• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বেড়াতে এসে মারধরের শিকার ঢাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী

  ঢাবি প্রতিনিধি

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:০৮
ঢাবি
মারধরের শিকার হওয়া শিক্ষার্থী (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি কামাল উদ্দিন ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে আসা দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কয়েকজন দর্শনার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে সলিমুল্লাহ মুসলিম আবাসিক হল সংলগ্ন ফুলার রোডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা হলেন- নুজহাত ফারহানা ও রানা নাসের। ফারহানা ঢাবির ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী। এছাড়া রানা নাসের ঢাবির থিয়েটার ও পারফরমেন্স বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

নুজহাত চায়নায় পিএইচডি অধ্যয়নরত। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কিছুদিন আগে দেশে ফেরেন তিনি। চায়না যাওয়ার সহজ প্রক্রিয়া জানাতে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঢাবিতে আসেন তিনি।

ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পাশে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে ফারহানা ও বাপ্পি কথা বলছিলেন। কিছুটা দূরেই নাসের মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। বাপ্পি রানা নাসিরের ছোট ভাই।

পরবর্তী সময়ে এসএম হলের ১ম বর্ষের কিছু শিক্ষার্থী এসে তাদের সঙ্গে তর্কে জড়ায়। এ ঘটনায় ফারহানা ও বাপ্পি প্রতিবাদ করলে তাদেরকে ওই শিক্ষার্থীরা মারধর করে।

এ ঘটনায় রানা চিৎকার করে দৌড়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় র‍্যাগিংয়ের শিকার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে আসলে আক্রমণকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ‘শেখ পরাগ’ নামের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে পরাগকে মারধর করে উপস্থিত জনতা। মারধরের ঘটনার ভিডিও করেন ফারহানা।

আরও পড়ুন : বালির ট্রাকে চাঁদাবাজি, আটক ঢাবির ২ শিক্ষার্থী

এ ঘটনার পর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) এমএম কামাল উদ্দিন ৬০-৭০ জন ছাত্রলীগ কর্মী সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসে ফারহানাকে মারধরের ঘটনার ভিডিও ডিলিট করতে বলেন। এ ঘটনায় ফারহানা অসম্মতি জানালে তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয় দেখানো হয়।

এ সময় ফারহানা ও রানা বারবার নিজেদের ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী বলে দাবি করলেও কামাল উদ্দিনের অনুসারীরা বিভিন্নভাবে তাদেরকে হেনস্থা করেন। পরে রানাকে এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়। এ ঘটনার পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রানা নাসির জানান, ‘কর্মস্থলে আমার বিদ্যাপীঠ নিয়ে গর্ব করি। ফুলার রোডে ছিনতাইকারী দৌরাত্ম্যের কথা প্রায়ই শুনতাম, তবে বিশ্বাস করতাম না। নিজে এই পরিস্থিতিতে না পড়লে অন্ধ বিশ্বাস নিয়েই বহুকাল বেঁচে থাকতাম।’

নুজহাত ফারহানা বলেন, ‘আমি চায়নাতে পড়াশোনা করছি। কিছুদিনের ছুটিতে দেশে এসেছি। রানা নাসের কাছের ছোট ভাই। তার ছোট ভাই শারীরিকভাবে অসুস্থ। সে চায়নাতে স্কলারশিপ নিতে চায়। এ বিষয়ে আমরা কথা বলছিলাম। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে বসে থাকাদের হ্যারেজমেন্ট করছিল। তারা বাপ্পিকে জিজ্ঞেস করে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কি না। বাপ্পি কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করে। এমন সময় কিছু দূরে থাকা রানা নাসের দৌড়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, ‘রানা নাসের দৌড়ে আসায় শিক্ষার্থীরা দৌড়ে হলে চলে যায়। দৌড়ে পালানোর সময় একজন শিক্ষার্থীর মোবাইল ঘটনাস্থলে পড়ে যায়। পরে ওই শিক্ষার্থী (পরাগ) মোবাইল ফোন নিতে আসলে রানা তাকে আটক করে এবং বাপ্পিকে কেন মেরেছে তা জানতে চায়। এ ঘটনায় একজন লোক ওই শিক্ষার্থীকে মারধর শুরু করলে তা আমি ফোনে ভিডিও করি।’

এ ব্যাপারে শেখ পরাগের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি দেখা করেনি। তিনি জানান, ‘হলের সিনিয়ররা এই বিষয়ে কথা বলতে মানা করেছেন। হলের ভিপি-জিএস আমাকে হল থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন এবং কোনো সাংবাদিককেও কিছু বলতে নিষেধ করেছেন। তাই আমি কিছু বলতে পারবো না।’

এছাড়া হলের বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে বারবার চেষ্টা করলে তারা কেউ কথা বলেনি এবং এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন।

পরাগ জানান, ‘তিনি বন্ধুদের সঙ্গে সন্ধ্যায় বের হয়েছিলেন। তবে তিনি মারধরের ঘটনায় ছিলেন না। বরং বন্ধুরা পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে একজন বহিরাগত মারধর করে তার মোবাইল ছিনতাই করে। এতে ভিপি ঘটনাস্থলে আসেন এবং মোবাইল উদ্ধার করেন।’

এই বিষয়ে রানা নাসির জানান, ‘ঘটনাটি সত্য। ওই শিক্ষার্থী মারধর না করলেও সে জানে কারা মারধর করেছে। তাই বিস্তারিত জানাতে তাকে বারবার অনুরোধ করা হয়। বাকিদের পরিচয় না জানালে আরেক ভুক্তভোগী তাকে দুই-তিনটা থাপ্পড় দেয় এবং পরাগের চোখে থাকা চশমা ভেঙে যায়। পরে আমি মারধরে বাঁধা দেই।’ তবে মোবাইল ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান নাসের।

আরও পড়ুন : বালির ট্রাকে চাঁদাবাজি, আটক ঢাবির ২ শিক্ষার্থী

এই বিষয়ে সংসদের ভিপি কামাল উদ্দিনকে কল করা হলেও তিনি অধিকার নিউজের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে হল সংসদের সদস্য শামসুলের মাধ্যমে জানা যায়, ‘সন্ধ্যায় হল সংসদের সবাই এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তারা আলোচনা করছেন।’

তিনি আরও জানান, ‘এটা নতুন কিছু না। ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এই সম্পর্কে বিস্তারিত সন্ধ্যায় জানানো হবে। আমরা মানববন্ধন করবো।’

এ ব্যাপারে ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘ছাত্রলীগের সাহস দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের কাছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় বন্দি। তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনিরাপদ ক্যাম্পাসে রূপ নিয়েছে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী। ছাত্রলীগ কোনো অপরাধ করলে তারা তদন্ত কমিটি বানিয়ে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা জানায়, ‘খবর পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে যায়। পরে আমাদের উপরেও হামলা করা হয়। এতে আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের ৪ সদস্য আহত হয়।’

আরও পড়ুন : বালির ট্রাকে চাঁদাবাজি, আটক ঢাবির ২ শিক্ষার্থী

ঢাবি প্রক্টর গোলাম রব্বানী জানায়, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। আমাদের ৪ জন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে দেখছি।’

ওডি/এমআরকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড