংলা খাবারের নাম আসলেই প্রথমেই আসে ভর্তার কথা। ঝাল ভর্তা দিয়ে আহার মনে এনে দেয় অতুলনীয় তৃপ্তি। ভর্তা খেতে পছন্দ করে না এমন হয়ত কাউকে পাওয়া যাবে না। বরং ভর্তা খাবারে বেশ রুচি আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অনেকের দৈনিক খাবারে ভর্তা থাকা চাই।

বটতলায় প্রায় ২৫-৩০টি খাবারের দোকান রয়েছে যার সবগুলোতে পাওয়া যায় এসব ভর্তা। এখানকার ভর্তা যেমন সুস্বাদু তেমনি এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগুণও। ৫ টাকা করে দাম দিয়ে আপনি অত্যন্ত ৩০-৩৩ প্রকারের ভর্তা খেতে পারবেন। জাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবেলা ভাতের পাতে ভর্তা না নিলে মনে হয় ভাত হজম হয় না।

জাবি

ঝাল ভর্তা দিয়ে আহার মনে এনে দেয় অতুলনীয় তৃপ্তি

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ভিড়। দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে আসেন ভর্তার স্বাদ চেখে দেখতে। ভর্তার পাশাপাশি পাওয়া যায় বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি, খাসির মাংস ও মগজ, গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, মুরগির মাংস, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, পুঁটি মাছ, চাপিলা মাছ, শিং মাছ, বেলে মাছ, কাতলা মাছ, পাঙ্গাস মাছ, কালি বাউস মাছ, গজার মাছ ও তেলাপিয়া মাছ।

বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বল্প মূল্যে খাবারের একমাত্র জায়গা হচ্ছে হলের ক্যান্টিন অথবা ডাইনিং, কিন্তু ব্যতিক্রম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে হলের ক্যান্টিন ছাড়াও বটতলাতে স্বল্প মূল্যে হরেক রকমের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। ছুটির দিনগুলোতে ক্যাম্পাসের বটতলায় খাবারের দোকানে একটু বেশি করে আয়োজন করা হয় হরেক রকমের ভর্তার। কেননা ছুটির দিনগুলোতে ক্যাম্পাসে ভিড় নামে অতিথিদের।

জাবি

ভর্তার পাশাপাশি পাওয়া যায় নানা প্রজাতির মাছের চড়চড়ি

প্রায় ৭০০ একরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা এই সবুজ ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়তই নামে ভ্রমণ ও সৌন্দর্য পিপাসুদের ঢল। স্থানীয়রা সময় পেলেই পরিবারসহ চলে আসেন ঘুরতে। এমনকি ঢাকার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সফরটাও করে নেয় এই ক্যাম্পাসে। আর ঘুরতে আসা এসব মানুষের জন্য রয়েছে খাবারের সুব্যবস্থা।

জাবিতে বেড়াতে এসেছিলেন একটি প্রাইভেট কোম্পানির কর্মকতা জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘এর আগে কোথাও এরকম ভর্তার স্বাদ পাইনি। এমন কী আমার গ্রামের বাড়ি কিংবা আমার কর্মস্থল গাজীপুরেও এরকম সুস্বাদু ভর্তা পাইনি। তাই ছুটির দিনে ভর্তা খাওয়ার লোভ আর সামলাতে না পেরে চলে এসেছি।’

ক্যাম্পাসে ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মরিয়ম লিজা বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার এসব ভর্তা আমি খুব পছন্দ করি। অল্প দামে এত সুস্বাদু ভর্তা পাওয়া দুষ্কর। মাত্র ৫ টাকার সস্তা দামে এতসব ভর্তা পাওয়া যায় এখানে ভাবতে অবাক লাগে। যখনই আমি সময় পাই বন্ধুদের নিয়ে জাবি ক্যাম্পাসে ছুটে আসি।’

জাবি

প্রতিটি ভর্তার দাম মাত্র ৫ টাকা

সাভার থেকে আসা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা তাওফিকুর রহমান বলেন, ‘সপ্তাহে বেশ কয়েকবার বটতলায় এসে ভর্তা কিনে নিয়ে যাই। আমার পরিবারের সদস্যরা এসব ভর্তা অনেক পছন্দ করে।’

এ সম্পর্কে বটতলার দোকানদার মো. বাবুল মিয়া বলেন, ‘আমরা সবসময় যত্ন সহকারে এসব ভর্তা তৈরি করি। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীসহ ঘুরতে আসা সবাই ভর্তা খেতে চায়। ভর্তাতে লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা না করে কাস্টমারের কথাই বেশি চিন্তা করি।’

তাহলে আর দেরি কেন, সময় করে একদিন আপনিও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন ভর্তার রাজ্য থেকে!

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড