• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ৪৩ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

  মুরতুজা হাসান, ইবি প্রতিনিধি

২২ নভেম্বর ২০২১, ০৯:০৮
ইবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মূল ফটক (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আজ (২২ নভেম্বর) ৪৩ বছরে পা রাখছে। স্বাধীনতাত্তোর দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি। এই দীর্ঘ পথ চলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি।

১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়টি'র যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গাজীপুর বোর্ড বাজারে এবং ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অপর এক আদেশে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে দুটি অনুষদের চারটি বিভাগে ৩শ ছাত্রের ভর্তির মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যাকাডেমিক যাত্রা শুরু হয়।

বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বর্তমানে ১৭৫ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮টি অনুষদের ৩৪টি বিভাগে ১৫ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র ১০ হাজার ২৯১ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৯৩ জন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩৯০ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৪৬৮ জন কর্মকর্তা, ১৫২ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৭১ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৫১৪ জনকে পিএইচডি এবং ৬৯৬ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯০ জন পিএইচডি এবং ২১৯ জন এমফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। পাশাপাশি ১টি ইনস্টিটিউট ও ১টি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। দীর্ঘ পথচলায় এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট দূরীকরণে হলসংখ্যা আটটিতে উন্নীত করা হলেও এর মধ্যে আবাসন সুবিধা পায় মাত্র ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে পাঁচটি ছাত্র হল এবং তিনটি ছাত্রী হল।

এ দিকে, বেড়েছে কাঠামোগত উন্নয়ন। ৫ শ ৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগাপ্রকল্পের অধীনে ক্যাম্পাসে ৯টি ১০তলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, চুক্তিপত্রও সম্পন্ন হয়েছে। কিছু কিছু ভবনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গত ১৩ অক্টোবর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১০ তলা ১০০০ সিট বিশিষ্ট দুটি আবাসিক হলের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে। পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন, চিকিৎসা কেন্দ্র, ২য় ডরমেটরি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মীর মশাররফ হোসেন অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রভোস্ট কোয়ার্টার, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১০তলা আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে।

এছাড়া করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ থাকা হলসমূহের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার অফিসের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি হল ও প্রশাসন ভবন সংস্কারের জন্য প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিম্নমানের পণ্যসামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারা কাজ করছেন ঠিকাদাররা, এমন অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রশাসনের সূক্ষ্ম নজরদারির কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষকেরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজে নেই কোনো অগ্রগতি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি গতানুগতিক সেবা দানে পরিবর্তন এনে আধুনিকায়ন করার কথা জানান শিক্ষার্থীরা।

বিগত প্রশাসনের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনে ইবি লেক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন তৈরি করা হলেও, বর্তমানে পরিচর্চার অভাবে এগুলোর সৌন্দর্য প্রায় বিলুপ্তির পথে।

বাঙালি জাতির রক্তাক্ত ইতিহাসের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে চালু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, একুশে কর্ণার এবং বঙ্গবন্ধু কর্ণার। এছাড়া জীববৈচিত্র্যের অনিন্দ্য সুন্দর অনেক স্থাপনা রয়েছে এখানে। এর মধ্যে স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, মুক্ত বাংলা অন্যতম। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখেই স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিনন্দন প্রতিকৃতি ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ মুর‌্যাল। মুজিবীয় চেতনায় স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফটকের সামনে ‘মুক্তির আহ্বান’ ও ‘শ্বাশত’ মুজিব’ এই ম্যুরাল দুটি স্থাপন করা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে শিক্ষা, সংস্কৃতির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সারাদেশে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ফলে এই ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ও প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি চর্চা দিনদিন বেগবান হচ্ছে। পাশাপাশি মুক্ত চিন্তার বিকাশে ঘটাতে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদেরও সাংবাদিকতার সুযোগ করে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতায় বিশ্বাসী সাংবাদিক সংগঠন ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি।’ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গত চার দশকের ইতিহাসে রিপোর্টার্স ইউনিটিই সর্বপ্রথম ছাত্রীদের জন্যও সাংবাদিকতার দ্বার উন্মোচন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে বৃহদাকার জিমনেশিয়াম ও খেলাধুলার জন্য উপযোগী মাঠ। এরই মধ্যে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বাস্কেটবল, হ্যান্ডবলে বারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শিক্ষার্থীদের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার কারণে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও আস্তে আস্তে সেটা কাটিয়ে উঠছি। শিক্ষা গবেষণায় মনোনিবেশ করব। এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এবং প্রধান কাজ। দ্বিতীয়ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি সহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি।

ওডি/নিমি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড