• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন

প্রগতিশীলকে হারাতে জামায়াতপন্থিকে ভোট!

  ইবি প্রতিনিধি

১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:২২
ইবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি : সংগৃহীত)

গত রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকবৃন্দ ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকরা ২টি করে ৪টি প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নির্বাচনের ফলে প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম সমর্থিত প্যানেল সভাপতি পদসহ ১০টি এবং বিএনপি জামাত সমর্থিত শিক্ষকরা সাধারণ সম্পাদক পদসহ ৫টি পদে বিজয়ী হয়। তবে শাপলা ফোরামের বিদ্রোহী প্যানেল থেকে কেউ জয় পাননি।

এ দিকে শাপলা ফোরাম সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে হারাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিদ্রোহী গ্রুপের শিক্ষকরা জামায়াত-বিএনপি পন্থিদের ভোট দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, শাপলা ফোরামের বিদ্রোহী প্যানেলে নিশ্চিত পরাজয় জেনে মূল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদককে হারাতে জামায়াত-বিএনপি পন্থি প্রার্থীকে ভোট দেয়। যার জন্য জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজ ১৪৬ ভোট পান। অন্যদিকে শাপলা ফোরামের বিদ্রোহী প্যানেল সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক মাত্র ৪১ ভোট পান। অন্যদিকে শাপলা ফোরামের মূল প্যানেল সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান পেয়েছেন ১৪১ ভোট।

নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোটের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২ প্রার্থী ছাড়া বাকিদের প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে নিজ প্যানেলের সামঞ্জস্য রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর সামঞ্জস্যপূর্ণ সর্বোচ্চ ভোট ১২০ হলেও জামায়াত-বিএনপিপন্থি সমর্থক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. মোস্তাফিজ অস্বাভাবিকভাবে ১৪৬ ভোট পেয়েছেন।

অন্যদিকে শাপলা ফোরামের বিদ্রোহী প্যানেলের সামঞ্জস্যপূর্ণ সর্বনিম্ন ভোট ৭৫ হলেও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. আনোয়ারুল হক অস্বাভাবিকভাবে মাত্র ৪১ ভোট পেয়েছেন। অপর দিকে শাপলা ফোরাম প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অধ্যাপক মাহবুবর রহমান পেয়েছেন ১৪১ ভোট। এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভোট সংখ্যায় প্রগতিশীল শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

শাপলা ফোরামের শিক্ষকবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, ‘যদি শাপলা ফোরামের বিদ্রোহী প্যানেলের শিক্ষকরা নিজ প্যানেল বাদ দিয়ে জামায়াত বিএনপিপন্থি সাধারণ সম্পাদককে ভোট না দিতেন তাহলে কখনোই ড. মোস্তাফিজ এত বেশি ভোট পেতেন না এবং ড. আনোয়ারুল হকের এত কম ভোট হতো না।’

শাপলা ফোরামের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, ব্যক্তি হিংসায় পর্যবসিত হয়ে, শাপলা ফোরামের বিদ্রোহী প্যানেলের শিক্ষকরা জামায়াত-বিএনপিপন্থি শিক্ষক প্যানেলের সাধারণ সম্পাদককে ভোট দিয়েছেন। তারা দাবি করেন যে, বিদ্রোহী প্যানেলের শিক্ষকরা জামায়াত-বিএনপি পন্থিদের ভোট না দিলে, আমাদের নিরঙ্কুশ বিজয় সুনিশ্চিত ছিল। বিদ্রোহী প্যানেল নিজেদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে এই গর্হিত কাজটি করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাপলা ফোরামের কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, শুধু শাপলা ফোরামের প্যানেলের ভরাডুবি নিশ্চিত করতে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এসে সাবেক উপ-উপাচার্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত এক সিনিয়র শিক্ষকের গ্রুপের শিক্ষকরা ড. আরেফিন-আনোয়ারুল প্যানেল দেয়। চূড়ান্ত ফলে সেটিই প্রতীয়মান হয়েছে।

তারা দাবি করেন যে, বিদ্রোহী গ্রুপের শিক্ষকগণ সরাসরি জামায়াত–বিএনপি সমর্থিত ড. মোস্তাফিজকে ভোট দিয়ে শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবর রহমানকে ৫ ভোটে পরাজিত করেছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এ বছর মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও প্রগতিশীলতায় বিশ্বাসী আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দুইটি প্যানেলের মধ্যে শাপলা ফোরাম সমর্থিত প্যানেলে সভাপতি পদে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

অপর বিদ্রোহী প্যানেলে সভাপতি পদে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরেফিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এছাড়াও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত যৌথ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন এবং আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

বিএনপি সমর্থিত একটি স্বতন্ত্র প্যানেলে সভাপতি পদে লোক-প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শরফরাজ নওয়াজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এ বিষয়ে শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন- ‘যারা আদর্শের কথা বলে আর জামায়াতকে ভোট দিয়ে প্রগতিশীল ফোরামের পরাজয় নিশ্চিত করে তাদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে আমার লজ্জা হয়।’

একাধিক সিনিয়র শিক্ষক সরাসরি মন্তব্য করেন- ‘আদর্শ নয় ব্যক্তি স্বার্থই তাদের কাছে বড়। এটা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি। ওরা ৬ বছর আমাদের এই সংগঠনটিকে জিম্মি করে রেখেছিল। এসব ভাবলে কষ্ট হয়।’

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. কামাল উদ্দীন বলেন, ‘দুইটি গ্রুপিংয়ের কারণে, বিভাজনের কারণে এমন পরাজয় হয়েছে। গ্রুপিং দূর করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিল। যখন গ্রুপ হয়েছে তখন আমি কোনো গ্রুপের হয়ে ক্যানভাস করিনি। আদর্শিক জায়গায় নিজেদের মাঝে রেষারেষি পছন্দ করি না।

শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘প্রগতিশীল মানুষজন যদি ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে সংগঠনকে বিতর্কের জায়গায় নিয়ে যায়, সভাপতি হিসেবে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি এখনো চাই শাপলাতে আমরা সবাই মিলেই পথ চলব। এখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, প্রগতিশীলতার চেতনা সমুন্নত থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এখনো এটি অটুট আছে। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা মনোমালিন্য হতেই পারে। আমি মনে করি না এটা বড় ধরনের কোনো সমস্যা ফোরামের জন্য। কারও কোনো মনঃক্ষুণ্ন বা কারও কোনো কষ্ট থাকলে সেটা ফোরামের ভেতর আলোচনা করে সমাধান করা সম্ভব আমরা একসঙ্গে আছি একসঙ্গেই ভবিষ্যতে থাকব।’

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড